উপবাস কালীন শরীর চর্চা কীভাবে করবেন এবং কী সতর্কতা নেবেন? এই লেখাটি পাঠ করলে সেই বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে। চলুন তবে মূল আলোচনায় প্রবেশ করা যাক।
আমরা অনেকেই ধর্মীয় বা স্বাস্থ্যগত কারণে উপবাস থাকি। আবার এর মধ্যে নিয়মিত শরীর চর্চাও চালিয়ে যেতে চাই। কিন্তু দীর্ঘক্ষণের জ্বালা উপবাস বা দীর্ঘ সময় যাবত আহার না করা এইরকম পরিস্থিতিতে অর্থাৎ উপবাস কালীন শরীর চর্চা করা কি নিরাপদ? আজকের লেখাতে আমি এই ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করব।
আজকের আলোচনাতে থাকবে –
১) উপবাসে এক্সারসাইজের প্রভাব
২) কী ধরনের শরীরচর্চা নিরাপদ
৩) ডিহাইড্রেশন এড়ানোর উপায়
৪) বিশেষজ্ঞদের মতামত
হ্যাঁ উপবাসের সময় শরীর চর্চা করা যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই সর্বোচ্চ সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। যেমন যদি উপবাস কি নির্জলা হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে হাই ইনটেনসিটি ওয়ার্কআউট বা ভারী শরীর চর্চা যেমন দৌড়ানো, ওয়েট লিফটিং ইত্যাদি সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে যেতে হবে। তবে খুব সচেতন ভাবে পরিমিত মাত্রায় লো ইনটেন্সিটি এক্সারসাইজ যেমন ইয়োগা, স্ট্রেচিং, ওয়াকিং ইত্যাদি প্র্যাকটিস করা যেতে পারে। শরীর চর্চা করার সময় যদি মাথা ঘোরা দুর্বলতা বা শারীরিক অন্যান্য কষ্ট উপসর্গ বেড়ে যায় তবে অবশ্যই এক্সারসাইজ বন্ধ করতে হবে।
এক্সারসাইজ এর ধরনের কথা আগেই বলা হয়েছে। উপবাসের দিন সাধারণত হালকা প্রকৃতির ব্যায়াম করা যেতে পারে। উপবাসের সময় হালকা ধরনের এক্সারসাইজ যেমন প্লাঙ্ক, স্কোয়াট, স্ট্রেচিং ইত্যাদি ব্যায়াম পরিমিত মাত্রায় সীমিত সময়ের জন্য করা যেতে পারে। এর সাথে সাথে শরীর চর্চা করার জন্য উপযুক্ত সময় নির্বাচন করতে হবে। যেমন ভোরে বা সকাল বেলা এবং সন্ধ্যার সময় কিছুটা পরিমাণ(১৫ থেকে ২০ মিনিটের মত) শরীর চর্চা করা যেতে পারে। কেননা এই সময় আবহাওয়া কিছুটা শীতল ও শান্ত থাকে। শরীর বেশি ঘেমে গেলে সে ক্ষেত্রে ডিহাইড্রেশন তৈরি হতে পারে তাই অতিরিক্ত পরিমাণে পরিশ্রম হয় এমন ধরনের ব্যায়াম এড়িয়ে যেতে হবে।
উপবাস যদি নির্জলা হয়ে থাকে তবে জল পান না করাই ভালো। তবে শরীরে অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভব করলে বা শারীরিক অসস্তি দেখা দিলে অল্প পরিমাণে জলপান করা যেতে পারে(যদি ধর্মীয় নিয়মে অনুমতি থাকে)। এক্ষেত্রে ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালেন্সের জন্য ডাবের জল বা স্পোর্টস ড্রিঙ্ক পান করা যেতে পারে। অথবা বাড়িতে ব্যাবহারের যে সাধারণ জল তা পান করলেই হবে।
মেডিকেল পরামর্শ অনুযায়ী নির্জলা উপবাসে হাইড্রেশন এর সমন্বয় বজায় রাখা জরুরী। এক্সারসাইজ করার সময় আমাদের শরীর থেকে যথেষ্ট পরিমাণ ঘাম নিঃসরণ হয় এবং তার ফলে আমাদের শরীর থেকে ইলেকট্রোলাইট ক্ষয় হয়। এই ইলেকট্রোলাইট ক্ষয়ের পরিমাণ অতিরিক্ত হলে সে ক্ষেত্রে দুর্বলতা, ক্লান্তি, মাথা ব্যাথা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। শরীর চর্চার বিশেষজ্ঞ এর মতে উপবাসের দিন ন্যূনতম 30 ভাগ কম ইনটেনসিটি নিয়ে শরীর চর্চা করা উচিত। অর্থাৎ পরিশ্রমের মাত্রা অন্যান্য তুলনায় ৩০ ভাগ কম করতে হবে।
১) ভারী ওজন তোলা এড়িয়ে চলতে হবে।
২) দীর্ঘক্ষণ যাবৎ কার্ডিও (সাইক্লিং দৌড়) ব্যায়াম না করা।
৩) রৌদ্র ব্যায়াম করা।
১) সকালবেলা এবং বিকাল বেলা যখন পরিবেশ ঠান্ডা থাকে তখন হালকা ধরনের ব্যায়াম করা উচিত।
২) শরীরের চাহিদা মনোযোগ সহকারে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। অর্থাৎ শরীরের কথা শুনতে হবে।
৩) পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিতে হবে শরীরচর্চার সময়।
শেষ কথাঃ উপবাস এবং শরীর চর্চা এই দুটোকেই যথা সম্ভব গুরুত্ব দিতে হলে অবশ্যই দুদিকেই ব্যালেন্স রাখতে হবে। উপবাস কালীন শরীর চর্চা করতে হলে হালকা জাতীয় ব্যায়ামগুলোই একমাত্র অনুশীলন করা উচিত। আর যদি নিরজলা প্রবেশ করা হয় তাহলে আরো হালকা ব্যায়ামের অনুশীলন এবং প্রাক্টিস এর সময়ের পরিমাণ কমাতে হবে। আর যদি জল পান করার সুযোগ থাকে তাহলে শরীরচর্চা পূর্বে না হলেও অন্তত অনুশীলনের পর অল্প পরিমাণে জল পান করতে হবে।
ধর্মীয় বিধান এবং স্বাস্থ্যরক্ষা দুটি খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয় আমাদের জন্য। তাই এই দুটিকেই গুরুত্ব দিতে হবে।
ডা. দীপংকর মন্ডল।
রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথ।
০৮.০৪.২০২৫