প্রাথমিক আলোচনাঃ আজকের আলোচনাতে যে বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত তা হল-
চিয়া সিড কি, চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা, চিয়া সিড খাওয়ার সময়, ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম, চিয়া সিট কিভাবে খেতে হয় ইত্যাদি।
চলুন মূল আলোচনায় প্রবেশ করা যাক।
চিয়া সিড কি?
চিয়া সিড তিলের দানার মতো ডিম্বাকৃতির এক ধরনের শস্য বীজ। মধ্য ও দক্ষিণ মেক্সিকো এবং দক্ষিণ-পশ্চিম আমেরিকাতে চিয়া নামে এক ধরনের উদ্ভিদ জন্মায়। এই উদ্ভিদের সংরক্ষিত বীজই চিয়া সিড। বীজের রং ধূসর বর্ণের এবং সাদা ও কালো দাগ যুক্ত হয়ে থাকে। এই বীজে তরলকে শুষে নেওয়ার ক্ষমতা থাকায় এটি ভিজিয়ে রাখলে এর মূল ওজন থেকে অন্তত ১২ গুন পর্যন্ত ওজন বেড়ে যায়। জিয়া বীজ অপর নাম হল “সালভিয়া হিস্পানিকা এল”। এটিকে চিয়া বা গোল্ডেন চিয়া নামেও ডাকা হয়ে থাকে।
চিয়া সিড এর পুষ্টিগুণঃ
একটি খুবই পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার। চিয়া সিড এর ভেতর পুষ্টি সমৃদ্ধ যে উপাদান গুলো রয়েছে তা হলঃ ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড, ক্লোরোজেনিক এসিড, ক্যাফিক এসিড ইত্যাদি। এই বীজে ক্যালসিয়াম আছে প্রায় দুধের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি। কমলা লেবুর থেকে প্রায় সাত গুণ বেশি ভিটামিন সি আছে। পালং শাকের চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি আয়রন রয়েছে। কলার থেকে দ্বিগুণ পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে। মুরগির ডিম থেকে তিনগুণ বেশি প্রোটিন আছে। ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড রয়েছে প্রায় শ্যামন মাস থেকে ৮ গুণ বেশি।
চিয়া সিড এর উপকারিতাঃ
নিয়মিত চিয়াশির সেবনে যে সকল উপকারিতা পাওয়া যায় তা হলঃ
১) এর ভেতরে থাকা ওমেগা থ্রি হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে থাকে।
২) নিয়মিত এই বিষেবনে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কম হয়।
৩) এটিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে বিধায় তা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কে বাড়িয়ে তোলে।
৪) মেটাবলিক সিস্টেমকে ডেভলপ করে স্থুলতা ও মেদ কমিয়ে থাকে।
৫) পরিমিত মাত্রায় চিয়া সিড সেবনে এসিডিটির পরিমাণ কম হয়ে থাকে। বাত রোগে কিছু উপকার হতে পারে।
৬) রক্তের কোলেস্টেরলের পরিমাণ কম করে থাকে এর পুষ্টি গুনাগুন।
৭) এটি কোলনকে বা অন্ত্রকে পরিষ্কার রাখে ফলে কোলন ক্যান্সার এর ঝুঁকি কম হয়।
৮) নিয়মিত চিয়া সিড সেবনে পাচনতন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের উপশম হয়।
৯) চিয়া সিড ভালো ঘুম আনতে সাহায্য করে থাকে। অনেক ক্ষত্র প্রদাহ জনিত পরিস্থিতিকে কিছুটা সহনীয় করে থাকে। সন্ধি প্রদাহ কমাতে পারে এটি।
চিয়া সিড খাওয়ার অপকারিতাঃ
পৃথিবীর সকল ভালো বস্তুর ভেতরেও কিছু খারাপ অবশ্যই থাকে। চিয়া সিড একটি খুবই পুষ্টি গুণমানসম্পন্ন খাবার হওয়া সত্ত্বেও এর কিছু অপকারিতা রয়েছে। সচেতনতা ও ব্যবহারবিধির উপরেই এর ভালো মন্দ অনেক ক্ষেত্রে নির্ভর করে।
চিয়া সিড সেবনের অপকারিত সম্বন্ধে নিচে আলোচনা করা হলোঃ
১) গবেষণায় জানা গেছে যে অতিরিক্ত পরিমাণে চিয়া সিড গ্রহণ করলে তা স্তন ক্যান্সার এবং প্রস্ট্রেট ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।
২) মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণের চিয়া সিড সেবন করলে তা পেটের এসিডকে বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং গ্যাস্ট্রিকের মতো সমস্যা তৈরি হতে পারে।
৩) অতিরিক্ত পরিমাণে চিয়া সিড খেলে মাত্রাতিরিক্ত ভাবে ওজন কমে যেতে পারে। তাই সচেতন ভাবে সীমিত পরিমাণে এটি খাওয়া করা উচিত। নিয়মিত অধিক দিন ধরে সেবন না করে বিরতি দিয়ে দিয়ে পরিমিত মাত্রায় এটি খাওয়া যেতে পারে।
চিয়া সিড খাওয়ার নিয়মঃ
অনেকেই ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম জানতে চান। সঠিক নিয়ম না জেনে নিজের ইচ্ছামত এটি সেবন করলে তার ফলে কিছু অপকারিতা দেখা দিতে পারে। তাই আসুন চিয়া সিড কিভাবে খেতে হয় তার সঠিক নিয়ম জেনে নেই।
আধা ঘন্টা বা এক ঘন্টার মত সময় চিয়া সিড ভিজিয়ে রেখে তারপর সেবন করা যাবে। চিয়া সিড খাওয়ার সময় এটিকে জুস, পুডিং এসবের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। সবজির উপর সিটিয়ে দিয়েও এটি খাওয়া যেতে পারে। সাধারণত সকালে খালি পেটে অথবা রাত্রে ঘুমানোর আগে একই খেলে ভালো হয়।
শেষ কথাঃ পুষ্টিগুণ সম্পন্ন চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা যথেষ্ট পরিমাণে থাকলেও এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বিবেচনায় রেখেই পরিমিত মাত্রায় এটি খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম মেনে এটি খেলে চিয়া সিড এর প্রতিক্রিয়া কে রোধ করা যাবে।
আরো পড়ুনঃ ধুমপান ছাড়ার উপায়ঃ সর্বোচ্চ ৩ সপ্তাহে ধুমপান ছাড়ুন