ব্রেইন স্ট্রোক এর লক্ষণ, কারণ ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা

0
162

আজকের আলোচনা তে আমি ব্রেইন স্ট্রোক এর লক্ষণ, কারণ ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করব। চলুন তবে মূল আলোচনাতে প্রবেশ করা যাক।

ব্রেইন Stroke এর কারণঃ

মস্তিষ্কে রক্ত ​​সরবরাহে বাধার ফলে উদ্ভূত ক্ষতিকর পরিস্থিতিকে ব্রেন স্ট্রোক বলে। এটিকে সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট (CVA)ও বলা হয়।
 ব্রেন Stroke এর প্রধান কারণগুলো হলঃ
১) উচ্চ রক্তচাপ
২) উচ্চ কলেস্টেরল
৩) ডায়াবেটিস।
৪) স্থুলতা
৫) ধুমপান, নেশা এবং অ্যালকোহল।
৬) বংশগত কারণ।

ব্রেন স্ট্রোকের ধরনঃ

কারণ অনুযায়ী ব্রেন স্ট্রোককে যে শ্রেণীবদ্ধ করা হয় তা নিম্নরূপ:
Ischemic Stroke(ইস্কেমিক স্ট্রোক):
মস্তিষ্কের সাথে সংযুক্ত কোন শিরা বা ধমনীতে কোন কারণে ব্লকেজ বা বাধা তৈরি হলে তাকে ইস্কেমিক স্ট্রোক বলে। রক্তনালীতে কোলেস্টেরল জমা হয়ে মস্তিষ্কে রক্ত ​​সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করলে এই স্ট্রোক হয়ে থাকে (Atherosclerosis)। ফলে মস্তিষ্কের সাথে সংযুক্ত শিরা বা ধমনির রক্ত ​​জমাট বাঁধে ও স্ট্রোকের কারণে হয়।
দেখা গেছে স্ট্রোকের একটি বড় অংশ প্রায় ৮৭% স্ট্রোকই হল Ischemic.
ব্রেইন স্ট্রোক ছবি
ব্রেইন স্ট্রোক ছবি

Hemorrhagic strokes (হেমোরেজিক স্ট্রোক(রক্তপাত):

সমস্ত স্ট্রোকের প্রায় ১৩% ই হল Hemorrhagic stroke.  রক্তনালীর দুর্বল প্রাচীর ফেটে রক্তপাত হলে তখন তাকে Hemorrhagic stroke বলে। শিরা বা ধমনির প্রাচীরের এই দুর্বলতা( aneurysm) বা AVM(arteriovenous malformation) জনিত বিকৃতি এর কারণে হতে পারে। হেমোরেজিক স্ট্রোক মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে (intracerebral hemorrhage) বা মস্তিষ্কের আশেপাশে(subarachnoid hemorrhage) হতে পারে।

Transient Ischemic Attack (TIA)ক্ষণস্থায়ী ইস্কেমিক আক্রমণ(TIA):

এটিতে মস্তিষ্কে রক্ত ​​সরবরাহে অস্থায়ী ব্লকেজ বা বাধা তৈরি হয়। এটিকে মিনি-স্ট্রোকও বলা হয়। এটি অদূর ভবিষ্যতে আরও গুরুতর স্ট্রোকের কারণ বা অগ্রদূত হয়ে দাঁড়ায়।
Brain Stem Stroke:
মস্তিস্কের ব্রেইন স্টীম এর জন্যই মস্তিষ্কের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে বেশিরভাগ কার্যকলাপ সম্পন্ন হয়। এটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে, শ্বাস প্রশ্বাস, দৃষ্টি, বাকশক্তি এবং চেতনার মতো ফাংশনগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
Cryptogenic Stroke(ক্রিপ্টোজেনিক স্ট্রোক):
ক্রিপ্টোজেনিক স্ট্রোকের কোন কারণ জানা যায়না।   কোন পরীক্ষা দ্বারাই এর নির্দিষ্ট কারণ চিহ্নিত করা যায়না।

ব্রেইন স্ট্রোক এর লক্ষণঃ

 স্ট্রোক হওয়ার প্রাথমিক লক্ষণগুলি হলঃ
 ১) হঠাৎ দুর্বলতা বা অসাড়তা: একজন স্ট্রোকের রোগী শরীরের একপাশে হঠাৎ দুর্বলতা বা অসাড়তা অনুভব করতে পারে।
সমন্বয়, কথাবার্তা ও বোঝাপড়া: হঠাৎ দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারে, কথাবার্তা, কথা বলা ও অনুভব শক্তি হারাতে পারে। হঠাৎ মারাত্মক দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। গুরুতর মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
খাবার গিলতে সমস্যা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ইত্যাদি নানাবিধ সমস্যা দেখা দিতে পারে।

সেরিব্রাল স্ট্রোক নির্ণয়ঃ

যে সমস্ত প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা দ্বারা সেরিব্রাল স্ট্রোক নির্ণয় করা যায়ঃ
১)  সিটি স্ক্যান।
২) এমআরআই।
৩) আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষা।
৪) রক্ত পরীক্ষা।
৫)  প্রস্রাব পরীক্ষা।

 সেরিব্রাল স্ট্রোকের লক্ষণঃ

 ১) মাথাব্যথা।
 ২) দৃষ্টিশক্তি হ্রাস।
 ৩) কথা বলতে অসুবিধা।
 ৪) কিছু লিখতে অসুবিধা।
 ৫) বমি বমি ভাব।
 ৬) অনিচ্ছাকৃত প্রস্রাব।
 ৭) গিলতে অসুবিধা।
 ৮) দ্বিদর্শন(প্রত্যেকটি বস্তুকে দুটি করে দেখা)।

সেরিব্রাল স্ট্রোক এর হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাঃ

অ্যাকোনাইট ঘুমঃ একোনাইট এর লক্ষণ সাদৃশ্যে ব্যবহৃত হয়। আকস্মিক ও হঠাৎ ভয়াবহ রকমের আক্রমণ, অধিক পিপাসা, মৃত্যুভয় ইত্যাদি লক্ষণে ব্যবহার্য।

ব্যারাইটা কার্বঃ একাঙ্গীর পক্ষাঘাতে যেখানে রক্তস্রাব ঘটেছে সেখানে এই ওষুধটি লক্ষণ সাদৃশ্যে ব্যবহৃত হয়।

ক্যালি ব্রোমঃ হঠাৎ মস্তিষ্কের রক্তনালি ছিঁড়ে রক্তক্ষরণ হয় রোগী অজ্ঞান হয়ে যায়।

ওপিয়ামঃ মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের পর শ্বাস-প্রশ্বাসের বাধা, রোগী শুয়ে পড়ে। রোগী কিছুটা অচেতন হয়ে পড়ে ও চক্ষু অর্ধেক খোলা থাকে।

পিটুইটারিনামঃ মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোকে বহুল ব্যবহৃত ঔষধ। রক্তের চাপ শোষণ করতে সহায়তা করে। উচ্চ রক্তচাপ জনিত কারণে স্ট্রোক।

জিঙ্কাম মেটঃ সেরিব্রাল স্ট্রোকের ক্ষেত্রে ভাল কাজ করে;  ব্রেনের দীর্ঘস্থায়ী অক্ষমতা, মস্তিষ্কের পক্ষাঘাত।

হায়োসিয়ামসঃ অনিচ্ছাকৃত পায়খানা এবং প্রস্রাবের সাথে মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ।

গ্লোনোইনঃ সূর্যালোকে অধিক্ষণ থাকার কারণে ব্রেন স্ট্রোক।

এছাড়াও লক্ষণ সাদৃশ্য যে কোন হোমিওপ্যাথিক ঔষধ আসতে পারে। রোগীর পূর্ণাঙ্গ কেস টেকিং করে তবেই ঔষধ নির্বাচন করতে হবে।

আরো পড়ুনঃ কেন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করবেন?

Previous articleকখন হোমিওপ্যাথি এবং এলোপ্যাথি চিকিৎসা করবেন?
Next articleদাঁতের গোড়ায় পাথর জমেছে? দাঁত স্কেলিং করাবেন?
Dr. Dipankar Mondal
হোমিওপ্যাথিক নীতি অনুযায়ী রোগীর সামগ্রীক লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা দ্বারাই জটিল, কঠিন ও দুরারোগ্য রোগের চিকিৎসা করা সম্ভব। জীবনযাপনের ভুল অভ্যাস থেকে সৃষ্ট রোগ, সংযম ব্যতীত শুধুমাত্র ঔষধ সেবনের দ্বারা প্রতিরোধ বা আরোগ্যের আশা করা বাতুলতা মাত্র।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here