ঘরোয়া পদ্ধতিতে ঠোঁট গোলাপি করার উপায়

0
402

প্রাথমিক আলোচনাঃ অনেকেই জিজ্ঞাসা করে থাকেন ঠোঁট(Lip) গোলাপি করার উপায় কি? 

আজকের আলোচনাতে আমরা ঠোঁট গোলাপি করার উপায় বা কিছু কার্যকরী টিপস নিয়ে আলোচনা করব। ঠোঁট গোলাপি করার উপায় হিসেবে আমি বেশ কিছু কার্যকরী উপায় এখানে বলবো।

ঠোঁট শুধু খাবার খাওয়া বা কথা বলতেই আমাদের সহায়তা করে তা নয়। ঠোঁট আমাদের মুখের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে তুলে বহুগুণ। সুন্দর ঠোঁটের অমলিন হাসি সবার নজর কাড়ে। তাই ঠোঁটের যত্ন নিয়ে কিভাবে আমরা আমাদের ঠোঁটকে সুন্দর মসৃণ ও আকর্ষণীয় করে তুলতে পারি চলুন সেই আলোচনাতে প্রবেশ করা যাক। আমি এখানে পাঁচটি ঠোঁট গোলাপি করার ঘরোয়া উপায় জানাবো।

ঠোঁট গোলাপি করার উপায়ঃ

ঠোঁট গোলাপি করতে বা ঠোঁট গোলাপি করার উপায় হিসেবে অনেকেই ঠোঁট গোলাপি করার ক্রিম ব্যবহার করে থাকেন। অথবা অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় ঠোঁটে কোন স্পট বা কালো দাগ আছে। তিনি হয়তো ঠোঁটের কালো দাগ দূর করার উপায় খুঁজছেন। এই ঠোঁটের কালো দাগ দূর বা ঠোঁট গোলাপি করতে বিশেষ কয়েকটি ঘরোয়া উপাদান আমরা ব্যবহার করতে পারি। 

ঠোঁট গোলাপি করার উপায়
ঠোঁট গোলাপি করার উপায়

মধুঃ মধু এমন একটি প্রাকৃতিক মহিচারাইজার যে তা ঠোঁটের আদ্রতা ধরে রাখে দীর্ঘক্ষণ। মধু ঠোঁটের কালচে ভাব দূর করতেও সাহায্য করে। প্রতিদিন রাত্রে ঘুমানোর সময় হালকা করে একটু মধুর প্রলেপ ঠোঁটে লাগালে ঠোঁটের মৃত কোষ দূর হয়ে যায় এবং ঠোঁট কোমল হয়। তার ফলে ঠোঁটের সৌন্দর্য্য অক্ষুন্ন থাকে। এভাবে নিয়মিত মাত্র কয়েক সপ্তাহ রাত্রে ঘুমানোর পূর্বে ঠোঁটে মধু লাগালেই দেখা যাবে ঠোঁটের স্বাস্থ্য তো অনেক সুন্দর হয়েছে। 

এলোভেরা জেলঃ অ্যালোভেরার জেল ঠোঁটের উপর খুব সুন্দর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এলোভেরার জেল আমাদের শরীরে ত্বকের, মাথার ত্বকের এবং ঠোঁটের যত্নে খুবই কার্যকরী একটি ভেষজ উপাদান। এই এলোভেরার জেল নিয়মিত কিছুদিন ঠোঁটে লাগালে ঠোঁটের মৃত কোষ দূর হয়, ঠোঁট কোমল হয় এবং ঠোঁটের সৌন্দর্য ফিরে আসে।

লেবুর রসঃ লেবুর রসে সাইট্রিক এসিড থাকার কারণে তা আমাদের ঠোঁটের মৃত কোষকে দূর করে এবং ঠোঁটের সৌন্দর্য কে উজ্জ্বল করে। ঠোঁটের কালো দাগ দূর করার উপায় হিসেবেও এই মধুকে ব্যবহার করা যায়। মধুর সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে নিয়মিত ঠোঁটে লাগালে ঠোঁটের কালচে ভাব দূর হয়। ঠোঁটের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। তবে লেবু এসিডিক প্রকৃতির হওয়ায় এটি অনেকক্ষণ যাবত ঠোঁটে লাগিয়ে না রাখাই উত্তম। 

দুধের সরের প্রলেপঃ ঠোঁটের স্বাস্থ্য সুন্দর রাখতে এবং ঠোঁটের পরিচর্যায় দুধের সরের প্রলেপ ব্যবহৃত হয়। আলতো করে ঠোঁটে দুধের সরের প্রলেপ লাগাতে হবে। দুধে থাকা ল্যাকটিক এসিড যেমন আমাদের ঠোঁটকে আদ্র রাখে তেমনি এটি ঠোঁটের মৃত কোষকেও দূর করে ঠোঁটকে কোমল করে। এটি নিয়মিত ঠোঁটে লাগালে ঠোঁটের সৌন্দর্য ধীরে ধীরে বাড়ে। তুলা বা কটন বাড বা এই জাতীয় কোন হালকা নরম নেকড়ায় দুধের সর মিশিয়ে আলতো করে ঠোঁটে মালিশ করতে হবে। তাই ঠোঁট গোলাপি করার উপায় হিসেবে দুধের সরের প্রলেপ ব্যাবহারকে আমরা এই তালিকার প্রথম দিকেই রাখতে পারি।

নারিকেল তেলঃ নারকেল তেল আমাদের ঠোঁটকে ময়েশ্চারাইজ করে রাখে। এর ফলে ঠোঁট ভেজা ভেজা ভাব থাকে এবং সহজে ফেটে যায় না। ঠোঁট মেশিন হাই এবং ঠোঁটের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। নিয়মিত রাত্রে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আলতো করে ঠোটে নারকেল তেল মালিশ করলে তাতে আমাদের ঠোঁটের কোমলতা বজায় থাকবে।

চিনি, নারিকেল তেল ও মধুর মিশ্রণে স্ক্রাব তৈরি করে তা ঠোঁটে লাগানো যেতে পারে এবং নিয়মিত লাগালে তাতে ঠোঁট এর মৃত কোষ দূর হবে এবং ঠোঁট নরম ও কোমল হবে। এছাড়াও ঠোঁটকে গোলাপি করতে বিভিন্ন তাজা ফলের রস(আঙ্গুর, বেদানা, স্ট্রবেরি), কাঁচা হলুদ ইত্যাদির প্রলেপ ব্যবহার করা যেতে পারে।

ঠোঁটে বরফ লাগানোঃ ঠোঁটে এই বরফ লাগানোর ব্যাপারটি ব্যক্তি বিশেষে ব্যতিক্রম থাকতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঠোঁটকে সুন্দর করতে বা ঠোঁটের কালচে দাগকে দূর করতে বরফের প্রলেপ দেওয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে এক টুকরো বরফ একটি কাপড়ের নেকড়ার ভেতরে নিয়ে আলতো করে এক থেকে দুই মিনিট যাবত ঠোঁটে ঘষতে হবে। খুব বেশি সময় বরফের ব্যবহার করলে অনেক সময় ঠোঁট সুস্থ হয়ে যেতে পারে। এটি সাবধানতার সঙ্গে এবং সচেতন ভাবে করতে হবে।

হাতের কাছে থাকা মূল্যবান এই প্রাকৃতিক উপাদানগুলো দ্বারা নিয়মিত ঠোঁটের পরিচর্যা করলে ঠোঁট গোলাপি করার ক্রিম ব্যবহারের প্রয়োজন হবে না। বরং এই সকল প্রাকৃতিক উপাদান কোন রকমের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়াই ঠোঁটের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করবে বহুগুণে। 

শেষ কথাঃ আশা করি উপরের আলোচনা থেকে ঠোঁট গোলাপি করার উপায় সম্বন্ধে আমরা ধারণা পেয়েছি। এই উপায় সমূহ কে কার্যকরী ভাবে ব্যবহার করতে পারলেই আমরা ঠোঁটের স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য রক্ষায় সফল হতে পারব। তবে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে সবার শরীর একই রকম অনুভূতি সম্পন্ন নয়। এই উপায় গুলো প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই সমভাবে ফলপ্রসু হবে এমন কথা বলা যায় না। এছাড়াও উপাদান গুলোর কোন কোনটি কারো শরীরে যদি বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে বা এলার্জির প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় সেক্ষেত্রে সেটি এড়িয়ে যেতে হবে। নিয়মিত প্রচেষ্টা এবং অধ্যাবসায় দ্বারা সুফল প্রাপ্ত হওয়া সম্ভব। 

সতর্কতাঃ

১) ব্যবহৃত ভেষজ উৎকৃষ্ট গুণমান সম্পন্ন হতে হবে এবং তা অবশ্যই যেন নির্ভেজাল হয়। 

২) প্রথমে অল্প অল্প করে অভ্যাস করুন এবং ধারাবাহিকতা বজায় রাখুন।

৩) কখনো কোন ভেষজ এর ব্যবহারে এলার্জিক রিএকশন হলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

৪) ধূমপান সর্বতোভাবে পরিহার করতে হবে। কেননা ধূমপানের নিকোটিন ঠোঁটের রংকে ভীষণভাবে কালো করে দেয়।

৫) স্বাস্থ্যকর খাবার ও পর্যাপ্ত জল পান করতে হবে ঠোঁটের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং সামগ্রিকভাবে শরীরকে সুস্থ রাখতে।

উপরের নিয়মগুলো পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবহার করুন। নিশ্চয়ই ঠোঁট সুন্দর ও গোলাপি হবে। 

ঠোঁটের সৌন্দর্য ও সুস্বাস্থ্য রক্ষার এই যাত্রায় এই লেখাটি আশা করি আপনাকে সহায়তা করবে। আপনার আরো কোন প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসা থাকলে কমেন্ট বক্সে উল্লেখ করুন। আমি যত সম্ভব চেষ্টা করব আপনার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য।

আরো পড়ুনঃ শরীরে ঘা এর ব্যবস্থাপনা কারণ এবং চিকিৎসা

এই লেখাটি আপনার উপকারে এসেছে কি? আরো নতুন লেখা তৈরির জন্য আর্থিকভাবে অবদান রাখতে পারেন। যেকোন পরিমাণ আর্থিক কন্ট্রিবিউশন  করতে নীচের ডোনেট বাটন ব্যাবহার করুন।

[custom_donation]

Previous articleগ্লোসাইটিস: কারণ লক্ষণ ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা
Next articleঠোঁট ফাটা প্রতিরোধের উপায়: কারণ, লক্ষণ ও জটিলতা
Dr. Dipankar Mondal
হোমিওপ্যাথিক নীতি অনুযায়ী রোগীর সামগ্রীক লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা দ্বারাই জটিল, কঠিন ও দুরারোগ্য রোগের চিকিৎসা করা সম্ভব। জীবনযাপনের ভুল অভ্যাস থেকে সৃষ্ট রোগ, সংযম ব্যতীত শুধুমাত্র ঔষধ সেবনের দ্বারা প্রতিরোধ বা আরোগ্যের আশা করা বাতুলতা মাত্র।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here