লিভার সিরোসিস লক্ষণ, কারণ, চিকিতসা ও হোমিওপ্যাথি

0
273

প্রাথমিক আলোচনাঃ আজকের আলোচনাতে আমরা ক্রনিক লিভার সিরোসিস বা সিরোসিস অব লিভার রোগটি নিয়ে আলোচনা করব। লিভার সিরোসিস কি? লিভার সিরোসিস এর লক্ষণ? লিভার সিরোসিস এর চিকিৎসা? লিভার সিরোসিস হলে করণীয়? লিভার সিরোসিস থেকে মুক্তির উপায়? লিভার সিরোসিস রোগীর খাবার তালিকা? ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কথা বলব। 

লিভার সিরোসিস কি?

লিভার সিরোসিস হল লিভারের একটি ক্রনিক রোগাবস্থা যেখানে লিভারের সুস্থ টিস্যু গুলোর একটা অংশ বিকৃত বা নষ্ট হয়ে যায় এবং কোষগুলো স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারায়। ফলশ্রুতিতে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং লিভার তার স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারায়। সিরোসিস অব লিভার রোগটি একবার জটিল আকার ধারণ করলে অনেক ক্ষেত্রে লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া এই রোগ আরোগ্য হওয়া  বিরল। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিকল্প চিকিৎসার ব্যবস্থা হিসেবে হোমিওপ্যাথিতে লিভার সিরোসিসের রোগী আরোগ্য হতে দেখা গেছে।

লিভার সিরোসিস ছবি
লিভার সিরোসিস ছবি

রোগের প্রাথমিক অবস্থায় রোগটি সনাক্ত করতে পারলে এবং তা এড়িয়ে চলে আদর্শ জীবনযাপন করতে পারলেই এই রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।

লিভার সিরোসিস কেন হয়?

যে সকল প্রত্যক্ষ কারণ থেকে রোগটি হয়ে থাকে সেই সম্বন্ধে এখন আলোচনা করছি।

১) দীর্ঘস্থায়ী অ্যালকোহল সেবনঃ দীর্ঘমেয়াদি ভাবে অতিরিক্ত পরিমাণে নিয়মিত অ্যালকোহল সেবন করলে সিরোসিস অব লিভার রোগটি হয়ে থাকে। শুধু লিভার সিরোসিস কেন লিভারের নানা প্রকার রোগ তৈরিতে অ্যালকোহল বা মদ্যপান প্রধান ভূমিকা রাখে। তবে এই কারণটি ইউরোপ আমেরিকা এই সকল অঞ্চলের লোকদের ক্ষেত্রেই বেশি প্রযোজ্য। বাংলাদেশ তথা ভারতীয় উপমহাদেশের এই অঞ্চলে সাধারণত হেপাটাইটিস বি এবং ফ্যাটি লিভার থেকেই এই রোগটি বেশি হতে দেখা যায়।

শুধু লিভার সিরোসিস কেন লিভারের নানা প্রকার রোগ তৈরিতে অর্থাৎ অ্যালকোহল বা মদ্যপান প্রধান ভূমিকা রাখে। (মদ্যপান করলে লিভার নষ্ট হয়। ধূমপান করলে ফুসফুস নষ্ট হয়। আর পানের সাথে তামাক জর্দা এসব সেবন করলে পাকস্থলী নষ্ট হয়)

২) ক্রনিক ভাইরাল হেপাটাইটিসঃ হেপাটাইটিস বিশেষ করে হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি এবং হেপাটাইটিস ডি এগুলো যদি ক্রনিক আকারে হয়ে থাকে তবে তা থেকে লিভার সিরোসিস রোগটি হতে পারে। 

৩) নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারঃ স্থুলতা বা বেশি মোটা হয়ে যাওয়ার কারণে বা অথবা অন্য যেকোনো কারণে লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমলে তা থেকে রোগটি হতে পারে। দেখা গেছে ফ্যাটি লিভার রোগে আক্রান্ত রোগীদের প্রায় ৩০ শতাংশ পরবর্তীতে সিরোসিস অব লিভার রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এছাড়াও ডায়াবেটিস অথবা মেটাবোলিক সিনড্রোম থাকলেও রোগটি হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

৪) অটো ইমিউন ডিজিজঃ হেপাটাইটিস, অটো ইমিউন রোগটির ধরণই এমন যে শরীরের অ্যান্টিবডি ভুল ভাবে ক্রিয়া করে নিজেকেই নিজে আক্রমণ করে। এক্ষেত্রেও তাই হয় রোগীর ইমিউন সিস্টেম নিজের লিভার সেলকে নিজেই ধ্বংস করে ফেলে এবং ফলশ্রুতিতে লিভার সিরোসিস এর মত রোগ দেখা দেয়।

৫) জেনেটিক ডিসঅর্ডারঃ কিছু বংশগত রোগ যেমন উইলসন ডিজিজ, হেমোক্রোমাটোসিস ইত্যাদি থেকে লিভার এই রোগটি ডেভলপ করতে পারে।

৬) দীর্ঘমেয়াদি ঔষধজ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াঃ বিশেষ কিছু ঔষধ যা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াযুক্ত এরূপ টক্সিন দীর্ঘদিন যাবত নিয়মিত সেবন করলে লিভারের ক্ষতি হয়ে থাকে। পরিণতিতে লিভার সিরোসিস হতে পারে।

৭) ক্রিপ্টোজেনিক সিরোসিসঃ কিছু কিছু ক্ষেত্রে সিরোসিস অব লিভার রোগের কোনো কারণ পাওয়া যায় না। এই পরিস্থিতিকেই ক্রিপ্টোজেনিক সিরোসিস বলে। রোগের অগ্রগতি রোধ করা বা রোগটি দ্রুত গতিতে বেড়ে যাওয়া থেকে ধীর করার জন্য প্রয়োজন জীবন আচরণ সংশোধন। এক্ষেত্রে রোগটির পেছনে দায়ী কারণটিকে চিহ্নিত করে তার সমাধান করতে হবে। জীবনযাপন এর পরিবর্তন এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

লিভার সিরোসিসের লক্ষণ?

রোগ লক্ষণের প্রকাশ ব্যক্তি বিশেষ ভিন্ন হতে পারে। রোগের প্রাথমিক অবস্থায় কারো কারো ক্ষেত্রে তেমন কোন লক্ষণ প্রকাশ নাও পেতে পারে। তবে রোগটি বৃদ্ধির সাথে সাথে কিছু কমন অসুস্থতার লক্ষণ সকলের ক্ষেত্রেই দেখা দিয়ে থাকে, যেমন-

১) ক্লান্তি ও দুর্বলতাঃ লিভার সিরোসিস রোগে কেউ আক্রান্ত হলে সে ক্রমাগত ক্লান্তি এবং দুর্বলতা অনুভব করে।

২) জন্ডিসঃ রক্তে বিলিরুবিন জমে ত্বক, চোখ, নখ, প্রস্রাব ইত্যাদি হলুদ বর্ণ হয়ে যায়।

৩) ফোলাঃ শরীরে ফোলা ভাব দেখা দেয়। বিশেষ করে পা এবং পেট ফুলে যায়। 

৪) সহজ ক্ষত এবং রক্তপাতঃ সুস্থ লিভার এমন এক ধরনের প্রোটিন উৎপাদন করে যা ব্লাড ক্লাটিং বা রক্ত জমাট বাধতে সাহায্য করে। সিরোসিস অব লিভার রোগটি হলে এই প্রোটিনের উৎপাদন হ্রাস পায় বা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ছোটখাটো ক্ষত থেকে প্রচুর রক্তপাত হয়ে থাকে। এই সকল রোগের ক্ষেত্রে শরীরে সহজেই ক্ষত তৈরির একটা প্রবণতা দেখা দেয়।

৫) চর্মে চুলকানিঃ চর্মের নিচে পিত্ত জমা হওয়ার কারণে চর্মে চুলকানি দেখা দিতে পারে। 

৬) ক্ষুধা হ্রাসঃ রোগীর ক্ষুধা একেবারে কমে যায়। খাওয়ার ইচ্ছা মোটেই থাকে না। 

৭) বমি বমি ভাব এবং বমিঃ রোগীর হজমের সমস্যা দেখা দেয়। তার সাথে বমি বমি ভাব ও বমি হয়ে থাকে। কখনো কখনো রোগীর খাদ্যনালির শিরা গুলো ফুলে যায় এবং তা ছিঁড়ে গিয়ে রক্তক্ষরণ হয়। বমির সঙ্গে এবং পায়খানার সঙ্গে সেই রক্ত মিশে অনেক সময় কালো পায়খানা বা কালো রংয়ের বমি হতে পারে।

৮) বিভ্রান্তি এবং জ্ঞানীয়  সমস্যাঃ সিরোসিস অব লিভার রোগটি খুব বেড়ে গেলে সেই অবস্থায় রোগীর মস্তিষ্কে কিছু অস্বাভাবিকতা দেখা দিতে পারে। এবং কিছু চেতনাগত অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়। দূষিত রক্ত কে পরিষ্কার করা বা টক্সিফাইং এর কাজ করে থাকে লিভার। অসুস্থ লিভার যেহেতু এই কাজ করতে সক্ষম হয় না তাই আমাদের রক্তে টক্সিন বা বিষাক্ততা জমে। এবং একটা পর্যায়ে তা মস্তিষ্ককে আক্রমণ করে। এই পরিস্থিতিতে রোগীর ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। মানসিক বিভ্রান্তি, মনোযোগ দিতে অসুবিধা, এমনকি গুরুতর ক্ষেত্রে রোগী কোমায় পর্যন্ত চলে যেতে পারে। এই পরিস্থিতিকে Hepatic Encephalopathy বলে।

৯) মাকড়সার মত রক্তনালীঃ ত্বকে মাকড়সার মতো রক্তনালীর আকৃতি দেখা যেতে পারে। লিভার সিরোসিস রোগে যে রক্তনালী গুলো লিভারে রক্ত পৌঁছে দেয় সেগুলোতে অধিক রক্তচাপ Portal Hypertension দেখা দেয়। এই চাপের কারণে চর্মের উপরিভাগে অবস্থিত রক্তনালী গুলো মাকড়সার আকৃতিতে দেখা দিতে পারে। একে Spider Angioma বলা হয়।

লিভার সিরোসিস এর চিকিৎসা?

রোগের অন্তর্নিহিত কারণ নির্ণয় করে তার সমাধান করা এবং রোগীর লিভারের ক্ষতি এবং দৃশ্যমান রোগ লক্ষণ এর উপর নজর রেখে চিকিৎসা করা হয়। নিচে লিভার সিরোসিস রোগের চিকিৎসা আলোচনা করা হলো।

১) রোগের কারণ নির্ণয়ঃ রোগের কারণ যদি অ্যালকোহল বা মদ্যপান সম্পর্কিত হয় তবে মদ্যপান সেবন বন্ধ করতে হবে। অতিরিক্ত স্থূলতা বা ডায়াবেটিস থেকে রোগটি হলে জীবানাচরণের পরিবর্তন দ্বারা তা সংশোধন করতে হবে অর্থাৎ রোগের মূল কারণ সংশোধন করতে হবে।

২) রোগের জটিলতা ব্যবস্থাপনাঃ Hepatic Encephalopathy এর মত পরিস্থিতি হলে ঔষধ দ্বারা চিকিৎসা করতে হবে। পেটে অতিরিক্ত পানি জমলে(Ascites) জন্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।

৩) নিয়মিত পর্যবেক্ষণঃ লিভার সিরোসিস এর জন্য নিয়মিত রুটিন মেডিকেল চেকআপ করতে হবে। লিভার ফাংশন এর কার্যকারিতার উপর নজর রাখতে হবে।

৪) লক্ষণ সাদৃশ্যে চিকিৎসাঃ বমি বমি ভাব, Ascites, ত্বকে চুলকানি এসব লক্ষণ বিবেচনায় নিয়ে তাদের উপসমের ব্যবস্থা করতে হবে যাতে রোগীর কষ্ট কম হয়। তার সাথে পুষ্টির ঘাটতি পূরণের জন্য খাদ্য তালিকা সমন্বয় করতে হবে।

লিভার সিরোসিস এর হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাঃ

লিভার সিরোসিস একটি গুরুত্বপূর্ণ প্যাথলজিক্যাল অবস্থা যার জন্য সতর্ক ব্যবস্থাপনা এবং পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন। এর সাথে সাথে রোগীর লক্ষণ সাদৃশ্যে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ প্রয়োগ করতে পারলে রোগীর উপকার হতে পারে। খুব গুরুতর পরিস্থিতি না হলে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় লিভার সিরোসিস এর রোগী আরোগ্য হয়। এক্ষেত্রে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

লিভার সিরোসিস রোগীর খাবারের তালিকাঃ

সিরোসিস অব দ্যা লিভার রোগীর খাবারের তালিকা অবশ্যই সুষম এবং স্বাস্থ্যকর হতে হবে। এখানে এই রোগের জন্য একটি খাদ্য তালিকার সুপারিশ করা হলো।

১) ফল এবং শাকসবজিঃ প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং মিনারেল সমৃদ্ধ বিভিন্ন ফল এবং শাকসবজি সেবনের উপর জোর দিতে হবে। কার্বোহাইড্রেট এবং শর্করা জাতীয় খাবার কমাতে হবে। ভালো ফাইবার এবং পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ ফল বা শস্য বেছে নিতে হবে। সিরোসিস আক্রান্ত কিছু ব্যক্তির নির্দিষ্ট ভিটামিন এবং খনিজ গুলির ঘাটতি থাকতে পারে। এসব বিষয়ের উপর নজরে রাখতে হবে।

২) স্বাস্থ্যকর চর্বি গ্রহণঃ সিরোসিসের রোগীর ক্ষেত্রে চর্বি জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে। তবে কিছু ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর চর্বি হিসেবে বাদাম, এভাকোডা, জলপাই তেল এগুলো সীমিত পরিমাণে ব্যবহার করা যেতে পারে।

৩) পরিমিত প্রোটিন গ্রহণঃ চর্বিহীন মাংস, হাঁস-মুরগি, মাছ, ডিম এবং ধুগ্ধজাত খাবারের মতো উচ্চমানের প্রোটিন খাদ্য মাঝারি পরিমানে গ্রহণ করতে হবে। সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য প্রোটিন খাবার গ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

৪) সোডিয়াম বা লবণ সেবন কমানঃ শরীর ফুলে গেলে সেই রস কমানোর জন্য লবণ গ্রহণ সীমিত করতে হবে। লবণের বেশি ব্যবহার শরীরকে আরো ফুলে যেতে সাহায্য করে।

৫) অ্যালকোহল বর্জনঃ লিভারের আরো অধিক ক্ষতি রোধ করতে অ্যালকোহল বা মদ্যপান থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকতে হবে। এর সাথে সাথে তামাক জাতীয় নেশাসহ সকল প্রকার নেশা দ্রব্য পরিত্যাগ করতে হবে।

৬) অল্প পরিমাণে ঘন ঘন খাবার খানঃ হজম সহজ করার জন্য একসাথে অধিক আহারের পরিবর্তে অল্প পরিমাণে ঘনঘন খাবার খাওয়ান রোগীকে।

৭) তরল গ্রহণে নজরদারিঃ তরল জাতীয় খাবার যেমন পানি, জুস, ফলের রস ইত্যাদি খাওয়ার উপর নজর রাখুন বিশেষ করে যদি ফোলা থাকে।

লিভার সিরোসিস এবং লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশনঃ

লিভার রোগের একেবারে শেষ পর্যায়ে যখন এটি আর কার্যকর ভাবে কাজ করতে পারে না তখন লিভার প্রতিস্থাপন জরুরি হয়ে পড়ে। বেশ কয়েকটি কারণে লিভার প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হতে পারে।

১) লিভার ফেইলিওরঃ যখন সিরোসিস এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছে যেখানে লিভার তার স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারে না বা অকার্যকর হয়ে পড়ে তখন লিভার প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয়। Hepatic encephalopathy, Ascites, Variceal bleeding এবং hepatorenal syndrome ইত্যাদি পরিস্থিতি গুরুতর হলে লিভার প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হতে পারে।

২) চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা সত্ত্বেও স্বাস্থ্যের অবনতিঃ সর্বোত্তম চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তন সত্ত্বেও যদি একজন ব্যক্তির স্বাস্থ্য ক্রমাগত হ্রাস পেতে থাকে তবে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট কার্যকর বিকল্প হতে পারে। 

৩) লিভার ক্যান্সারের বিকাশঃ লিভার সিরোসিস লিভার ক্যান্সারের(Hepatocellular carcinoma) ঝুঁকি বাড়ায়। কিছু ক্ষেত্রে ক্যান্সার প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করা হলে এবং প্রয়োজনীয় মনে হলে লিভার প্রতিস্থাপন করার প্রয়োজন হতে পারে।

এখন আমরা সিরোসিস অব লিভার রোগ সংক্রান্ত আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন-উত্তর জানব।

লিভার সিরোসিস সংক্রান্ত প্রশ্নোত্তরঃ 

প্রশ্ন ১) লিভার সিরোসিস কি ভালো হয়?

উত্তরঃ রোগটি নির্বাচিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত লিভারের যে ক্ষতিটা হয়েছে সেটি কাটিয়ে ওঠা অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না। তবে সঠিক চিকিৎসা হলে রোগী ভালোর দিকে যাবে। বিশেষত সঠিক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা হলে এবং রোগী স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন মেনে চললে রোগটি ক্রমাগত ভালোর দিকে যাবে এবং সুযোগ থাকলে রোগটি আরোগ্য হবে।

প্রশ্ন ২) লিভার সিরোসিস রোগী কত দিন বাঁচে?

উত্তরঃ সিরোসিসে আক্রান্ত ব্যক্তির আয়ু কম বা বেশি হয় বিভিন্ন কারণের উপর নির্ভর করে। যেমন সিরোসিসের কারণ, লিভারের ক্ষতির পরিমাণ, রোগীর সামগ্রিক শারীরিক জটিলতা ইত্যাদি বিষয়ের উপর নির্ভর করে রোগীর বেঁচে থাকার সময়টা।

প্রশ্ন ৩) সঠিক সময়ে রোগীর চিকিৎসা না হলে কি কি ক্ষতি হতে পারে? 

উত্তরঃ লিভার সিরোসিস এ রোগীর সময়মতো চিকিৎসা না হলে পরবর্তীতে তার কিডনি আক্রান্ত হতে পারে। খাদ্যনালির শিরা ফুলে যেতে পারে এবং তা ছিড়ে গিয়ে পেটের ভেতর রক্তক্ষরণ হতে পারে। ফলে রক্ত বমি বা রক্ত পায়খানা দেখা দিতে পারে। এই লিভার সিরোসিস থেকে লিভার ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে।

প্রশ্ন ৪) লিভার ট্রান্সপ্লান্ট বাংলাদেশ হয় কি? খরচ কেমন?

হ্যাঁ লিভার ট্রান্সপ্লান্ট বর্তমানে বাংলাদেশের সম্ভব। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করতে হলে ইউরোপে প্রায় ২ কোটি টাকা খরচ হবে। টাকার এই অংকটা ভারতে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ লক্ষ এর কাছাকাছি। আর বাংলাদেশে লিভার ট্রান্সপ্লান্টের খরচ প্রায় ২০ থেকে ৩০ লক্ষ টাকার মতো হবে।

আপনি জানেন কি? ক্যান্সার, কিডনী, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড, জন্মগত হৃদরোগ এবং থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের আর্থিক সহায়তার জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে আবেদন করতে পারেন।
বাংলাদেশ সরকারের কাছে আবেদন করতে আবেদন ফর্ম পুরন করুন।

আরো পড়ুনঃ নাকের হাড় বাঁকা কারণ, চিকিৎসা এবং ব্যবস্থাপনা

Previous articleব্রেন স্ট্রোক এর লক্ষণ? ব্রেন স্ট্রোক হলে করনীয়?
Next articleহাইড্রোনেফ্রোসিস হোমিও চিকিৎসায় ভালো হয়|
Dr. Dipankar Mondal
হোমিওপ্যাথিক নীতি অনুযায়ী রোগীর সামগ্রীক লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা দ্বারাই জটিল, কঠিন ও দুরারোগ্য রোগের চিকিৎসা করা সম্ভব। জীবনযাপনের ভুল অভ্যাস থেকে সৃষ্ট রোগ, সংযম ব্যতীত শুধুমাত্র ঔষধ সেবনের দ্বারা প্রতিরোধ বা আরোগ্যের আশা করা বাতুলতা মাত্র।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here