শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৩৮ অপরাহ্ন

৩০ দিন শরীর চর্চা চ্যালেঞ্জ ১৪ তম দিনের অভিজ্ঞতা

ডা. দীপংকর মন্ডল
  • আপডেট সময়ঃ সোমবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৫
  • ১২৫ বার দেখা হয়েছে
শরীর চর্চা চ্যালেঞ্জ ১৪
শরীর চর্চা চ্যালেঞ্জ ১৪

৩০ দিন শরীর চর্চা চ্যালেঞ্জ ১৪ তম দিনের অভিজ্ঞতা লিখছি সকলের জন্য শুভকামনা জানিয়ে। আজকের প্র্যাকটিস কিছুটা ব্যতিক্রমভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ব্যতিক্রমটা হলো এই যে প্রত্যেকদিন আমি সকালবেলায় শরীরচর্চা করে থাকি। কিন্তু আজকে ব্যক্তিগত কারণবশত সকালবেলায় শরীর চর্চা করা সম্ভব হয়নি। তখন ভেবেছিলাম দুপুরের দিকে করবো। কিন্তু দুপুরেও ব্যস্ততা বসত যখন এক্সারসাইজ করা হলো না তখন ভেবেছিলাম আজ হয়তো এক্সারসাইজ প্রাকটিস করা হবে না। কিন্তু সন্ধ্যা ৭ঃ৩০ এর পর হঠাৎ কিছুটা সময় পেয়ে ভাবলাম এখনই প্র্যাকটিস সেরে নেওয়া যাক।

সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিট থেকে শুরু করে রাত ৮টা বেজে ৫ মিনিট পর্যন্ত মোট ২০ মিনিট এক্সারসাইজ প্র্যাকটিস করলাম। তখনই মনে প্রশ্ন আসলো আসলে ব্যায়াম করার জন্য উপযুক্ত সময় দিনের ভেতর কখন? এই প্রশ্নের উত্তর জানাবো শেষে।

আজকের ফিটনেস রুটিনে যে শরীরচর্চা গুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল সেগুলো হলো পুশ-আপস, লাঞ্জেস এবং সিট-আপস। আর একদম শুরুতে ওয়ার্ম আপ তো ছিলই।

পুশ আপস কিভাবে করতে হবে?

পায়ের গোড়ালি থেকে মাথা পর্যন্ত শরীর সোজা করে, মাটিতে হাতের তালু স্পর্শ করে, বডি পজিশন নিতে হবে। এবার ধীরে ধীরে দুই হাতের তালুর উপর ভর রেখে নিচে নামতে হবে। একদম নিচে নামার পর বুক মাটি স্পর্শ করার পূর্বেই আবার আগের স্থানে ধীরে ধীরে ফিরে যেতে হবে। প্রত্যেক বার প্র্যাকটিস এর সময় যখন নিচে নামতে হবে তখন গভীরভাবে শ্বাস নিয়ে নিচে নামতে হবে। আবার নিচ থেকে ফিরে এসে শ্বাস ছেড়ে দিতে হবে।

আমি প্রত্যেকটি সেটে ৫টি করে সর্বমোট ৫ সেট পুশ আপস করলাম আজ।

পুশ আপের উপকারিতাঃ

এই প্র্যাকটিসটি বাহু, বুক ও আমাদের কোর পেশির শক্তি বৃদ্ধি করে থাকে। এর সাথে সাথে ট্রাইসেপস এবং পেক্টোরাল পেশীও শক্তিশালী হয় নিয়মিত এই প্র্যাকটিসটি অনুশীলন করার ফলে।

লাঞ্জেস কিভাবে করতে হবে?

সর্বপ্রথম ডান পা সামনের দিকে এগিয়ে দিয়ে এবং বাম পায়ের আঙ্গুলের তলা মাটিতে স্পর্শ করে পা যতটা সম্ভব পেছন দিকে নিতে হবে। পিছনের পায়ের গোড়ালি উপরে থাকবে এবং এই অবস্থায় সমস্ত শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। এই অবস্থায় ডান পায়ের হাঁটু ভাঁজ করে প্রায় ৯০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে কোন সৃষ্টি হবে। এবং বাম পাটা সম্পূর্ণ নিচু হবে। হাঁটু মাটিতে স্পর্শ করবে।

প্রত্যেক পায়ে ১০ টি করে সর্বমোট ৩ সেট প্র্যাকটিস করলাম আজ।

লাঞ্জেস এর উপকারিতাঃ

লাঞ্জেস প্র্যাকটিস নিয়মিত অনুশীলন এর ফলে কোয়াড্রিসেপস, হ্যামস্ট্রিং ও গ্লুটস পায়ের এই প্রধান তিনটি পেশী একসাথে ক্রিয়াশীল হওয়ার ফলে পায়ের শক্তি ও স্ট্যামিনা বৃদ্ধি পায়। হাটার গতি বৃদ্ধি পায় এবং সিঁড়ি ভেঙে ওঠার ক্ষেত্রেও স্বচ্ছন্দতা বাড়ে। এই প্র্যাকটিসটি নিয়মিত অনুসরণ করলে পায়ের গঠন এবং মবিলিটি দুটি ক্ষেত্রেই উন্নতি হয়।

সিট আপস কিভাবে করতে হবে?

সাধারণত মাদুরের উপর বা ফ্লোরে উপুড় হয়ে শুয়ে এই প্র্যাকটিসটি করতে হবে। একদম প্রথমে হাঁটু ভাঁজ করে পায়ের তলাটা মাটিতে রাখতে হবে। দুই হাত দুইপাশের কানের কাছে রাখতে হবে। এইরকম অবস্থায় পেটের পেশীকে ব্যবহার করে উঠে বসার ভঙ্গিতে প্র্যাকটিস করতে করতে উঠে বসতে হবে। এইভাবে পর্যায়ক্রমে কয়েকবার করে প্র্যাকটিস করতে হবে। প্র্যাকটিসের ক্ষেত্রে প্রত্যেকবার নামার সময় শ্বাস নিতে হবে এবং ওঠার সময় শ্বাস ত্যাগ করতে হবে। যতদূর সম্ভব প্রাকটিসটি পিঠ না বাঁকিয়ে করার চেষ্টা করতে হবে। তবে প্রথম দিকে তাড়াহুড়ো না করে ধীরে ধীরে প্র্যাকটিস করাই ভালো। কেননা প্রথম দিকে এই প্র্যাকটিসটি হয়তো যথাযথ হবেনা। কিন্তু নিয়মিত অভ্যাস করে গেলে ধীরে ধীরে নিশ্চয়ই প্র্যাকটিস উন্নত হবে।

প্রত্যেক প্র্যাকটিসে ৫টি করে মোট ৩ সেট অনুশীলন করলাম।

সিট আপস এর উপকারিতাঃ

এই ব্যায়ামটির নিয়মিত অনুশীলনে পেটের পেশী শক্তিশালী হয়। রেক্টাস অ্যাবডোমিনিস ও অবলিক পেশীর ক্রিয়াক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। কোর স্ট্যাবিলিটি বৃদ্ধি পায়। ওঠা-বসা বা ভার উত্তোলন এর ক্ষেত্রে কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

৩০ দিন শরীর চর্চা চ্যালেঞ্জ ১৪ তম দিনের অভিজ্ঞতাঃ শরীর যথেষ্ট ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিল। তবে গত সপ্তাহের এই দিন থেকে আজকের প্রাকটিস আরো ভালো হয়েছিল আমার কাছে মনে হল। প্র্যাকটিস করতে পেরে ভালো লাগছিল। কেননা প্র্যাকটিস শুরু করার কিছুক্ষণ আগেও ভেবেছিলাম আজকে হয়তো প্র্যাকটিস অফ যাবে। এটা ভেবে মন কিছুটা খারাপ হয়েছিল। যাইহোক এখন প্র্যাকটিস করতে পেতে ভালো লাগছে।

ব্যায়াম করার জন্য উপযুক্ত সময় দিনের ভেতর কখন?

সাধারণত একজন ব্যক্তির লক্ষ্য এবং শরীর চর্চার রুটিন অনুযায়ী ব্যায়াম করার উপযুক্ত সময় নির্ভর করে।

সকালের ব্যায়াম (৫-৯টা)
✔️ উপকারিতাঃ
খালি পেটে এক্সারসাইজ করলে ফ্যাট বার্ন বেশি হয়ে থাকে।
সকাল বেলার আবহাওয়া যথাসম্ভব প্রাকৃতিক থাকে এবং তাতে দূষণ কম থাকে।
সকালে শরীর চর্চা প্র্যাকটিস করলে সারাদিন এনার্জিটিক ফিল হয়।

✖️ সতর্কতাঃ
এক্সারসাইজ শুরু করার আগে আগে অবশ্যই ভালোভাবে ওয়ার্ম আপ করে নিতে হবে। এর ফলে জয়েন্টের আড়ষ্টতা দূর হবে এবং শরীর চর্চার জন্য শরীর উপযোগী হবে।

দুপুরের ব্যায়াম (১১টা-২টা)
✔️ উপকারিতাঃ
এই সময় পেশীর কর্মক্ষমতা যথাসম্ভব বেশি থাকে।
খাওয়ার আগে প্র্যাকটিস করলে ওজন নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়।

✖️ সতর্কতাঃ
এই সময়ে অত্যাধিক গরমে শরীরচর্চা প্র্যাকটিস করলে পানি শূন্যতা ঘটতে পারে।
এই সময় সাধারণত অফিস টাইম বা কর্ম সময় থাকে।

বিকাল/সন্ধ্যার ব্যায়াম (৪-৮টা)
✔️ উপকারিতাঃ
এই সময় পেশীর শক্তি সব থেকে বেশি থাকে।
এসময় প্র্যাকটিসে মানসিক চাপ কম হয়।

✖️ সতর্কতাঃ
তবে এই সময় প্র্যাকটিস করলে রাত্রে ঘুমের সমস্যা হতে পারে।

বিশেষ টিপসঃ

ওজন কমাতে চাইলে সকালের দিকে হালকা প্রোটিন (ডিম/কলা) খেয়ে নিয়ে তারপর ব্যায়াম শুরু করা ভালো। উচ্চ রক্তচাপ থাকলে ভারী ব্যায়াম এড়িয়ে যাওয়াই উচিত। রাত ৯ টার পর ভারী ব্যায়াম না করাই ভালো কেননা এর ফলে রাত্রে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে।

আজকে এই পর্যন্ত। আগামী দিনের প্র্যাকটিস এর আপডেট জানাব।

আগের পর্বঃ ৩০ দিন শরীর চর্চা চ্যালেঞ্জ ১৩ তম দিনের অভিজ্ঞতা

ডা. দীপংকর মন্ডল।
রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথ।
১৪.০৪.২০২৫

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুনঃ

এই ক্যাটাগরির আরো পোষ্টঃ
সর্বসত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com