প্রাথমিক আলোচনাঃ গ্যাস্ট্রিক আলসার রোগীর খাদ্য তালিকা উল্লেখ করব আজকের পোষ্টে। এছাড়াও ক্রনিক গ্যাস্ট্রিক আলসার সম্বন্ধে এই পোস্টটিতে আরো যে সকল বিষয়বস্তু অন্তর্ভুক্ত রয়েছে-
গ্যাস্ট্রিক আলসার কেন হয়? আলসারের লক্ষণ? আলসার থেকে মুক্তির উপায় তথা আলসারের চিকিৎসা, গ্যাস্ট্রিক আলসার রোগীর খাদ্য তালিকা ইত্যাদি।
এছাড়াও ক্রনিক গ্যাস্ট্রিক আলসার বিষয়ক আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর নিয়ে থাকবে প্রশ্নোত্তর পর্ব। তো চলুন মূল আলোচনায় প্রবেশ করা যাক।
গ্যাস্ট্রিক আলসার বা পাকস্থলীর আলসার হলো এক ধরনের ঘা বা ক্ষত যা পাকস্থলীর আবরণীতে তৈরি হয়ে থাকে। পাকস্থলীর বাইরে তন্ত্রের অংশেও আলসার হয়ে থাকে। একে ডিউটেনাম আলসার বলা হয়। এই গ্যাস্ট্রিক আলসার বা ডিওডেনাল আলসারকে কখনো কখনো পেপটিক আলসার বলে উল্লেখ করা হয়ে থাকে।
পাকস্থলীতে খাবার হজমের জন্য যে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড উৎপন্ন হয় এটি খুবই ক্ষতকারী স্বভাবের। এই এসিড পাকস্থলী আস্তরণে সরাসরি লাগলে তার থেকে পাকস্থলীতে ক্ষত উৎপন্ন হতে পারে। মূলত মিউকাস নামক একটি আস্তরণ দ্বারা পাকস্থলীর মূল অংশ সুরক্ষিত থাকে। কোন কারণবশত এই নিরাপত্তা আবরণী বিচ্ছিন্ন হয়ে পাকস্থলীর আস্তরণে এই এসিড লাগলে সেখান থেকে পাকিস্তানের আলসারের সূচনা হয়।
পাকস্থলের এই নিরাপত্তা আবরণীটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বেশ কিছু কারণ রয়েছে যেমন-
১) এইচ পাইলরি(H-Pylori) নামক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ।
২) কিছু NSAID বা এন্টি ইনফ্লামেটরি ড্রাগস গ্রুপের ঔষধ উচ্চ ডোজে বহুদিন যাবত সেবন করতে থাকলে এই সকাল ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় ক্রণিক গ্যাস্ট্রিক আলসার হতে পারে।
৩) অধিক আহার, অনিয়ত আহার, অধিক মসলা খাবারের অভ্যাস ইত্যাদি কারণে ডাইজেস্টিভ সিস্টেমের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে ক্রণিক গ্যাস্ট্রিক আলসার হতে পারে।
৪) পাকস্থলীতে খুব বেশি পরিমাণে এই এসিড তৈরি হলে।
৫) ধূমপান, মদ্যপান বা যেকোনো নেশা সামগ্রী এর কুফলে এই পেটের আলসার হতে পারে।
পাকস্থলীর আলসারের প্রধান একটি লক্ষণ হল পেটের মধ্যে এক ধরনের ব্যথা এবং জ্বালাপোড়ার অনুভব। এছাড়াও বদ হজম, টক এবং তিক্ত ঢেকুর ওঠা, গলা বুক জ্বালাপোড়া করা, অজীর্ণ, বমি হওয়া বা বমি বমি ভাব ইত্যাদি লক্ষণ গুলো থাকতে দেখা যায়।
অনেক সময় পেটের এই জ্বালা সম্প্রসারিত হয়ে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এমনকি হাত এবং পায়েও ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। তবে ক্রনিক গ্যাস্ট্রাইটিস এর মত লক্ষণ দীর্ঘদিন যাবত অনিয়মের কারণেই সৃষ্টি হয়ে থাকে। সাধারণ গ্যাস্ট্রিকের যথাযথ চিকিৎসা না হলে তা ক্রনিক গ্যাস্ট্রিক আলসারের পরিণত হয়।
গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্তি পেতে প্রধান করণীয় হল, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করতে হবে এবং খাদ্যাভ্যাস ও জীবনে আচরণ আদর্শ মান বজায় রাখতে হবে। চলুন তবে গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্তির উপায় জেনে নেই।
১) আহারের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার নির্বাচন করতে হবে এবং সকল প্রকার অস্বাস্থ্যকর খাবার যথাসম্ভব পরিহার করে চলতে হবে।
২) সকল প্রকার ক্ষতিকর নেশা পরিত্যাগ করতে হবে যেমন ধূমপান, মধদ্যপান, জর্দা, তামাক, অ্যালকোহল সেবন, ক্যাফেইন সেবন ইত্যাদি সম্পূর্ণরূপে বর্জন করতে হবে।
৩) ভাজাপোড়া, মশলা খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার ইত্যাদি যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।
৪) লবণের ভিতর থাকার সোডিয়াম পেটের আলসার কে বাড়িয়ে দেয়। তাই অবশ্যই লবণ কম খেতে হবে বিশেষত কাঁচা লবণ সম্পূর্ণ পরীত্যাগ করতে হবে।
৫) ভিটামিন এ, সি এবং ই যুক্ত ফল ও সবজি বেশি পরিমাণে খেতে হবে। কেননা এই সকল ভিটামিন আলসারের ঘা শুকাতে সাহায্য করে।
৬) এসপিরিন বা এজাতীয় ব্যথা নাশক ঔষধ আলসারের ক্ষতকে বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।
৭) বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছে সাস্থ্যকর চর্বি, ওমেগা থ্রি, ফ্যাটি এসিড ইত্যাদি থাকে। এগুলো প্রোস্টাগ্লান্ডিন তৈরিতে সহায়তা করে। এই প্রোস্টাগ্লান্ডিন আলসারের ঘা কে তাড়াতাড়ি শুকিয়ে দেয়।
আলসার রোগীর বন্ধু |
আলসার রোগীর শত্রু |
১) ফল এবং সবজিঃ কলা ,পেঁপে, বাদাম, খেজুর, আপেল ,শসা, গাজর, শিম, কুমড়া, পুইশাখ ইত্যাদি সবুজ এবং রঙিন ফল এবং সবজি খান। |
১) সাইট্রিক এসিডযুক্ত সকল ফল যেমন লেবু, মাল্টা ইত্যাদি সহ সকল টক জাতীয় খাবার এড়িয়ে যেতে হবে। সাইট্রিক এসিড পে্টের এসিডের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় যা আলসারের ক্ষতকে বাড়িয়ে তোলে। |
২) গোটা শস্যঃ গোটা শস্যতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। চাউল, গম, বার্লি, ওটস, রাযই ইত্যাদি খাবার গ্যাস্টিক আলসার রোগীরা পরিমিত মাত্রায় খাবেন। |
২) তেলেভাজা ও মসলাদার খাবার বিশেষভাবে এড়িয়ে যেতে হবে ।বিভিন্ন ফাস্টফুড এবং সিঙ্গাড়া, চপ, পুরি, সামুচা এসব খাবার সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করতে হবে। খাবারের শুকনো মরিচ এর গুঁড়ো ব্যবহার করা যাবে না। |
৩) লিন প্রোটিনঃ চর্বির পরিমাণ কম ও স্বাস্থ্যকর চর্বিযুক্ত খাবার খেতে হবে। টুনা মাছ, কড মাছ, শ্যামন মাছ, ডিম এর সাদা অংশ, দুধ, দৈই, পনির ইত্যাদি পরিমিত মাত্রায় খেতে হবে। |
৩) সেচুরেটেড ফ্যাট, ট্রান্স ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার পেটে এসিড এর মাত্রা বাড়িয়ে দেয় যা আলসারের জন্য খুব ক্ষতিকর। |
৪) মৌরি, জায়ফল, ত্রিফলা ইত্যাদি ভেষজ গুণসম্পন্ন খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা যেতে পারে। এগুলো স্বাস্থ্যকর এবং হজমে সহায়তা করে। |
৪) অ্যালকোহল বা মদ্যপান এবং বিড়ি সিগারেট তামাক জর্দা এবং এই জাতীয় সকল নেশা সামগ্রী পরিত্যাগ করতে হবে। এগুলো পেটে এসিডের মাত্রা বাড়ায় এবং আলসারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে |
শেষ কথাঃ এতক্ষণের আলোচনায় আমরা বুঝতে পারলাম মূলত অনিয়ন্ত্রিত জীবন আচরণ এবং খারাপ খাদ্যাভ্যাস থেকেই গ্যাস্ট্রিক আলসার রোগটির সূচনা এবং পরিপূর্ণতা। জীবন আচরণের এই সকল ত্রুটি কে সংশোধন করে আমরা সূচনাতেই ক্রনিক গ্যাস্ট্রিক আলসারকে প্রতিরোধ করতে পারি। আসুন আমরা গ্যাস্ট্রিক আলসার কে প্রতিরোধ করে সুস্থ ও সুন্দর জীবন অভ্যাস গড়ে তুলি।
নোটঃ গ্যাস্ট্রিক আলসার রোগীরা প্রতিদিন সকালে নিম পাতা এবং কাচা হলুদ এর গুলি বা বড়ি নিয়মিত খেলে খুব দ্রুত পেটের রোগ ভালো হয় ইহা বহুল পরিক্ষীত এবং আয়ুর্বেদ এটি বলেছে। এবং এর ফলে শরীরে ওজস তৈরি হয় যার ফলে শরীর ও মন প্রণবন্ত থাকে।