এইচএমপিভি ভাইরাস(HMPV) কতটা ভয়াবহ?

0
398

ডোনেশন করুন

Bkash বিকাশ
Nagad নগদ
Rocket রকেট

অনুদান পাঠাতে এই নম্বর(পার্সোনাল- বিকাশ, নগদ, রকেট) ব্যাবহার করুন এবং অনুদান সম্পূর্ণ করতে আপনার ফোন নম্বর, ডোনেশন এর পরিমাণ এবং ট্রানজেকশন আইডি ব্যবহার করুন।

ধন্যবাদ!

আমরা আপনার উদার দানের প্রশংসা করি। আপনার সমর্থন আমাদের উৎসাহিত করেছে!

প্রাথমিক আলোচনাঃ করনা ভাইরাসের মতই আতঙ্ক, উদ্বেগ ও আশঙ্কা বাড়াবে কি এইচএমপিভি ভাইরাস? হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস(HMPV) দ্বারা সংক্রামিত হওয়া এই রোগ সাধারণত ফুসফুসকেই আক্রমণ করে থাকে। ভাইরাসটি আমাদের শ্বসনতন্ত্রের উপরের দিকে সাধারণত বেশি আক্রমণ করে থাকলেও কখনো কখনো শ্বসনতন্ত্রের নিচের দিকেও ভাইরাসের সংক্রমণ করে নিউমোনিয়া এবং কখনো কখনো সিওপিডি(COPD) এর ন্যায় লক্ষণ তৈরি করে।

এই ভাইরাস কতটা ভয়াবহ হতে পারে?

মেটানিউমোভাইরাস(Metapneumovirus) দ্বারা আক্রান্ত রোগীর রোগলক্ষণ, চিকিৎসা, ব্যবস্থাপনা ও জটিলতা সম্বন্ধে আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করব।

এইচএমপিভি সংক্রমণের লক্ষণঃ

এই ভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণগুলো খুব বেশি গুরুতর হয় না। সাধারণ সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট এবং ফুসফুস সংক্রান্ত রোগ লক্ষণই সাধারণত সৃষ্টি করে থাকে এই ভাইরাস।

সর্দিকাশিঃ ভাইরাস সংক্রমণের ফলে সাধারণত ফুসফুস আক্রান্ত হয়ে থাকে এবং সর্দি এবং কাশির মতো প্রাথমিক কিছু শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়।

এইচএমপিভি ভাইরাস(HMPV) কতটা ভয়াবহ
এইচএমপিভি ভাইরাস(HMPV) কতটা ভয়াবহ

শ্বাসকষ্টঃ যেহেতু আমাদের ফুসফুস রোগাক্রান্ত হয়ে থাকে তাই কিছু ক্ষেত্রে শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট দেখা দেয়।

জ্বরঃ কখনো কখনো শরীরে জ্বর আসতে পারে। এবং এই জ্বরের সাথে সাথে অন্যান্য রোগ উপসর্গগুলোও বর্তমান থাকতে পারে।

নাক থেকে জল পড়াঃ কাঁচা সর্দি হেতু নাক থেকে পাতলা জল পড়তে পারে। কখনো কখনো প্রচন্ড পরিমাণে হাঁচি হতে দেখা যায় রোগীর।

গলা ব্যথাঃ ফুসফুস সংক্রান্ত রোগ উপসর্গের সাথে সাথে রোগীর গলায় ব্যথা থাকতে পারে। অনেক সময় প্রচন্ড কাশির কারণেও গলায় ব্যথা হয়ে থাকে।

তবে একটি বিষয় এই যে, HMPV ভাইরাসের সংক্রমণ জনিত কষ্টকর রোগলক্ষণ সাধারণত করোনা ভাইরাসের মতো এতটা গুরুতর হয় না। রোগী ফুসফুস সংক্রান্ত সাধারন কিছু স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগে থাকে এবং যথাযথ চিকিৎসা দ্বারা দ্রুত আরোগ্য হয়ে যায়।

কারা এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে?

এই রোগে যে কোন বয়সী ব্যক্তি আক্রান্ত হতে পারে। সাধারণত শিশু এবং বয়স্ক ব্যক্তিরা এবং যে সকল ব্যক্তির জীবনীশক্তি দুর্বল অবস্থায় থাকে তারাই সাধারণত এই রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে থাকে। যে সমস্ত রোগীরা অন্য কোন জটিল রোগে ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি কিছু ক্ষেত্রে গুরুতর হতে পারে।

রোগ আক্রমণের সময়ঃ

শীতকালে এবং বসন্ত ঋতু শুরুর দিকে এই রোগের প্রকোপ কিছুটা বেশি হয়ে থাকে। তবে বছরের যে কোন সময়েই এই ভাইরাস দ্বারা সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি থাকে। একজন ব্যক্তি এই রোগে একবার আক্রান্ত হলেও পুনরায় আবারও সংক্রমনের শিকার হতে পারে। তবে দ্বিতীয়বারের সংক্রমণের ক্ষেত্রে সাধারণত প্রথমবারের তুলনায় কম উপসর্গ দেখা যায়।

এইচএমপিভি ভাইরাস কিভাবে ছড়ায়?

সাধারণত ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে এই রোগটি ছড়িয়ে থাকে। আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ অথবা ভিন্ন কোন মাধ্যমে ভাইরাসের সংক্রমণ থাকলে তার সংস্পর্শে গেলে রোগটি ছড়িয়ে থাকে। আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে শারীরিক সংসর্গ, ঘনিষ্ঠ মেলামেশা, হাঁচি-কাশি, চুম্বন ইত্যাদি থেকেও রোগটি ছড়িয়ে থাকে। দরজার হাতল, মোবাইল ফোন, কিবোর্ড, বা অন্য কোন বস্তুতে এই ভাইরাস লেগে থাকলে তার সংস্পর্শে আসলেও ভাইরাসটির সংক্রমন ঘটতে পারে। ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সাথে একই পাত্রে খাবার খাওয়া বা পানি পান করা এসব থেকেও ছড়িয়ে থাকে ভাইরাসটি। রোগাক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত পোশাক ও দ্রব্য সামগ্রী থেকে এই ভাইরাসটি সংক্রামিত হয়ে থাকে।

এইচএমপিভি সংক্রমনের জটিলতাঃ

যদিও এইচএমপিভি ভাইরাস এর সংক্রমণ হলে সাধারণ প্রকৃতির সর্দি, কাশি, শারীরিক অসুস্থতা, জ্বর ইত্যাদি রোগ লক্ষণ দেখা দেয় তবুও কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগটি মারাত্মক জটিলতাও তৈরি করতে পারে। সাধারণত যে সকল ব্যক্তির জীবনীশক্তি দুর্বল তাদের ক্ষেত্রে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ভয়াবহ হতে পারে। কখনো কখনো ভাইরাসের সংক্রমণ দ্বারা নিউমোনিয়া, হাঁপানি, ব্রংকাইটিস, ব্রংকিওলাইটিস ও ‘সিওপিডি‘র মত সমস্যা তৈরি হতে পারে।

এইচএমপিভি ভাইরাস নির্ণয়ঃ

আক্রান্ত ব্যক্তির গুরুতর কোন স্বাস্থ্য সমস্যা না থাকলে সাধারণত এই রোগে প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার তেমন প্রয়োজন হয় না। একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক রোগীর ব্যক্তিগত ইতিহাস ও রোগ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে রোগটি সম্বন্ধে ধারণা করতে পারেন। ভাইরাস নির্দিষ্টভাবে সনাক্তকরণের জন্য কখনো কখনো ল্যাবরেটরি টেস্টের প্রয়োজন হতে পারে।

এইচএমপিভি রোগ প্রতিরোধঃ

অন্য যে কোন রোগের মতোই এই রোগের ক্ষেত্রেও ‘প্রতিকারের থেকে প্রতিরোধই উত্তম’ এই নীতি প্রযোজ্য। যথাসময়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা গেলে এই ভাইরাসকে প্রতিরোধ করা সম্ভব।

) নিয়মিত হাত পরিষ্কারঃ হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান বা অ্যালকোহল দ্বারা যথাসম্ভব নিয়মিত হাত পরিষ্কার ও জীবানুমুক্ত রাখতে হবে।

) মাস্ক ব্যবহার করুনঃ সাধারণত হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে এই রোগটি দ্রুত ছড়িয়ে থাকে। তাই রোগক্রান্ত ব্যক্তি থেকে যেন রোগটি সংক্রামিত না হতে পারে সেইজন্য যথাসম্ভব মুখে কাপড় বা মাস্ক ব্যবহার করুন।

) জনসমাগম এড়িয়ে চলুনঃ যে অঞ্চলে এই রোগটির প্রবণতা দেখা গিয়েছে সেখানে অন্যান্য রোগের সাথে এই রোগ থাকতে পারে। তাই সর্বদা সচেতন থাকতে হবে।

) সংক্রামিত ব্যাক্তির সাহচর্জ এড়িয়ে চলাঃ অবশ্যই তাদের থেকে দূরে থাকতে হবে পূর্বেই যারা এই ভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত হয়েছে। ভাইরাস আক্রান্ত ব্যাক্তি বা এই ভাইরাস আক্রমনের সম্ভাবনা আছে এমন কারো সাথে খাবারের পাত্র- যেমন খাবারের প্লেট, চায়ের কাপ ইত্যাদি ভাগাভাগি করা যাবে না।

সুস্থ হতে কত সময় লাগে?

এইচএমপিভি সংক্রমণের পর রোগটি আরোগ্য হতে কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। রোগীর শরীরে অন্য কোন জটিল রোগ থাকলে সে ক্ষেত্রে আরোগ্য হতে বিলম্ব হতে পারে। সাধারণত সঠিক চিকিৎসা ও ব্যাবস্থাপনা থাকলে অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই রোগী সুস্থ্য হয়ে যায়।

এইচএমপিভি এর হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাঃ

এইচএমপিভি ভাইরাসের খুব সুন্দর ও আরোগ্য দায়ী হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা রয়েছে। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা একটি লাক্ষণিক চিকিৎসা তাই রোগ লক্ষণ এর সাথে সামগ্রীক ভাবে মিল রেখে ঔষধ নির্বাচন করতে হবে। আর্সেনিক এলবাম, কার্বো ভেজিটেবলিস, ইপিকাকুআনহা, নাক্স ভমিকা, এন্টিম টার্ট, একোনাইট, সালফার, ব্লাটা ওরিয়েন্টালিস, সেনেগা ইত্যাদি ঔষধ লক্ষণ অনুসারে রোগীকে প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়াও ধাতুগত লক্ষণ সাদৃশ্যে যে কোন হোমিওপ্যাথিক ঔষধই নির্বাচিত হতে পারে রোগীর জন্য।

এইচএমপি ভাইরাসের ব্যবস্থাপনাঃ

সাধারণত যদিও এই রোগটি গুরুতর কোন রোগ উপসর্গ তৈরি করে না তবুও প্রাথমিকভাবে রোগীর জন্য যথাযথ ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করতে পারলে রোগ দ্রুত আরোগ্য হয়। ঔষধ, পথ্য ও আদর্শ জীবনাচরণ দ্বারা জীবনী শক্তির প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে সহজেই এই রোগকে মোকাবেলা করা যেতে পারে। এবং সাধারণত তেমন কোন অ্যান্টিভাইরাল ওষুধের প্রয়োজন হয় না। বাড়িতেই এই রোগের জন্য স্বাস্থ্যকর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা সম্ভব তবে রোগ উপসর্গ গুরুতর হলে রোগীকে অবশ্যই হসপিটালাইজড করতে হবে।

শেষ কথাঃ এইচএমপিভি ভাইরাসটি করোনা ভাইরাসের সাদৃশ্যযুক্ত কিছু শারীরিক রোগ লক্ষণ প্রকাশ করলেও তা করোনা ভাইরাস এর মত অতটা গুরুতর হয় না। এবং যথাসময়ে উপযুক্ত চিকিৎসা হলে এই এইচএমপিভি ভাইরাসের সংক্রমণে মৃত্যুর হার খুবই কম হয়ে থাকে। তবে ‘সচেতনতাই মুক্তির হাতিয়ার’ এই নীতি মেনে সর্বদাই সচেতন থাকতে হবে। তাহলে আমরা এই ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে পারব

আরো পড়ুনঃ মহামারী ও হোমিওপ্যাথি

ডা. দীপংকর মন্ডল
রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথ
০৭.০১.২০২৫

এই লেখাটি আপনার উপকারে এসেছে কি? আরো নতুন লেখা তৈরির জন্য আর্থিকভাবে অবদান রাখতে পারেন। যেকোন পরিমাণ আর্থিক কন্ট্রিবিউশন  করতে নীচের ডোনেট বাটন ব্যাবহার করুন।

Previous articleকুয়াশার রহস্য: একটি বিজ্ঞানভিত্তিক আলোচনা
Next articleফোটা এবং ফোঁটা এর পার্থক্য কি?
Dr. Dipankar Mondal
হোমিওপ্যাথিক নীতি অনুযায়ী রোগীর সামগ্রীক লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা দ্বারাই জটিল, কঠিন ও দুরারোগ্য রোগের চিকিৎসা করা সম্ভব। জীবনযাপনের ভুল অভ্যাস থেকে সৃষ্ট রোগ, সংযম ব্যতীত শুধুমাত্র ঔষধ সেবনের দ্বারা প্রতিরোধ বা আরোগ্যের আশা করা বাতুলতা মাত্র।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here