আজকের আলোচনা তে আমি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাকালীন পথ্যাপথ্য ও খাদ্যতত্ব এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। চলুন তবে মূল আলোচনাতে প্রবেশ করা যাক।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাকালীন পথ্যাপথ্য ও খাদ্যতত্বঃ
মানুষের শরীর সাধারণত আটটি উপাদানে গঠিত।
প্রথমত মানব শরীর কে দুই ভাগে ভাগ করা যায়- একটি স্থূল শরীর আরেকটি হল সূক্ষ্ম শরীর। স্থূল শরীর হলো আমাদের বাহ্য অবয়ব যা- মাটি, জল, ত্যেজ, বায়ু ও বোম দ্বারা গঠিত।
আর আমাদের সূক্ষ্ম শরীর যেটি সাধারণত অদৃশ্য- এটি মন, বুদ্ধি ও অহংকার দ্বারা গঠিত।
এই স্থুল শরীরের গঠন, বৃদ্ধি, রক্ষণ ও ক্ষয় পূরণের নিমিত্তে আমরা যা কিছু আহার করি তাই খাদ্য দ্রব্য।
আমরা যা কিছুই করি না কেন তাহা আহার্য বস্তু। কিন্তু আহার্য বস্তুকে খাদ্য হতে হলে তার কিছু শর্ত থাকা আবশ্যক।
যে যে বৈশিষ্ট্য বা শর্ত বর্তমান থাকলে আহার্য বস্তু খাদ্য হিসেবে পরিগণিত হয় তা হলঃ
প্রথম শ্রেণীর প্রোটিনঃ মাংস মাছ ডিম মেটে বা লিভার দুধ দই ইত্যাদি।
দ্বিতীয় শ্রেণীর প্রোটিনঃ আছাটা চাউল, আটা, যবের ছাতু, আলু, ডাউন এবং অন্যান্য তরিতরকারি ইত্যাদি।
তৃতীয় শ্রেণীর প্রোটিনঃ কলে ছাটা চাউল, সাদা ময়দা ইত্যাদি।
দৈনিক যে পরিমাণ খাদ্য আহার করা হয় তার অর্ধেক বা তিন-চতুর্থাংশ খাদ্যই শর্করা জাতীয় খাদ্য। শরীরে তাপ ও শক্তি উৎপন্ন করাই এর প্রধান কাজ।
শরীরের ভেতর তাপশক্তি উৎপন্ন করায় এই জাতীয় খাদ্যের প্রধান কাজ। স্নেহ জাতীয় খাদ্যের প্রায় সমস্ত দেহের শোষিত হয়ে যায়। কিন্তু ইহা খুব সহজ পাচ্য নয়। কারণ চর্বি জাতীয় খাদ্য মুখে বা পাকস্থলীতে পরিপাক হয় না। যে খাদ্যের শহিত এটি মিশ্রিত হয় সেই খাদ্যকেই ইহা দুষ্পাচ্য করে ফেলে। এমনকি বহু ঘন্টা পাকস্থলীতে থাকার পর খাদ্য যখন ক্ষুদ্রান্ত্রে বা ডিওডেনামে পৌঁছায় তখন ক্লোমরস ও পিত্তরসের প্রভাবে এটি হজম হয়।
আমাদের শরীরের মধ্যে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লৌহ, আয়োডিন, তাম্র ইত্যাদি বহুবিধ ধাতু যৌগিক অবস্থায় থাকে। ইহাদিগকে ধাতব লবণ বলে।
খাদ্যের লৌহের অভাব হলে রক্তাল্পতা দেখা দেয়।গর্ভাবস্থায় স্ত্রীলোকদের লোকের প্রয়োজন তা খুব বেশি। বিভিন্ন যন্ত্র, মেটে তে সর্বাধিক লোহা আছে নোটে শাক, কিসমিস, স্বাধীনতা দিতে যথেষ্ট পরিমাণ লৌহ থাকে।
দেহে আয়োডিনের পরিমাণ, লোহার পরিমাণ থেকে আরো কম প্রয়োজন। খাদ্যে আয়োডিনের অভাবে থাইরয়েড গ্রন্থির বৃদ্ধি বা গলগন্ড দেখা দেয়। এটির অভাবে শরীরে চর্বি উৎপন্ন হয় ও মেয়েদের ঋতু ঘটিত রোগ ও নানাবিধ শারীরিক ও মানসিক রোগ দেখা যায়। সবুজ লতাপাতা না পাওয়া গেলে, কড লিভার অয়েল ব্যবহারে ইহার অভাব মিটতে পারে।
ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণঃ
অম্লধর্মী ও ক্ষারধর্মী ধরনের দুই প্রকারের খাদ্য হয়।
যারা নিরামিষভোজী তাদের খাদ্যে দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত খাদ্য অবশ্যই থাকা আবশ্যক এবং ওই সঙ্গে ডাউল, আলু টাটকা তরিতরকারি ও কিছু ফল খাইলে প্রথম শ্রেণীর অভাব প্রোটিনের অভাব হয়না।
সতর্কতাঃ
১) সাধারণত মাছে ডিম হয়ে গেলে সেই মাছ কিছুটা গুরুপাক ও কিছুটা বিষাক্ত হয়ে পড়ে। এই কারণে মাছে ডিম হওয়ার পূর্বেই তার থেকে সর্বোচ্চ পরিমাণ পুষ্টি পাওয়া সম্ভব। কিন্তু একবার মাছে ডিম হয়ে গেলে তা থেকে আর সেই পুষ্টি গুনাগুন পাওয়া সম্ভব হয় না। আর তাছাড়া মাছ, মাংস ডিম ইত্যাদি তে পুষ্টি গুনাগুন অধিক হলেও অতিরিক্ত পরিমাণে মাছ, মাংস, ডিম এগুলো না খাওয়াই উত্তম। কেননা এগুলো অম্লধর্মী খাদ্য। আর তাছাড়া এই খাবারগুলো আমাদের শরীরে ইউরিক এসিডের মাত্রা বৃদ্ধি করে।
অম্লধর্মী খাদ্য অধিক পরিমাণে গ্রহণ করলে শরীরের রক্তের খারাপ অবস্থা হয়।
এই কারণে সাধারণত অম্ল ও ক্ষার খাবারের ভারসাম্য বজায় রাখতে পারলে ভালো হয়। অম্লধর্মী খাবার কম গ্রহণ করে তার পরিবর্তে ক্ষারধর্মী খাবার গ্রহণ করলে শরীর অনেকাংশে সুস্থ থাকে।
অম্লধর্মী খাদ্যঃ ভাত, রুটি, মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদি। সাধারণত সুপার মার্কেটে যে সমস্ত সামগ্রী পাওয়া যায় তার ভেতরে টকজাতীয় ফল ও কিছু সবজি বাদে প্রায় সকলই অম্লধর্মী খাদ্য।
ক্ষারধর্মী খাদ্যঃ আলু, দুধ ইত্যাদি।
২) শুধু দুধ না খেয়ে দুধের সঙ্গে কিছু ভাত চিড়া-মুড়ি, কলা ইত্যাদি মিশিয়ে খেলে সহজে হজম হয়।
৩) উদ্ভিজ্জ প্রোটিন প্রায়ই দুষ্পাচ্য হয়ে থাকে। এবং এগুলোর সবটুকু শরীরে হজম হয়না। তবে প্রাণিজ প্রোটিন সবটাই শরীরের ভেতর হজম হয়।
৪) আলুর সাধারণত কল বের হওয়ার পূর্বেই খাওয়া উচিত। কেননা আলুর কল বের হয়ে গেলে বা অংকুর বেরিয়ে গেলে সেই আলু কিছুটা পরিমাণে বিষাক্ত হয়ে থাকের।
৫) ডাউল দীর্ঘসময় জলে ভিজিয়ে রেখে অনেকক্ষণ তাপে সিদ্ধ করে রান্না করলে তা সহজে হজম হয়। কিন্তু ডাল ছিবড়া অবস্থায় থাকলে সাধারণত ইহা দুষ্পাচ্য শ্রেণীর হয়ে থাকে ফলে সহজে হজম হতে চায় না। তবে যে কোন প্রকার ডালের জল সুপাচ্য।
৬) শর্করা জাতীয় খাদ্য অধিক পরিমাণে আহার করলে বহুমূত্র রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ও শরীরে প্রচুর পরিমাণে মেদ জন্মে ও শরীর মোটা হয়ে যায়।
৭) অধিক পরিমাণে চিনি আহার করলে দাঁত ও হাড়ের ক্ষয় বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়। তাই স্বাস্থ্যকর আহার গ্রহণ করতে চিনির বিকল্প হিসেবে মধু, গুড় ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে। আর নিতান্তই যদি খেতে হয় তাহলে খুব সামান্য পরিমাণে চিনি খাওয়া যাবে।
৮) স্নেহ জাতী বা চর্বি জাতীয় খাদ্য সাধারণত পাকস্থলীতে হজম হয় না। এটি ডিওডেনাম বা ক্ষুদ্রান্তে গিয়ে ক্লোমরস এবং পিত্তরসের প্রভাবে হজম হয়। চর্বি একটি অতিশয় দুষ্পাচ্য খাদ্য এবং ইহা যে খাদ্যের সাথে মিশে যায় তাকেও দুষ্পাচ্য করে ফেলে। এ কারণেই অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাবার, ঘি, চর্বিযুক্ত মাংস-মাছ এবং অধিক চর্বিতে ভাজা খাদ্যদ্রব্য স্বাস্থ্যসম্মত নয়।
বিঃদ্রঃ লেখাটির ভেতরে “ডা. বিজয় কুমার বসু” প্রণীত “হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাকালীন পথ্যাপথ্য ও আধুনিক খাদ্যতত্ব” গ্রন্থ থেকে কিছু তথ্য সংযুক্ত করা হয়েছে।