দ্রুত ওজন কমানোর উপায়: প্রাকৃতিক সমাধান

0
121

প্রাথমিক আলোচনাঃ দ্রুত ওজন কমানোর উপায় নিয়ে আজকে আলোচনা করব। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা বা অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেলা শুধুমাত্র দৈহিক সুস্থতার ক্ষেত্রেই নয় মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। নিয়মিত শরীর চর্চা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, আদর্শ জীবনযাপন ইত্যাদির মাধ্যমে ধৈর্য ধরে প্রচেষ্টা করে গেলে অবশ্যই একজন স্থূলকায় ব্যক্তি তার ওজন কমাতে পারবেন।

আজকের আর্টিকেলে আমি দ্রুত ওজন কমানোর উপায়, নিয়মিত শরীর চর্চা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, এবং জীবন আচরণ সংশ্লিষ্ট কিছু টিপস নিয়ে আলোচনা করব।

দ্রুত ওজন কমানোর উপায়ঃ

ওজন কমাতে সকালের নাস্তার কৌশলঃ আমাদের সকালের নাস্তাটি অবশ্যই আদর্শ মান এবং সময় বজায় রেখে হতে হবে। সকালের নাস্তাটি ঠিকমত হলে সাধারণত সারাদিন ক্ষুধার প্রবণতাটা একটু কম হয় এবং শরীরের শক্তি বজায় থাকে। এবং সকালের এই নাস্তাটি আমাদের শরীরে বিপাক ক্রিয়াটিকে সচল করে দেয়। তাই অবশ্যই আমাদের প্রতিদিনের সকালের নাস্তাটি একটি নির্দিষ্ট সময়ে সম্পন্ন করার অভ্যাস হবে। প্রতিদিনের এই সময়টিতে যথা সম্ভব ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে এবং যেন কোন তারতম্য না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

দ্রুত ওজন কমানোর উপায়
দ্রুত ওজন কমানোর উপায়

সকালের নাস্তাটি কখন করা উচিত

আমরা অনেকেই সকালের নাস্তাটি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়েই সম্পন্ন করে ফেলি।  ফলে প্রতিদিনের কোন নির্দিষ্ট সময়সূচি অনুসরণ করা হয় না। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে সকালের এই নাস্তাটি যথা সম্ভব নির্দিষ্ট সময়সূচী মেনে হলে তা ওজন কমাতে খুব সাহায্য করে। সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় জানা যাচ্ছে যে আমাদের শরীরে ১৪ ঘণ্টার উপবাসের পর সকালের নাস্তা করলে তা দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করে।

অর্থাৎ পূর্ব দিন রাত্রে যে সময় খাবার খাওয়া হয়েছে পরবর্তী দিন সকালে অন্তত ১৪ ঘণ্টার ব্যবধান রেখে তবেই সকালের নাস্তা কি করতে হবে। যেমন আগের দিন যদি রাত ৮ টার ভেতরে রাতের খাবার খাওয়া হয়ে থাকে তবে পরবর্তী দিন সকাল ১০ টার আশেপাশে নাস্তা করার সময় নির্ধারণ করতে হবে। সাধারণত সূর্যোদয়ের পর এবং সকাল আটটা থেকে নয়টার পূর্বেই এই সকালের নাস্তাটি সেরে নিতে পারলে ভালো হয়। এবং ধারাবাহিকভাবে এই নিয়মটি অনুসরণ করে যেতে হবে।

মনে রাখতে হবে রাত যত গভীর হয় আমাদের শরীরে শর্করা জাতীয় খাবার হজম হওয়ার শক্তি তত কমে আসে। তাই রাত্রের খাবার যথা সম্ভব সন্ধ্যার পর পরই হওয়া ভালো। এক্ষেত্রে আয়ুর্বেদিক খাদ্যাভাস নীতি অনুসরণ করতে পারলে খুব ভালো হয়।

সকালের নাস্তায় কি থাকবে

প্রোটিন জাতীয় খাবারঃ সকালের নাস্তায় মাছ, ডিম, বাদাম, দুধ, দই এই সকল খাবার থাকতে পারে।

ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারঃ বিভিন্ন ফল, সবজি, ওটস ইত্যাদি ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার সকালের খাবারের তালিকায় রাখতে হবে।

স্বাস্থ্যকর চর্বিঃ কিছু চর্বি আছে যেগুলো উদ্ভিদ থেকে পাওয়া যায় যেমন এভোকাডো, বাদাম, এগুলোকে স্বাস্থ্যকর চর্বি বলা হয়ে থাকে। এই সকল স্বাস্থ্যকর চর্বি জাতীয় খাবার সকালের খাবারের তালিকায় রাখতে হবে।

সতর্কতাঃ সকালের নাস্তায় প্রক্রিয়াজাত বিভিন্ন খাবার, ফাস্টফুড, বিভিন্ন ড্রিংকস এবং অতিরিক্ত চিনির ব্যবহার এড়িয়ে চলতে হবে। পর্যাপ্ত জল পান করতে হবে। এর সাথে সাথে অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট সময় নিয়ে শরীর চর্চা করতে হবে।

ওজন কমানোর জন্য আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপসঃ

প্রচুর সবজি ও ফল খেতে হবেঃ প্রচুর পরিমাণে ফলও সবজি এত খাবার খেতে হবে কারণ এগুলোর ভেতরে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। বাদাম, ওটস এই জাতীয় হোল গ্রিন খাবারে প্রচুর পরিমাণে  ফাইবার ও অন্যান্য পুষ্টিগুণ থাকে। বিভিন্ন প্রকারের শুকনো ফল খাওয়া যেতে পারে। এগুলো শরীরের জন্য খুবই উপকারী।

প্রচুর জল পান করতে হবেঃ শরীরের বিপাক ক্রিয়াকে বাড়াতে এবং ক্ষুধার আধিক্য কমাতে নিয়মিত প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে তা আমাদের কিডনিসহ শরীরের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ গুলোকে সুস্থ রাখে।

প্রক্রিয়াজাত খাবার নিয়ন্ত্রণঃ বিভিন্ন প্যাকেটজাত খাবার, ফাস্টফুড, কোল্ড ড্রিংকস ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে লবন, চিনি ও চর্বি থাকে। তাই এই সকল খাবার যথাসম্ভব এড়িয়ে যেতে হবে।

অল্প অল্প করে খাবার খানঃ একসঙ্গে অধিক পরিমাণ আহার করার থেকে অল্প অল্প করে বারে বারে খাবার খেলে তাতে বিপাকক্রিয়াও সচল থাকবে এবং অতিরিক্ত খাওয়া থেকেও বিরত থাকা যাবে। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে বারে বারে খেতে গিয়ে যেন অধিক পরিমাণে খাওয়া না হয়ে যায়।

নিয়মিত শরীর চর্চা করুনঃ বিভিন্ন প্রকারের যোগাসন,  ওজন তোলা ইত্যাদি শরীর চর্চার ভেতর যেগুলো শরীরের জন্য উপযোগী তা নিয়মিত করতে হবে। শরীর চর্চা শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী। নিয়মিত হাটা খুব সুন্দর একটি শরীর চর্চা। নিয়মিত হাটার অভ্যাস করলে শরীর ও মন উভয়ই সুস্থ থাকে।

সবুজ ঘাসের উপর হাঁটাঃ কোন মাঠের সবুজ বনের উপর অথবা যেকোনো স্থানে এই সবুজ ঘাসে ওপর হাঁটা কে ইংরেজিতে Earthing বা Grounding বলে। কিছুক্ষণ সবুজ ঘাসের উপর প্রতিদিন পায়চারি করতে পারলে আমাদের শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত ইলেকট্রন নিঃসরণ হয়ে যায়। ফলে আমরা আরও স্বাস্থ্যকর হতে পারি। ঘাসের উপর হাঁটার কারণে পায়ের তলায় নানা বিন্দুতে চাপ পড়ে যা রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এর ফলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ে ও মন শান্ত হয় এবং মনের একাগ্রতা আসে। সূর্যের আলোতে ঘাসের উপর হাঁটতে পারলে একই সাথে শরীরে ভিটামিন ডি উৎপন্ন হয়ে থাকে যা আমাদের শরীরে হাড়ের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

পর্যাপ্ত ঘুমঃ ঘুমের অভাব এবং অতিরিক্ত ঘুমানো এই দুটিই ওজন বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। তাই এই দুটি পরিস্থিতি সর্বতোভাবে পরিত্যাজ্য। একজন সুস্থ ব্যক্তির ক্ষেত্রে দৈনিক চার থেকে ছয় ঘন্টা ঘুমানোই পর্যাপ্ত।

মানসিক চাপ কমাতে হবেঃ আমরা নানাবিধ কারণে মানসিক চাপ গ্রস্থ থাকতে পারি। তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে এই মানসিক চাপ ক্রমাগত চলতে থাকলে তা শরীর ও মনে উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে তার থেকে শরীর স্থূলকায় হয়ে যায়। মানসিক চাপমুক্ত থাকতে মেডিটেশন, যোগাসন ইত্যাদি বিভিন্ন পদ্ধতির অবলম্বন করা যেতে পারে। যেকোন প্রকারের উচ্চাভিলাষ ত্যাগ করে সহজ-সরল-আদর্শ জীবনযাপন করতে পারলে এবং দীর্ঘদিন সেটির অভ্যাস করে গেলে সাধারণত মন শক্তিশালী থাকে।

ধূমপান মদ্যপান পরিত্যাগঃ ধূমপান ও মধ্যপান থেকে শারীরিক ও মানসিক নানা রোগের সৃষ্টি হয়ে থাকে। এছাড়াও এটি স্থূলকায় হয়ে যেতে সহায়তা করে থাকে।

খাওয়ার পূর্বে পানি পান করুনঃ আহারে পূর্বে পানি পান করলে সেক্ষেত্রে পেটটা খানিকটা পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে এবং অধিক খাওয়া থেকে বিরত রাখে। এটি স্বাস্থ্যরক্ষায় খুবই উপকারী একটি কৌশল।

আহারে ছোট প্লেট এর ব্যবহারঃ আহার করতে তুলনামূলক ছোট প্লেট ব্যবহার করলে তা কম খাবার খেতে সাহায্য করে থাকে।

খাবারের প্রতি মনোযোগঃ খাবার খেতে খেতে মোবাইল ফোন সিনেমা টেলিভিশন এই গুলো দেখা উচিত নয়। এর ফলে নিজের অজান্তেই অধিক আহার করা হয়ে থাকে। আরো নানাবিধ অসুবিধা তৈরি হয়। তাই খাবার খাওয়ার সময় খাবারের দিকেই মনোযোগ রাখতে হবে।

বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিনঃ মনে রাখতে হবে দ্রুত ওজন কমানোর ক্ষেত্রে এমন কোন বিশেষ পদ্ধতি নেই যা সকলের ক্ষেত্রেই কার্যকর। বিভিন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি বা কৌশল এর ভিন্নতা অবশ্যই আছে। কেননা প্রত্যেক ব্যক্তির শারীরিক পরিস্থিতির উপর নির্ভর করেই এই কৌশল গুলো নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। তাই আপনার জন্য উপযুক্ত পদ্ধতি নির্বাচন করতে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, ডায়েটিশিয়ান বা ফিজিশিয়ান এর পরামর্শ গ্রহণ করুন।

শেষ কথাঃ মনে রাখবেন ওজন কমানো একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। রাতারাতি এই ওজন কমানো সম্ভব নয়। ধৈর্য ধরে, নিয়মিত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সঠিক খাদ্যাভ্যাস, শরীর চর্চা ও আদর্শ জীবনযাপনের দ্বারা ক্রমাগত অভ্যাসের দ্বারা ওজন নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যেহেতু আদর্শ ওজন বজায় রাখা শারীরিক সুস্থতা এবং মানসিক সুস্থতা উভয়ের জন্যই অপরিহার্য তাই চলুন সুস্থ জীবন যাপনের জন্য এবং সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য আমরা সঠিক পদ্ধতিতে ওজন কমানোর প্রতি মনোযোগী হই।

আরো পড়ুনঃ থাইরয়েড কমানোর উপায়

Previous articleহোমিওপ্যাথিক লোশন ও মলম প্রস্তুত প্রণালী
Next articleঅনিদ্রা দূর করতে ৭টি টিপস
Dr. Dipankar Mondal
হোমিওপ্যাথিক নীতি অনুযায়ী রোগীর সামগ্রীক লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা দ্বারাই জটিল, কঠিন ও দুরারোগ্য রোগের চিকিৎসা করা সম্ভব। জীবনযাপনের ভুল অভ্যাস থেকে সৃষ্ট রোগ, সংযম ব্যতীত শুধুমাত্র ঔষধ সেবনের দ্বারা প্রতিরোধ বা আরোগ্যের আশা করা বাতুলতা মাত্র।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here