আজকের আলোচনাতে আমি ডিএমডি রোগের বিস্তারিত এবং চিকিৎসা বিষয়ে আলোচনা করব। চলুন তবে মূল আলোচনায় প্রবেশ করা যাক।
Duchenne muscular dystrophy (DMD) রোগটি কি?
Duchenne muscular dystrophy(ডিএমডি) রোগটি একটি জেনেটিক রোগ। এই রোগে রোগীর Muscle বা পেশি ক্ষয় হতে থাকে muscle এর degeneration এর কারণে। Dystrophy নামক এক ধরনের প্রোটিন যেটি পেশী কোষ কে পুষ্ট করে তার পরিবর্তনের ফলেই এই রোগটি হয়ে থাকে। মূলত শৈশবকালে সাধারণত দুই থেকে তিন বছর বয়স থেকেই এ রোগের সূত্রপাত হয়ে থাকে। সাধারণত ছেলেরাই এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। মেয়েদের ক্ষেত্রে এই রোগ খুবই বিরল।
মূলত পেশির দুর্বলতা ও ক্ষয়ই এই রোগের প্রধান লক্ষণ। সাধারণত প্রক্সিমাল (proximal) পেশীগুলিই এই রোগে প্রথমত আক্রান্ত হয় ও ক্ষয় হয়। পরবর্তীতে শরীরের অন্যান্য পেশীগুলোও ক্রমান্বয়ে আক্রান্ত হয় ও ক্ষয়ে যেতে থাকে। এ রোগে আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে লাফানো, দৌড়ানো, উঠে দাঁড়ানো হাটা ত্রুটিপূর্ণ হয়ে থাকে। এছাড়াও এসব শিশুর বেড়ে ওঠা, শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বাধা, মেরুদন্ড বেঁকে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে। একটা পর্যায়ে গিয়ে হার্ট ও শ্বাসযন্ত্রের পেশীগুলো আক্রান্ত হয়। ফলে হার্টের অসুবিধা বিশেষত কার্ডিওমায়োপ্যাথি হতে পারে এবং তীব্র শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে।
কাদের ডিএমডি রোগ হয়ঃ
সাধারণত পুরুষ শিশুদের এই রোগ হয়ে থাকে। মেয়েশিশুর এই রোগে প্রায় নেই বললেই চলে বা বিরল। এটি বংশগত কোন রোগ নয়। উপযুক্ত কারণ সাপেক্ষে যে কারো ক্ষেত্রেই এই রোগ হতে পারে যদিও বা তার বংশে কারো এই রোগ নাও থাকে।
ডুচেন মাসকুলার ডিস্ট্রফি রোগের লক্ষণ।
ডুচেন মাসকুলার ডিস্ট্রফি একটি জিনগত রোগ। একটি ছেলেদেরই বেশি হয়ে থাকে। রোগীর পেশি শুকিয়ে যায় ও দুর্বল হয়ে যায়। গুরুত্বপূর্ণ আরো কিছু লক্ষণ নিচে দেওয়া হলঃ
পেশি দুর্বলতাঃ এই রোগের প্রধান লক্ষণ হল পেশীর দুর্বলতা। সাধারণত তিন থেকে পাঁচ বছর বয়সী বাচ্চাদের এই রোগ লক্ষণ দেখা দেয়। সর্বপ্রথম রোগের লক্ষণ পায়ের পেশীতে দেখা দেয়। তার ফলে রোগাক্রান্ত বাচ্চাদের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে নামতে বা এইরকম কাজে বা চলাফেরায় কিছু ত্রুটি লক্ষ্য করা যায়।
হাঁটা চলার সমস্যাঃ শিশুর হাঁটাচলা বা চলাফেরা কষ্টকর হয়ে পড়ে। রোগাক্রান্ত শিশু যথাসময়ে হাঁটাচলা শিখতে পারেনা।
স্কোলিওসিসঃ অনেক সময় মেরুদন্ড বাঁকা হয়ে যাওয়ার মত সমস্যা দেখা দেয়। সাধারণত সামনের দিকে মেরুদন্ড বেঁকে যেতে পারে।
শ্বাসকষ্টঃ রোগী সামগ্রিকভাবে অসুস্থতা বোধ করে। তার ফলে অনেক সময় শ্বাসকষ্ট, দুর্বলতা ইত্যাদি নানাবিধ সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে।
তবে মনে রাখবেন বিভিন্ন বাচ্চাদের রোগের ক্ষেত্রে এই লক্ষণগুলোর বিভিন্নতা দেখা যেতে পারে।
প্রয়োজনে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
Duchenne muscular dystrophy নির্ণয়ঃ
রোগীর অসুস্থতার উপসর্গ গুলি মূল্যায়ন দ্বারা সহজেই রোগটি নির্ণয় করা যায়। এছাড়াও জেনেটিক পরীক্ষা, বায়োপসি পরীক্ষা ইত্যাদি করা যেতে পারে।
ডুশেন মাসকুলার ডিস্ট্রফি রোগের চিকিৎসাঃ
ডুশেন মাসকুলার ডিস্ট্রফি রোগটি একটি জিনগত সমস্যা হওয়ার কারণে এর সঠিক কোন চিকিৎসা এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি। তবে রোগীর রোগ-যন্ত্রণা কিছুটা কম হয় ও রোগ উপসর্গ গুলির কিছুটা উপশম হতে পারে তার জন্য চিকিৎসা করা যেতে পারে। এই কারণে রোগীর ক্ষেত্রে প্রকাশিত লক্ষণের উপর নির্ভর চিকিৎসা করতে হয়।
নিচে কয়েকটি চিকিৎসা পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো যেগুলো প্রয়োজন মত ব্যবহৃত হতে পারেঃ
ফিজিওথেরাপিঃ যেহেতু রোগীর পেশীর দুর্বলতা সৃষ্টি হয় এবং পিশি ক্ষয় হয়ে যায় তাই এক্ষেত্রে পেশির শক্তি বজায় রাখার জন্য ফিজিওথেরাপির সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।
অস্ত্রপচারঃ গুরুতর ক্ষেত্রে যেখানে মেরুদন্ড বাঁকা হয়ে যাওয়ার মত সমস্যা হয় সে ক্ষেত্রে অস্ত্রপচারের প্রয়োজন হতে পারে।
শ্বাস প্রশ্বাসের সহায়ক সরঞ্জামঃ রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা দেখা দিলে সেক্ষেত্রে শ্বাস-প্রশ্বাসের সহায়ক হয় এরূপ কোন পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাঃ যদিও রোগটি দুরারোগ্য পর্যায়ের। কোন চিকিৎসাতেই এখন পর্যন্তটির পরিপূর্ণ আরোগ্য সম্ভব নয়। তবু প্রকাশিত লক্ষণের উপর ভিত্তি করে কষ্টকর উপসর্গ উপশমের জন্য হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা চলতে পারে। এক্ষেত্রে একজন অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা যেতে পারে।
তবে মনে রাখতে হবে ডুশেন মাসকুলার ডিস্ট্রফি রোগটি একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা করতে হবে। এই ব্যাপারে কোন নিউরোমাসকুলার বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করা যেতে পারে।
Duchenne muscular dystrophy হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাঃ
হোমিওপ্যাথি একটি লক্ষণ সাদৃশ্য চিকিৎসাব্যবস্থা অন্যান্য সিস্টেমিক রোগের মত রোগীর ধাতুগত লক্ষণ বংশগত লক্ষণ ও অন্যান্য সমস্ত লক্ষণ এর সমন্বয় লক্ষণ সাদৃশ্য চিকিৎসা করলে নিশ্চয়ই ভালো কিছু আশা করা যায় আরেকটু ভালোভাবে হয়তো বাঁচতে পারে। যেহেতু এটি muscle এর এক ধরনের destruction থেকে রোগটি পরিপুষ্টতা লাভ করে তাই এটির পেছনে মূলত syphilitic myisam এর ভূমিকা অগ্রগণ্য বলে বিবেচনা করা যায়। এবং এই সিফিলিটিক মায়াজম টি সোরিক মায়াজমের সঙ্গে মেলবন্ধন ঘটিয়ে রোগীকে রোগাক্রান্ত করে থাকে।
তাই এই রোগের ক্ষেত্রে রোগীর শারীরিক ও মানসিক সিম্পটমস মিলিয়ে এন্টিসিফিলিটিক ও এন্টিসোরিক চিকিৎসা করতে হবে।
DMD রোগের আনুষঙ্গিক ব্যবস্থাপনাঃ
রোগীকে সুষম খাদ্যের ব্যবস্থা করতে হবে। স্বাভাবিক আলো-বাতাস পূর্ণ বাসস্থানে রোগীকে রাখতে হবে রোগীর সঙ্গে সদা মানবিক আচরণ করতে হবে। তাকে মানসিক বল দিতে হবে ও সহযোগিতামূলক আচরণ করতে হবে। ফিজিওথেরাপীর সাহায্য নেওয়া যেতে পারে তাতে muscle এর কার্যক্ষমতা কিছুটা বৃদ্ধি পায়।
আরো পড়ুনঃ হিরসুটিজম কেন হয়?