আজকের আর্টিকেলে আঘাতের চিকিৎসা বিষয়ে খুবই একটি কমন ভুলের বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি। আর্নিকা কি আঘাতের ঔষধ? সেদিন আমার এক কাকা চেম্বারে এসে ছিলেন চিকিৎসা নিতে। কথায় কথায় তিনি বললেন বাড়িতে তিনি আর্নিকা ২০০ শক্তি এক আউন্স ঔষধ কিনে রেখেছেন। যখনই কোথাও উনি আঘাত পান তখন ওই ওষুধটি নিয়মিত কয়েকদিন খান। অর্থাৎ তিনি জানেন যে আর্নিকা সকল ধরনের আঘাতের ঔষধ। কিন্তু বাস্তবে কি তাই? সকল প্রকার আঘাতেই কি আর্নিকা ঔষধটি কাজ করবে? আর্নিকার ব্যবহারটি তার ক্ষেত্রে কি সঠিক হয়েছে কি? চলুন এই ব্যাপারে আজকে আলোচনা করব।
অনেকেই মনে করেন আঘাত লাগলে আর্নিকা ঔষধটি ২০০ বা ৩০ শক্তি ব্যবহার করলে যেকোনো প্রকার আঘাতের বেদনায় কাজ করবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয় না কারণ সকল প্রকার আঘাত বা ইনজুরি তো একই রকম নয়। হোমিওপ্যাথিতে আঘাতের স্থান, ধরন ও লক্ষণের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ঔষধ রয়েছে। তাই শুধুমাত্র আর্নিকা ঔষধটির উপর নির্ভর করে আঘাতের সামগ্রিক চিকিৎসা কখনোই সম্ভব নয়।
বিষয়টি বর্ণনার পূর্বে আমি আঘাতের বিভিন্ন ধরনের উপর বিবেচনা করে কিছু ঔষধের তালিকা দিচ্ছি।
রাসটক্সঃ লিগামেন্ট বা জয়েন্ট এর আঘাতে রাসটক্স খুব সুন্দর কাজ করে। এছাড়াও ভারী কোন বস্তু তুলতে গিয়ে মচকা আঘাত পেলে বা রাত্রে ঘুমের দোষে মোড়া লেগে ঘাড় বা কোমরে ব্যথা হলে এই ঔষধ এর ব্যবহারে আরোগ্য হয়ে যায়। উত্তাপে ব্যাথা যন্ত্রণা কমে।
হাইপেরিকামঃ নার্ভের যেকোনো প্রকার নার্ভের আঘাতে হাইপারিকাম সুন্দর কাজ করে। আঙ্গুলের মাথায় যেখানে নার্ভের অবস্থান এইখানে হাইপেরিকামই উৎকৃষ্ট ঔষধ। দরজায় যদি কখনো আঙ্গুল চাপা পড়ে সেখানে হাইপেরিকাম প্রযুক্ত হবে। উত্তাপে সকল প্রকার বেদনার উপশম।
লিডাম পালঃ এটিও নার্ভের আঘাতে কাজ করে। আঘাতের কারণে শরীর অভ্যন্তরে কোথাও রক্ত জমাট বেঁধে গেলে তা দূর করতে সহায়তা করে লিডাম পাল। তবে ঠান্ডায় ব্যথা উপশম এটি বিবেচনায় রাখতে হয়।
সিম্ফাইটামঃ হাড়ের ফ্রাকচার বা হাড় ভেঙে গেলে সেই ক্ষেত্রে এই ঔষধের সহযোগিতা লাগে। চোখের আঘাতেও সিম্ফাইটাম ব্যবহৃত হয়।
নেট্রাম সালফঃ হেড ইঞ্জুরি বা মাথার যে কোন প্রকার আঘাতে নৃত্যাম সালফ ব্যবহার করতে হয়। আঘাত লাগার কারণে মাথায় জল জমে গেলেও নেট্রাম সালফ তা দূর করে দেয়।
রুটাঃ হাড়ের আঘাত বা অস্থি আবরণী পেরিওস্টিয়াম এ আঘাত, অথবা মচকে যাওয়া ব্যথায় রুটা ব্যবহৃত হয়। আঘাত থেকে কোন টিউমার হলে রুটা সুন্দর কাজ করে।
কোনিয়ামঃ স্ত্রী লোকের স্তন এবং পুরুষের অন্ডকোষে আঘাত লাগলে কোনিয়াম ব্যবহৃত হয়। এবং ওই সকল আঘাত থেকে যদি কোন মাংসপিণ্ড বা টিউমারের মত তৈরি হয় সেটিও আরোগ্য করতে পারে কোনিয়াম।
বেসিস পারঃ যেকোনো প্রকার সফ্ট টিস্যুতে আঘাতে বেলিস পার সফলতার সঙ্গে ব্যবহৃত হয়।
আর্নিকা মন্টেনাঃ শরীরের সকল প্রকার মাংসপেশিতে আঘাতে আর্নিকা ঔষধটি ব্যবহৃত হয়। এই ঔষধটি মাংসপেশির ওপর আঘাতে বিশেষ ক্রিয়া করে থাকে। এছাড়াও আঘাতের কারণে শরীরের কোথাও রক্ত জমাট বেঁধে গেলে তা দূর করতেও আর্নিকা ব্যবহৃত হয়। চোখে আঘাত লেগে সেখানে রক্ত জমাট বাঁধলেও তা দূর করতে পারে আর্নিকা।
অর্থাৎ আমরা দেখতে পেলাম বিভিন্ন ধরনের আঘাতে কিভাবে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ নির্বাচিত হয়ে থাকে। এই বিষয়গুলো বিবেচনা করার সাথে সাথে রোগীর অন্যান্য সকল লক্ষণের উপর নজর রেখেই আঘাতের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা সম্পন্ন হতে পারে।
তাই যেকোনো প্রকার আঘাতেই আর্নিকা নয়। নিজের এই বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান না থাকলে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করে ঔষধ সেবন করা উচিত।
এছাড়াও হোমিওপ্যাথিক শক্তিকৃত ঔষধ সূক্ষ্ম মাত্রায় প্রয়োগ করার প্রয়োজন হতে পারে। তাই এই বিষয়ে অভিজ্ঞ একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকই সবথেকে ভালো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন।
ডা. দীপংকর মন্ডল
রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথ
২৯.০৩.২০২৪