ডোনেশন করুন
ধন্যবাদ!
আমরা আপনার উদার দানের প্রশংসা করি। আপনার সমর্থন আমাদের উৎসাহিত করেছে!
ভূমিকাঃ আজকের আলোচনাতে আমি অ্যালকালয়েড কি, অ্যালকালয়েড নামকরণের ইতিহাস, অ্যালকালয়েড এর প্রকারভেদ, অ্যালকালয়েড এর উৎস, চিকিৎসা ক্ষেত্রে অ্যালকালয়েড এর ব্যবহার ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করব। চলুন তবে আলোচনার মূল অংশে।
অ্যালকালয়েড কি?
অ্যালকালয়েড(Alkaloids) এটিকে বাংলায় বলা হয় উপক্ষার। এটি এক ধরনের জৈব যৌগ যা ক্ষার ধর্মীয় নাইট্রোজেন অনুকে ধারণ করে থাকে। এই জৈব যৌগটি প্রাকৃতিকভাবেই উৎপন্ন হয়ে থাকে। সাধারণত উদ্ভিদ দেহে বা উদ্ভিদের দেহ, কান্ড, বাকল, বীজ, পাতা শিকড় ইত্যাদি মাধ্যমে এই অ্যালকালয়েড পাওয়া যায়। এলকালয়েড সাধারণত জলে দ্রবণীয় হয় না। তবে অ্যালকোহলের সঙ্গে এটি খুব সুন্দর ভাবে মিশে যেতে পারে। এই কারণে Strychnine tree বা কচিলা বীজ থেকে অ্যালকোহল সহযোগে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ নাক্স ভমিকা এর মাদার টিংচার প্রস্তুত করা হয়ে থাকে। এবং তা চিকিৎসার কাজে বহুল ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
এই অ্যালকালয়েড বা উপক্ষার দীর্ঘদিন যাবৎ মানব সমাজে চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে অনেক অ্যালকালয়েড ভয়ংকর রকমের বিষাক্ত হয়ে থাকে। আদিম যুগে (Aconitine) একনাইটিন এবং টুবোকুরারিন নামক এলকালয়েড তীরের ফলায় মিশিয়ে হিংস্র বণ্যপ্রাণী শিকার করা হতো। অ্যালকালয়েড এর বিষক্রিয়ায় অনেক সময় ভয়ঙ্কর রকমের বিস্মৃতি এসে থাকে।
কিছু অ্যালকালয়েড পরজীবী ছত্রাক এর আক্রমণ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়। যেমন টিউলিপ উদ্ভিদের লিরিওডেনিন(Liriodenine) এর ব্যবহার করে ছত্রাকের আক্রমণ প্রতিরোধ করা গেছে। এছাড়াও কিছু উপক্ষার উদ্দীপক, রেচক, বেদনাশক, কফ প্রশমনকারী ও টিউমার প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রাখে।
অ্যালকালয়েড এর ইতিহাসঃ
জার্মান কেমিস্ট ফ্রেডরিক সার্টার্নার ১৮০৪ সালে সর্বপ্রথম ওপিয়াম থেকে মরফিন পৃথক করেন। এই মরফিনই হলো পৃথিবীর সর্বপ্রথম পৃথকীকৃত অ্যালকালয়েড।
অ্যালকালয়েড নামকরণের ইতিহাসঃ
‘Alkoli’ শব্দটি ল্যাটিন ভাষা থেকে এসেছে এবং এর অর্থ হল ‘ক্ষার’। এবং গ্রীক ‘Like’ শব্দ দ্বারা সাদৃশ্য কোন কিছুর মতো একটাকে বোঝায়। তাই অ্যালকালয়েড বলতে সাধারণত ক্ষার সদৃশ্য এরূপ পদার্থ কে বোঝায়। জার্মানি দেশের একজন রসায়নবিদ যার নাম কার্ল ফ্রেডরিক উইলহেম এই Alkaloids(উপক্ষার) শব্দটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন। অ্যালকালয়েড নামকরণের যদিও সুনির্দিষ্ট কোন বিষয়ে নিয়ম নেই তবে প্রতিটা এলকালয়েড এর নামের শেষের তিনটি অক্ষর যথাক্রমে ‘ine’ অবশ্যই থাকবে। উদাহরণ হিসেবে দেখানো যায় মরফিন(Morphin), কুইনাইন(Quinine), ক্যাফেইন(Caffein), নিকোটিন (Nicotine) ইত্যাদি।
অ্যালকালয়েড এর প্রকারভেদঃ
অ্যালকালয়েডের অনেকগুলো প্রকারভেদ থাকতে পারে। তবে তিনটি বিশেষ শ্রেণীর প্রকারভেদ এখানে উল্লেখ করা হলো।
১) ট্রু এলকালয়েড- এর রাসায়নিক গঠনের ক্ষেত্রে নাইট্রোজেন অনু থাকে এবং তা ‘বিষম চক্র’ এর অন্তর্গত এবং তা অ্যামাইনো এসিড থেকে উদ্ভব হয়েছে। যেমন- নিকোটিন(Nicotine), মারফিন(Morphine), অ্যাট্রফিন(Atropine) ইত্যাদি।
২) প্রোটো অ্যালকালয়েডের- এর রাসায়নিক গঠনে নাইট্রোজেন অণু থাকে তবে সেগুলো বিষম চক্রের অন্তর্গত নয়। এবং তারা অ্যামাইনো এসিড থেকে উৎপন্ন হয়। যেমন এফিড্রিন(Ephedrine), মেসকালিন(Mescaline), এড্রেনালিন(Adrenaline) ইত্যাদি।
৩) সিউডো অ্যালকালয়েড- এর রাসায়নিক গঠনের ক্ষেত্রে নাইট্রোজেন অনু থাকে এবং তা বিষম চক্রের অন্তর্গত। এবং সেগুলো অ্যামাইনো এসিড থেকে উদ্ভূত হয়। ক্যাফেইন(Caffeine), থিওফাইলিন(Theophylline), থিওব্রমিন(Theobromine), ইত্যাদি।
এই অ্যালকালয়েড গুলো ছাড়াও আরো অন্তত ৬ প্রকারের অ্যালকালয়েড দেখা যায়। সেগুলো হলঃ
ফিনাইল এলানিন (Phenylalanine), অরনিথিন(Ornithine), ট্রিপটোফেন (Tryptophan), হিসটিডিন (Histidine), এনথ্রানিলিক এসিড(Anthranilic Acid) এবং লাইসিন (Lysine).
অ্যালকালয়েড এর উৎসঃ
কচিলা বীজ(Strychnine tree), চা পাতা, কোকোয়া ফল, সিঙ্কোনা গাছের বাকল, পেঁপে, পান পাতা এবং সর্পগন্ধা বৃক্ষের শেকড়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অ্যালকালয়েড পাওয়া যায়। ধুতরা, কোকা, কফি, তামাক, ওপিয়াম এই উদ্ভিদগুলোতে প্রচুর পরিমাণে অ্যালকালয়েড থাকে। কলার ভিতরেও সামান্য পরিমাণে এলকালয়েড পাওয়া যায়।
এছাড়াও কিছু ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাক(যেমন Psilocybe গণের ছত্রাক থেকে Psilocybine নামক অ্যালকালয়েড) এর মধ্যেও অ্যালকালায়েড পাওয়া যায়। ব্যাঙের চামড়ায় Bufotenine নামক এক ধরনের অ্যালকালাইড পাওয়া যায়। কোডিন, স্ট্রাইকনিন, মরফিন ইত্যাদি উপক্ষারগুলো ব্যথা নাশক ঔষধ তৈরি সহ নানাবিধ ঔষধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে অ্যালকালয়েড এর ব্যবহারঃ
ইতিহাসের প্রথম লগ্ন থেকেই এই অ্যালকালয়েড নানাবিধ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। খৃষ্টপূর্ব ২০০ সালের দিকেও মেসোপটোমিয়ার প্রাচীন চিকিৎসা শাস্ত্রে এলকালয়েড সমৃদ্ধ ঔষধি বৃক্ষ চিকিৎসাকার্যে ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়। এমনকি খ্রিস্টপূর্ব প্রথম থেকে তৃতীয় শতকে চীন দেশের চিকিৎসা সংক্রান্ত অনেক বই পত্রে অ্যালকালয়েড সমৃদ্ধ অ্যাফিড্রা ও অপিয়াম পাপ্পি ব্যবহারের ইতিহাস পাওয়া যায়।
শেষ কথাঃ এতক্ষণ ‘অ্যালকালয়েড কি’ তা জানার সাথে সাথে আমরা এই উপক্ষার বিষয়ক আরো নানাবিধ তথ্য জানলাম। অ্যালকালয়েড বিশ্বপ্রকৃতির এক অপূর্ব দান। চিকিৎসা ক্ষেত্রে সহ নানাবিধ ক্ষেত্রে সফলতার সহিত এই জৈব যৌগটি ব্যবহার করে মানুষ উপকৃত হচ্ছে। তবে ‘অ্যালকালয়েড কি’ এবং তার ‘ব্যাবহারবিধি’ এই বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান অর্জন না করে এর অতি ব্যবহার বা অপব্যবহারে নানা জটিল রোগের সৃষ্টি হতে পারে।
আরো পড়ুনঃ নাক্স ভমিকার ব্যাবহার, ডোজ ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
ডা. দীপংকর মন্ডল
রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথ
০৪.০১.২০২৫
এই লেখাটি আপনার উপকারে এসেছে কি? আরো নতুন লেখা তৈরির জন্য আর্থিকভাবে অবদান রাখতে পারেন। যেকোন পরিমাণ আর্থিক কন্ট্রিবিউশন করতে নীচের ডোনেট বাটন ব্যাবহার করুন।