ডোনেশন করুন
ধন্যবাদ!
আমরা আপনার উদার দানের প্রশংসা করি। আপনার সমর্থন আমাদের উৎসাহিত করেছে!
ডোনেশন করুন
ধন্যবাদ!
আমরা আপনার উদার দানের প্রশংসা করি। আপনার সমর্থন আমাদের উৎসাহিত করেছে!
ভূমিকাঃ চলুন অস্থিতন্ত্রের গঠন সম্পর্কে জেনে আসি। মানব দেহের জটিল কাঠামো নির্মিত হয়েছে অস্থিতন্ত্র বা কঙ্কাল দ্বারা। অস্থি যেমন আমাদের দেহের আকার প্রদান করে তেমনি এটি আমাদের বিভিন্ন শারীরিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে সুরক্ষাও দেয়। অস্থি আমাদেরকে চলাফেরায় সহায়তা করে। সন্ধি এবং লিগামেন্টস গুলো অস্থি তন্ত্রের অন্তর্ভুক্ত। আজকের প্রবন্ধে আমরা অস্তিতন্ত্রের গঠন ও কার্যকারিতা নিয়ে আলোচনা করব। তার সাথে সাথে অস্থি বিষয়ক আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের আলোচনা এবং অস্থির বিভিন্ন রোগে হোমিওপ্যাথিক ঔষধের ব্যবহার সম্বন্ধে আলোচনা করব।
একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীরে ২০৬ খানা হাড় থাকে। এই হাড়গুলোকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। নিচে হাড়গুলোর নাম এবং সংখ্যা দেওয়া হলোঃ

অস্থিতন্ত্রের গঠনঃ
নিচে অস্থি তন্ত্রের গঠন উল্লেখ করা হলো।
মাথার খুলি (Skull):
করোটি (Cranium): ৮টি।
মুখমণ্ডল (Facial bones): ১৪টি।
কানের হাড় (Ossicles): ৬টি।
হাইওয়েড হাড় (Hyoid bone): ১টি।
মেরুদণ্ড (Vertebral column):
সার্ভিকাল কশেরুকা (Cervical vertebrae): ৭টি।
থোরাসিক কশেরুকা (Thoracic vertebrae): ১২টি।
লাম্বার কশেরুকা (Lumbar vertebrae): ৫টি।
স্যাক্রাম (Sacrum): ১টি (৫টি ফিউজড হাড়)।
ককিক্স (Coccyx): ১টি (৪টি ফিউজড হাড়)।
বুকের খাঁচা (Thoracic cage):
পাঁজর (Ribs): ২৪টি।
স্টার্নাম (Sternum): ১টি।
উর্ধ্ব বাহু (Upper limbs):
হিউমেরাস (Humerus): ২টি।
রেডিয়াস (Radius): ২টি।
আলনা (Ulna): ২টি।
কারপাল (Carpals): ১৬টি।
মেটাকারপাল (Metacarpals): ১০টি।
ফ্যালানজেস (Phalanges): ২৮টি।
নিম্ন বাহু (Lower limbs):
ফিমার (Femur): ২টি।
টিবিয়া (Tibia): ২টি।
ফিবুলা (Fibula): ২টি।
প্যাটেলা (Patella): ২টি।
টার্সাল (Tarsals): ১৪টি।
মেটাটার্সাল (Metatarsals): ১০টি।
ফ্যালানজেস (Phalanges): ২৮টি।
আমাদের অস্থিতন্ত্রের নির্মাণ হয়েছে এই সকল হাড়গুলোর সমন্বয়ে।
অস্থির কার্যকারিতাঃ
অস্থি বা হাড় যে শুধু শরীরের কাঠামো গঠন করে তা নয় এটি আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করে থাকে। যেমন-
১) দেহের আকৃতি প্রদানের সাথে সাথে আমাদের দেহের পেশী, টেন্ডন এবং লিগামেন্টস এর সাথে যুক্ত হয়ে শরীরের চলাচলে সাহায্য করে। পেশী গুলোর সংকোচন ও সঞ্চালনে ভূমিকা রাখে।
২) অস্থি আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অনেক অঙ্গকে রক্ষা করে। যেমন মস্তিষ্কের খুলি মস্তিষ্ককে রক্ষা করে। বক্ষপিঞ্জরের হাড় বুকের নিচে থাকা বিভিন্ন অঙ্গ ফুসফুস, হার্ট, লিভার ইত্যাদি কে রক্ষণাবেক্ষণ করে। মেরুদন্ডের হাড় আমাদের স্পাইনাল কর্ড কে বা সুষুম্নাকাণ্ড সুরক্ষা দেয়।
৩) অস্থিমজ্জা বা Bone marrow থেকে WBC (শ্বেত রক্তকণিকা), RBC (লোহিত রক্ত কণিকা), এবং Platelets (অনুচক্রিকা) এই রক্ত কণিকাগুলো উৎপাদিত হয়।
৪) শরীরে খনিজ লবণের (ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ইত্যাদি) ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে অস্থি। এই সকল খনিজ লবণ গুলোর ভান্ডার হিসেবেও কাজ করে অস্থি।
৫) রক্তে pH এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে অস্থি। রক্ত থেকে ক্যালসিয়াম ও ফসফেটকে মুক্ত করে রক্তের অম্লতা কমাতে সাহায্য করে অস্থি।
৬) বিভিন্ন হরমোনের নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে থাকে অস্থি। যেমন হাড়ের থেকে নিসৃত ‘অস্টিওক্যালসিন’ নামক হরমোন রক্তের শর্করাকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে এবং দেহে শক্তি উৎপাদনে ভূমিকা রাখে। অস্থিমজ্জায় চর্বি সঞ্চিত আকারে থাকে ফলে তা শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে।
অস্থির স্বাস্থ্য রক্ষায় প্রয়োজনীয় উপাদানঃ
ক্যালসিয়ামঃ ক্যালসিয়াম, অস্থি বা হাড় গঠনের প্রধান উপাদান। ক্যালসিয়াম হাড়কের মজবুত করে।
ভিটামিন ডিঃ গ্রহণ করা ক্যালসিয়ামকে শোষণ (Absorbed) করে ব্যবহার উপযোগী করতে সহায়তা করে ভিটামিন ডি। সূর্যের আলোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।
ফসফরাসঃ হাড়ের গঠনে সাহায্য করে থাকে ফসফরাস।
শরীর চর্চাঃ হাড়ের সুস্থতার উপযোগী শরীরচর্চা গুলো হাড়কে মজবুত করে ও সুস্থ রাখে। ভারত্তোলন, হাটা, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা ইত্যাদি সাধারণ শরীরচর্চা গুলো হাড়কে সুগঠিত করতে সহায়তা করে। হাড়ের ক্ষয় ও নানাবিধ রোগ থেকে হাড়কে রক্ষা করে।
হাড়ের প্রধান সমস্যা গুলোঃ
সচরাচর হাড়ের যে সমস্যাগুলো দেখা যায় তা হলঃ
অস্টিওপোরোসিসঃ হাড়ের ঘনত্ব কমে যায় এবং হাড় দুর্বল হয়ে যায়। এইরকম পরিস্থিতিতে সহজেই হাড় ভেঙে যেতে পারে। এটি ধীরে ধীরে প্রকাশ পায়। অর্থাৎ রোগ লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার বহু পূর্ব থেকেই ক্রমাগত হাড় দুর্বল হতে থাকে।
অস্ট্রিওআর্থ্রাইটিসঃ হাড়ের সন্ধিগুলোর(Joints) কার্টিলেজ এর ক্ষয় থেকে অস্ট্রিওআর্থ্রাইটিস ডেভেলপ করে। এটি সাধারণ প্রকৃতির বাত রোগ বিশেষ। বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে সাধারণত অস্ট্রিও আর্থ্রাইটিস হতে দেখা যায়। হাড়ের সাথে হাড়ের ঘর্ষণের ফলে কার্টিলেজের ক্ষয় হয়ে থাকে। ফলে রোগাক্রান্ত সন্ধিগুলোতে বেদনা, আড়ষ্ট ভাব, স্ফীতি এই সকল কষ্টকর রোগ লক্ষণ দেখা দেয়।
এক্সোসটোসিসঃ এটি একপ্রকার হাড়ের টিউমার বা হাড়ের বৃদ্ধি। হাড়ের কোন স্থান অতিরিক্ত বৃদ্ধি জনিত কারণে ফুলে ওঠে। এই টিউমার গুলো সাধারণত প্রচন্ড শক্ত হয়। আঘাত জনিত কারণ বা অন্যান্য যেকোন কারণ থেকে এই Exostosis এর সমস্যা হতে পারে।
ফ্রাকচারঃ যেকোনো কারণে হাড় ভেঙে গেলে বা চটে গেলে তাকে ফ্র্যাকচার বলে।
হাড়ের সমস্যায় হোমিওপ্যাথিক ঔষধঃ
হাড়ের যে কোন অসুস্থতায় হোমিওপ্যাথিক সুন্দর চিকিৎসা রয়েছে। বিশেষ কিছু সাধারণ লক্ষণে কিছু হোমিওপ্যাথিক ঔষধের নাম উল্লেখ করছি এখানে।
হাড়ের আঘাতঃ যেকোনো প্রকার হাড়ের আঘাতে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ খুব সুন্দর কাজ করে। সাধারণত আর্নিকা, রাসটক্স, সিম্ফাইটাম, রুটা(হাড়ের আবরণী পেরিয়স্টিয়ামে আঘাত), লিডাম হাইপেরিকাম এই সকল ঔষধ পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবহার করতে হয়। আঘাতের কারণে প্রচুর রক্তপাত ঘটলে প্রথমে চায়না দিয়ে তারপর আর্নিকা বা অন্য ঔষধ দিতে হবে।
অস্টিওপোরোসিসঃ ক্যাল্কেরিয়া কার্ব, সিম্ফাইটাম, ফসফরাস ইত্যাদি।
অস্টিও আর্থ্রাইটিসঃ রাসটক্স, ব্রায়োনিয়া, আর্নিকা মেডোরিণাম, কষ্টিকাম, রুটা ইত্যাদি।
এক্সোসটোসিসঃ ক্যালকেরিয়া ফ্লোর, রুটা, হেকলা লাভা, সিম্ফাইটাম, কোনিয়াম ইত্যাদি।
উপসংহারঃ সুস্থ এবং স্বাভাবিক জীবন যাপনে অস্থি তন্ত্রের ভূমিকা অপরিসীম। সুষম খাবার, নিয়মিত শরীর চর্চা এবং সঠিক জীবন যাপন পদ্ধতি অনুসরণ করে আমরা অস্তিতন্ত্রের স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে পারি। তার ফলে আমরা হাড়ের বিভিন্ন রোগ থেকে বাঁচতে পারি।
আরো পড়ুনঃ অস্থিক্ষয় এর ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথি
ডা. দীপংকর মন্ডল
রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথ
২৫.০২.২০২৫
এই লেখাটি আপনার উপকারে এসেছে কি? আরো নতুন লেখা তৈরির জন্য আর্থিকভাবে অবদান রাখতে পারেন। যেকোন পরিমাণ আর্থিক কন্ট্রিবিউশন করতে নীচের ডোনেট বাটন ব্যাবহার করুন।