ধুমপান ছাড়ার উপায়ঃ সর্বোচ্চ ৩ সপ্তাহে ধুমপান ছাড়ুন

0
46

প্রাথমিক আলোচনাঃ বর্তমান বিশ্বে ধূমপান মহামারীর আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা সকলেই জানি ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং শারীরিক মানসিক ও আর্থিক ক্ষতি ছাড়া ধূমপানের উপকারিতা বলতে কিছুই নেই। ধূমপান করলে কি কি ক্ষতি হয় এই সকল বিষয় জানা সত্ত্বেও ধূমপান ছেড়ে দেওয়াটা খুবই কষ্টকর হয়। আজকে আমি এমন কিছু টিপস নিয়ে আলোচনা করব যে কৌশল গুলো অবলম্বন করলে খুব সহজেই ধূমপানের মত একটি কঠিন বদভ্যাস কে পরিত্যাগ করা সহজ হবে। 

ধুমপান ছাড়ার উপায়ঃ

১) ধূমপান ছাড়ার উপকারিতা উপলব্ধিঃ ধূমপান যে কতটা ক্ষতিকর আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য এই উপলব্ধিটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই উপলব্ধি তৈরি হওয়ার আগ পর্যন্ত ধূমপান ছাড়া সাধারণত সম্ভব নয়। ধূমপান ছাড়ার ফলে আমরা কত ব্যাপক আকারে শারীরিক ও মানসিকভাবে লাভবান হই এই উপলব্ধি এমন একটি প্রেরণা দেয় যেটি ধূমপান ছাড়ার বিষয়ে আমাদের ভেতরে শক্তি জাগায়। তাই ধূমপানে আসক্তির পেছনে আপনার ট্রিগার কে খুঁজে বের করুন। এবং এই বিষয়ে সচেতন হোন।

 

২) ট্রিগারগুলা সনাক্ত করুনঃ ট্রিগার বলতে এমন পরিস্থিতি গুলোকে বোঝানো হচ্ছে যেগুলো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ধূমপানের দিকে আমাদের নিয়ে যায়। এই ট্রিগার গুলো একেক জন ব্যক্তির জীবনে একেক রকম হয়ে থাকে। কেউ হয়তো মানসিক চাপ থেকে মুক্তির অবলম্বন হিসেবে ধূমপান করে থাকেন। কেউ হয়তো এমন বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে বেশি ঘনিষ্ঠ যারা ধূমপায়ী। তাই তাদের সঙ্গ করতে গিয়ে তাকেও ধূমপানের আসক্তি পেয়ে বসে। অনেক সময় মদ বা এই জাতীয় অন্যান্য আসক্তির সাথে ধূমপান যুক্ত হয়ে ভিন্ন ধরনের পূর্ণতা দেয়। এমনও লোক আছে যারা বলে ধূমপান না করলে তাদের প্রতিদিনের মলত্যাগ ক্লিয়ার হয় না।

ধুমপান ছাড়ার উপায় ছবি
ধুমপান ছাড়ার উপায় ছবি

৩) ধূমপান পরিত্যাগের সময় নির্ধারণঃ এই মুহূর্ত থেকেই আপনি ধূমপান বন্ধ করবেন নাকি নিজেকে প্রস্তুতির জন্য অল্প কিছুদিন সময় দেবেন এটি নির্ধারণ করুন। সেটি হতে পারে এক সপ্তা বা দুই সপ্তাহ। দু’রকমভাবেই সফল হওয়া যেতে পারে। যদি এই মুহূর্ত থেকে ধূমপান পরিত্যাগ করতে পারেন খুবই ভালো। যদি না পারেন তবে নিজেকে প্রস্তুত এর জন্য সহনীয়ভাবে একটি সময় নির্ধারণ করুন। তবে সেটি কোনভাবেই দুই সপ্তাহের বেশি হবে না। এভাবে সময় বেধে চেষ্টা করলে দুই সপ্তাহ এমনকি সর্বোচ্চ তিন সপ্তাহের মধ্যে আগ্রহী কেউ ধুমপান ছাড়তে পারে।

৪) সমর্থনকারী সহযোগীদের প্রভাবঃ নিজেকে ধূমপানমুক্ত করার এই অগ্রযাত্রায় আপনার সহযোগীদের সমর্থন অত্যন্ত প্রেরণাদায়ক। তাই এই সময় এমন সব বন্ধু, পরিবার বা সহকর্মীদের সঙ্গে সময় কাটান যারা আপনাকে ধূমপান পরিত্যাগের উপরে উৎসাহ দেবে। এবং তাদের ইতিবাচক পরামর্শ আপনাকে মোটিভেটেড করবে। প্রয়োজনে অনলাইনে কোন গ্রুপ বা ফোরামে যুক্ত হতে পারেন। অর্থাৎ সঙ্গ করার জন্য এমন গোষ্ঠী নির্বাচন করবেন যারা আপনাকে ধূমপান পরিত্যাগে ইতিবাচক সহায়তা করবে। এমন কেউ যিনি কোন এক সময় ধূমপায় ছিলেন তবে অনেক পূর্বেই ধূমপান ত্যাগ করেছেন তার পরামর্শ মূল্যবান হতে পারে।

৫) মানসিক উদ্বেগ ও চাপ কমানঃ মানসিক উদ্বেগ এবং চাপ পরোক্ষভাবে ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। বিভিন্ন স্ট্রেস রিলিফ কৌশল অবলম্বন করার সাথে সাথে সরল ও আদর্শ জীবনযাপন করুন। ধ্যান বা মেডিটেশন এর মাধ্যমে মনকে একাগ্র ও ব্যস্ত রেখে পজিটিভ শক্তি তৈরি করা যায়। কিছু উপকারী শরীর চর্চার অভ্যাস করা যেতে পারে। 

৬) প্রলোভন এড়িয়ে চলুনঃ যদি কোন ভাবে ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারেন সেটি খুব ভালো কথা। তবে মনে রাখবেন ধূমপান ছাড়ার পরও প্রথম কিছুদিন আপনার সুপ্ত মানসিক অবস্থা আবারও ধূমপানের প্রতি তাড়িত হতে পারে। এই সময় খুব সচেতন থাকতে হবে। মন থেকে ধূমপানের লালসা চিরতরে মুছে ফেলতে হবে। ধূমপানের পরিবর্তে পুস্তক পাঠ, নৈতিকতার অনুশীলন, খেলাধুলা বা এজাতীয় অন্য কোন ভালো অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। মোট কথা “ধূমপান নিষেধ” এমন একটা ভাব মনের অবচেতন স্তরে গেঁথে দিতে হবে।

৭) অগ্রগতি উদযাপন করুনঃ পূর্ব থেকে বিভিন্ন ধাপে আপনি মাইলস্টোন সেট করতে পারেন। অর্থাৎ মনকে একাগ্র রাখতে নিজেকে পুরস্কারের ঘোষণা দিতে পারেন। যেমন যদি আপনি এক সপ্তাহ ধূমপান না করে থাকেন তো কোন বিশেষ অনুষ্ঠান বা বিশেষ কোনো উপহার নিজেকে দেওয়া এরকম ভূমিকা নিতে পারেন। এর ফলে উৎসাহ আরো বেড়ে যাবে। ১ মাস যদি ধূমপান ছেড়ে থাকতে পারেন তবে নিজেকে কোন অন্য এমন সুন্দর পুরষ্কার দিন করুন যেন উৎসাহ আরো বেড়ে যায়।

৮) প্রত্যাহার উপসর্গের জন্য প্রস্তুতিঃ ধূমপান ছাড়ার পর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে কারো কারো ক্ষেত্রে উইথড্রল সিম্পটম দেখা দিতে পারে। যেমন কারো কারো ক্ষেত্রে অনিদ্রা, ক্ষুধাহীনতা, মলত্যাগে অসুবিধা এরকম নানা ধরণের ছোটখাটো শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই ব্যাপারে পূর্ব প্রস্তুতি ও ধারণা থাকলে এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করার সহজ হবে। সিগারেট ছাড়ার পর করণীয় বিষয়গুলো প্রয়োজনে একটি নোটবুকে লিস্ট করে রাখা যেতে পারে এবং নিয়মিত তার অভ্যাস করতে হবে।

৯) আস্থা দৃঢ় রাখুনঃ ধূমপান ছাড়ার এই যাত্রায় কখনো ভুল হয়ে গেলেও আশা হারাবেন না। নিয়মিত অভ্যাস করে যাবেন। ভুলকে সংশোধন করে আবার শুরু করতে হবে। ধূমপান প্রতিরোধ করতে দৃঢ় মনোবল রাখতে হবে।

১০) পেশাদার চিকিৎসকের পরামর্শঃ নিজে নিজে ধূমপান ছাড়া কঠিন হয়ে গেলে সেক্ষেত্রে একজন অভিজ্ঞ পরামর্শকের সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে। বিভিন্ন থেরাপি ও কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এই ব্যাপারে সহায়তা করতে পারেন।

কিছু সংস্থা আছে যারা এই জাতীয় স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক প্রোগ্রাম করে থাকে তাদের সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। ইন্টারনেটে বিভিন্ন গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত হওয়া যেতে পারে। 

শেষ কথাঃ এতক্ষণের আলোচনায় ধূমপানের কুফল ও প্রতিকার এবং ধূমপান ছাড়ার উপায় সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়েছে। এই সকল কৌশল অবলম্বন করলে দ্রুত ধূমপান ছেড়ে দেওয়া সম্ভব হবে। তবে একবার ধূমপান ছেড়ে দিয়ে যেন আবার তাকে অনুমোদন করা না হয় তাই ধূমপান প্রতিরোধের উপায় বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। 

আমরা এতক্ষনের আলোচনা থেকে শিখেছি কিভাবে ধূমপান ছাড়তে হয়। আবারো জোর দিয়ে বলছি ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং ধূমপানের উপকারিতা বলতে কিছুই নেই। অনেক ক্ষেত্রেই ধূমপান সিওপিডি এবং ক্যান্সারের মত নানা রোগের কারণ হয়। তাই ধূমপান ছাড়ার উপায় সম্বন্ধে একজন ধূমপায়ী ব্যক্তির অবশ্যই শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। এবং নিজস্ব চেষ্টা দ্বারা ধূমপানকে ছাড়তে পারলে আমরা সামাজিক, মানসিক, পারিবারিক ও আর্থিক সকল প্রকার ক্ষতি থেকে রক্ষা পাব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here