কি খাবেন? কিভাবে খাবেন? আয়ুর্বেদিক খাদ্যাখাদ্য বিবেচনা

0
170

আজকের আলোচনাতে আমি আয়ুর্বেদিক খাদ্যাখাদ্য বিবেচনা বিষয়ে যথাসম্ভব আলোচনা করব। চলুন তবে মূল আলোচনাতে প্রবেশ করা যাক।

আয়ুর্বেদিক খাদ্যাখাদ্য বিবেচনাঃ

সাত্বিক, রাজসিক ও তামসিক এই তিন প্রকারের গুন সমৃদ্ধ খাবার আমরা আহার করে থাকি।

আমরা কি জানি যে দুটি পুষ্টিকর ভেষজ গুণ সম্পন্ন খাদ্য আলাদা আলাদা ভাবে খেলে যেমন পুষ্টি আমরা লাভ করি, ওই দুটি খাদ্য একসঙ্গে মিশিয়ে খেলে তার থেকে আরো অধিক গুণ পুষ্টি উপাদান আমরা পেতে পারি? আবার কিছু বিষাদগুনা সম্পন্ন খাদ্যদ্রব্য আছে যেগুলো একটির সঙ্গে আরেকটি মিশ্রিত হলে শরীর অভ্যন্তরে শুভ ক্রিয়ার পরিবর্তে বিরুদ্ধ ভাব উৎপন্ন হয়! এই বিষয়ে জানাটা আমাদের কর্তব্য। কেননা তবেই আমরা আমাদের শারীর যন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সক্ষম হব।

দুটি খাদ্যকে একসাথে মেশালে তা কখনো কখনো সুবিধা সৃষ্টি করে আবার কখনো কখনো তা সমস্যা তৈরি করে। আবার কখনো কখনো আলাদা আলাদা ভাবে খেলে দুটি খাবারই উপকারী। অর্থাৎ বিশেষ কোনো দুটি খাবার কখনো একসঙ্গে মিশলে সমস্যা আবার কখনো একসঙ্গে মিশলে উপকারী। আয়ুর্বেদিক মতানুসারে খাদ্য খাদ্য বিষয়ক এই তথ্য নিয়ে নিয়ে এবার আলোচনা করব। 

দেখা যাচ্ছে আমরা অনেকে খুব ভালো খাবার দাবার আহার করছি। কিন্তু তা সত্বেও রোগ হচ্ছে কেন আমাদের?

তবে আমাদের আমার আহারের কোন অসুবিধা আছে কি? 

শ্রীল প্রভুপাদ বলেছেন “একটি দুগ্ধ জাতীয় খাবার ঘি বা পনির বেশি খেলে রোগ হয়ে যায়, আবার আরেকটি দুগ্ধ জাতীয় খাবার দৈ আহার করলে পেটটা ঠিক হয়ে যায়।”

আয়ুর্বেদিক খাদ্যাখাদ্য বিবেচনা ছবি
আয়ুর্বেদিক খাদ্যাখাদ্য বিবেচনা ছবি

দুধ থেকে দৈ হয়েছে, আবার সেই দুধের সাথে দৈ কে মেশালে তা বিরুদ্ধ আহার হয়ে যাবে। অর্থাৎ এই দুটি খাদ্য একসঙ্গে মিশবে না। 

রাত্রিবেলা টক জাতীয় খাবার এবং দই এর কোনটি আহার করা উচিত নয়। -হরি ভক্তি বিলাস। 

দৈয়ের সাথে আমিষ মিশবে না। 

দৈ কখনো রান্না করা উচিত নয়। এটি খুব ক্ষতিকর ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। 

যেসব খাবারের সাথে দই মিশবে না সেগুলো হলো- 

গরম জল, ফল, মটরশুঁটি, দুধ, পনির, ঘি, রাতের বেলা, আমিষ আহারের সঙ্গে ইত্যাদি।

আজকালকার দিনে আহারে খাদ্যখাদ্য বিচার করা হয় না বলেই আমরা নানাবিধ জটিল রোগ যেমন কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, থাইরয়েডাইটিস ইত্যাদিতে ভুগে থাকি। 

দুধ কখনো ঠান্ডা অবস্থায় পান করা উচিত নয়। দুধ এত পুষ্টিকর খাবার যেটা হজম করা কঠিন হয়ে পড়ে। ঠান্ডা দুই ধজম করা আরো কষ্টকর। এই কারণে দুধ ঠান্ডা হয়ে গেলে তা আবার গরম করে পান করা উচিত। 

রাতে ঘুমানোর আগে দুধ পান করা ভালো। রাতের বেলা শারীরিক কিছু জৈবিক ক্রিয়া হয়ে থাকে যা দুগ্ধ জাতীয় খাবার হজমের জন্য উপযোগী। সূর্যাস্তের পর দুধ পান করা ভালো। তাই বলে গভীর রাত্রে দুধ পান করা যাবে না। সূর্যাস্তের পর এবং সন্ধ্যার প্রাক্কালে সামান্য পরিমাণে দুধ পান করলে তাতে সুনিদ্র হয়ে থাকে। 

দুধের সাথে অন্য কিছু আহার না করাই ভালো। তবে কেক, বিস্কুট, বা অন্য কিছু সামান্য পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে। যদিও খাবারের পুষ্টিমান বিবেচনা করে তবেই কোন খাবার আহারের জন্য নির্বাচন করা উচিত।

দুধের সঙ্গে ফল, শাকসবজি নিষেধ। পাকা আম এটিও যথাসম্ভব দুধের সঙ্গে না মেশানোই ভালো। তবে বেশ কিছুদিন সময়ের ব্যবধানে দুই একবার হয়তো খাওয়া যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে আম কে অবশ্যই পরিপূর্ণভাবে পাকা হতে হবে। 

দুধের সাথে তৈলজাতীয় খাবার বা নোনতা খাবার নিষিদ্ধ। দুধের সাথে চানাচুর, নিমকি, এসব খাওয়া ক্ষতিকর। দুধ দিয়ে রান্না করে খাওয়া সেটিও খুব ক্ষতিকর ব্যাপার। 

আয়ুর্বেদিক খাদ্যাখাদ্য বিবেচনায় দুধ এবং চিনি নিষেধ। চিনি খুব খারাপ ধরনের রসায়নিক দ্বারা তৈরি। চিনি ছাড়াই এমনকি দুধ খালি খালি খাওয়াটাই সবথেকে ভালো। তবে ভেজাল মুক্ত গুড় হলে কিছুটা মেশানো যাবে। কিছু ক্ষেত্রেই দুধের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। তবে দুধটা উষ্ণ থাকলে ভালো হয়। 

আহারে সন্ধব লবণ ব্যবহার উত্তম। মিল্ক শেক, আইসক্রিম এসব না খাওয়াই ভালো।

এখানে দুধ বলতে গাভীর দুধ বোঝানো হচ্ছে। শ্রীল প্রভুপাদ বলেছেন মহিষের দুধ খেলে বুদ্ধি আরও নষ্ট হয়ে যায়।

দুধ একটি অলৌকিক খাদ্য। কারণ এতে মানবদেহের প্রয়োজনীয় প্রায় সব কয়টি ভিটামিন রয়েছে। ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির প্রগতি হয় তখনই যখন মানুষ সত্বগুনে বিকশিত হওয়ার সুযোগ লাভ করে সেই জন্য দুধ ফল এবং শাকসব শস্য জাতীয় খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে অধিক। 

-শ্রীমৎ ভাগবত ১. ১৬. ৪ তাৎপর্য।

একদিনে আধ সের (৪৭০ গ্রাম) দুধ-বয়স্ক কেউ খেলে তারার অন্য কোন খাবার খাওয়ার প্রয়োজন হয় না। আগের মুনি ঋষিরা প্রায়ই শুধুমাত্র দুধ পান করেই জীবন ধারণ করতেন। সুখদেব গোস্বামী সাধারণত দুধ ভিন্ন অন্য খাবার খেতেন না। 

দুধ খেলে হজম না হলে কি করতে হবে?

অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় দুধ খেলে সাধারণত হজম হতে চায় না। তারা কিছুটা শুকনো আদা, গোল মরিচ, দারচিনি এসব মিশিয়ে খেতে পারেন দুধের সাথে। হলুদ, মধু, ঘি বাড়লে একসাথে খাওয়া যাবে।

দুধ হজম কষ্টকর হলে তা সেবনের নিয়মঃ আদা শুকিয়ে গুঁড়ো করতে হবে। তারপর একটা ক্গ্লাসের এক চতুর্থাংশ দুধ নিয়ে তাতেও শুকনো আদার গুড়া মেশাতে হবে। এরপর ওই আদা মিশ্রিত দুধ পান করতে হবে এভাবে ১০-১৬ দিন অভ্যাস করতে হবে। এরপর আস্তে আস্তে দুধের পরিমাণ বাড়িয়ে আধা গ্লাস, তারপর এক গ্লাস এভাবে অভ্যাস করতে হবে। 

দুধের সাথে যেসব খাবার খাওয়া যাবেনা সেগুলো হল দই, অম্ল বা লেবু, মটরশুটি ইত্যাদি।

টমেটো ক্লাস সালাদ ক্ষতিকরঃ টমেটো বৃদ্ধি করে টমেটো যতটা পরিমাণে পরিহার করা যায় ততই ভালো। আর যদিও খেতে হয় তবে আলাদা করে খেতে হবে। 

মধু কখনো গরম করা উচিত নয়। মধু গরম করলে এর পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায় এবং কিছুটা বিষাক্ত হয়ে পড়ে এবং ক্ষতি করে শরীরের। তবে উষ্ণ গরমজলে মধু মেশানো যেতে পারে।

অনেকে বলে খালি পেটে ফল ভরা পেটে জল খেতে হয় না। খাবার এবং ফল খাওয়ার মধ্যে একটা গ্যাপ রাখাই ভালো। ফলটা সহজে হজম হয়ে যায়। 

মাছের সাথে মুলা খাটে না। দইয়ের সাথে আমিষটা মিশে না। দুধের সাথে যে সকল খাদ্য মিশবে না তা হল- ঘি, দুধ, আমিষ, পনির, ফল, মটরশুটি, গরম জল, রাতের বেলা ইত্যাদি।

নিষিদ্ধ আহার মটরশুঁটি এর সাথে ফল, দুধ, পনির, চিজ, দই, বিশেষ করে লেবু এর সাথে দুধ, দই, টমেটো, শসা, তরমুজ, শস্য ভাজা ইত্যাদি খাবার, স্টার্চ জাতীয় খাবার, আলু, ভাত, শাকসবজি, ফল, দুধ একসাথে খাওয়া যাবেনা।

আহারের পূর্বে যদি আমরা আয়ুর্বেদিক খাদ্যাখাদ্য বিবেচনা করে আমাদের খাদ্য নির্বাচন করি তবে আমরা অনে কঠিন ও জটিল রোগের আক্রমণ কে প্রতিহত করতে পারি।

আরো পড়ুনঃ
সুস্থ জীবন গঠনে আয়ুর্বেদ| আদর্শ জীবনাচরণ| প্রথম পর্ব

Previous articleবাচ্চার জ্বর যেন এখনই কমে যায়, জ্বর আর না আসে এইরকম ঔষধ
Next articleআর্টিকেরিয়া বা আমবাত এর হোমিওপ্যাথিক চিকিতসা
Dr. Dipankar Mondal
হোমিওপ্যাথিক নীতি অনুযায়ী রোগীর সামগ্রীক লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা দ্বারাই জটিল, কঠিন ও দুরারোগ্য রোগের চিকিৎসা করা সম্ভব। জীবনযাপনের ভুল অভ্যাস থেকে সৃষ্ট রোগ, সংযম ব্যতীত শুধুমাত্র ঔষধ সেবনের দ্বারা প্রতিরোধ বা আরোগ্যের আশা করা বাতুলতা মাত্র।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here