৩০ দিন শরীর চর্চা চ্যালেঞ্জ এর আজকে দ্বিতীয় দিন। আজকে ভোর ছয়টায় ঘুম থেকে উঠেছিলাম। তারপর পরিছন্নতা পর্ব শেষ করে প্রাত্যহিক নিত্যকর্ম সারতে সারতে প্রায় এক ঘন্টা ২০ মিনিটের মত সময় লেগে গেছে। যখন শরীর চর্চা প্র্যাকটিস শুরু করতে গেছি তখন ঘড়িতে ৭টা বেজে ২৫ মিনিট।
যথারীতি ওয়ার্ম আপ দিয়ে শুরু করলাম। আজকে সোমবার। রুটিনের সাথে মিল রেখে প্র্যাকটিস করার চেষ্টা করেছি। তবে প্রথম প্রথম রুটিনের সঙ্গে সম্পূর্ণ মেলাতে পারছি না। যাইহোক যতটা সম্ভব আমি চেষ্টা করছি। ওয়ার্ম আপ এর ক্ষেত্রে Jumping jacks, High knees, Butt kick এই তিনটি দিয়ে শুরু করলাম। ওয়ার্ম আপ শেষ হলে মূল প্রাকটিস শুরু করলাম। আজকে শুধুমাত্র পুশ আপস প্র্যাকটিস করতে পেরেছি। এই এতোটুকু প্র্যাকটিস করতে করতেই প্রায় ২৫ মিনিট পার হয়ে গেছে।
তবে এই প্র্যাকটিসগুলো যেহেতু আমি মোবাইল দেখে দেখে শিখছি তাই এক্সারসাইজের ফাঁকে ফাঁকে শেখার জন্য কিছুটা সময় লেগেছে। সাধারণত এক একটি প্র্যাকটিস করার ফাঁকে যে বিশ্রামের সময়টুকু থাকে সেই সময়ের ভেতরেই আমি শিখে নিয়েছি। ৭টা বেজে ২৫ মিনিট থেকে আরম্ভ করে ৭টা বেজে ৫৫ মিনিট পর্যন্ত মোট ৩০ মিনিট আজকের প্র্যাকটিস চর্চা করেছি।
আমি যেটুকু জেনেছি সেই অনুযায়ী পুশ আপ দেওয়ার সঠিক নিয়ম এখানে তুলে ধরছি।
পুশ আপ একটি অতি পরিচিত সরঞ্জামবিহীন শরীর চর্চা। সাধারণত বুক ডাউন নামেই এই শরীর চর্চাটি অধিক পরিচিত। আগে এক সময় এটিকে ‘ফ্লোর ডিপ’ নামেও ডাকা হতো। শরীর চর্চাটি করতে প্রন পজিশন বা উপুড় হয়ে শুয়ে থাকা অবস্থায় দুই হাতের উপর সম্পূর্ণ ভর রেখে ওঠা নামা করতে হয়। বাহু, বুক এবং দুই পাশের কাঁধের পেশিই মূলত এই শরীর চর্চায় বেশি ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও ডেলটয়েড, এবডোমিনাল ইত্যাদি মাসেলও কমবেশি ব্যবহৃত হয়। পুশ আপ দেওয়ার সঠিক নিয়ম গুলো এখন ধারাবাহিকভাবে আমি তুলে ধরছি।
১) বডি পজিশন ঠিক রাখাঃ পুশ আপের সময় যেন শরীরের অবস্থান সঠিক ভাবে থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পুশ আপের সঠিক বডি পজিশন হলো- বুক পেট এবং পা স্ট্রেইট বা একই সরলরেখায় থাকবে।
২) হাতের অবস্থান ঠিক করাঃ হাতের পজিশন হবে ঠিক কাঁধ বরাবর সোজা নিচে। হাতটি দুই দিকে খুব বেশি পরিমাণ প্রসারিত রাখা যাবে না আবার দুইটি হাত খুব কাছাকাছিও রাখা যাবে না। বিভিন্ন ধরনের পুশ আপ এর জন্য হাতের দূরত্বের বিভিন্নতা দেখা যায় তবে সাধারণত কাঁধের চেয়ে সামান্য চওড়া করে হাত রাখলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
৩) শ্বাস প্রশ্বাসঃ পুশ আপ এর সময় শ্বাস-প্রশ্বাস এর নিয়মটি অবশ্যই ফলো করা উচিত নতুবা সঠিক ফলাফল পাওয়া যাবে না। আর তাছাড়া যে কোন ব্যায়ামের ক্ষেত্রেই শ্বাস-প্রশ্বাসের নিয়ম সঠিক না হলে অধিক্ষণ ধরে ব্যায়াম করাও যায় না। পুশ আপ এর ক্ষেত্রে শ্বাস নেওয়ার নিয়ম হলো, আমরা যখন পুশ আপ শুরু করব ঠিক তখন পেট ভরে দম নিতে হবে। অর্থাৎ যেভাবে আমরা পেট ভরে দম নিয়ে পানির নিচে ডুব দেই সেই রকম। যখন বডি স্টেইট অবস্থায় আছে তখন সম্পূর্ণ শ্বাস নিয়ে নিচে যেতে হবে। আবার নিচ থেকে উঠে যখন শরীর আবার স্টেইট হবে তখন শ্বাস ছেড়ে দিতে হবে। আবার নতুন করে শ্বাস নিয়ে নিচে যেতে হবে এবং উপরে উঠে এসে পুনরায় শ্বাস ছেড়ে দিতে হবে।
৪) ফুল রেঞ্জ অফ মোশনঃ এর অর্থ হল কখনোই অর্ধেক বা অপূর্ণভাবে পুশ আপ করা যাবে না। স্ট্রেইট অবস্থা থেকে শরীরকে সম্পূর্ণ ভূমির কাছে নিয়ে যেতে হবে আবার স্ট্রেইট হয়ে সর্বোচ্চ দূরত্বে ফিরে যেতে হবে। খন্ডিতভাবে বা শরীর সম্পূর্ণ নিচু না করে খানিকটা নিচু করে আবার ফিরে আসা এরকম করা যাবে না।
৫) শোল্ডার ব্লেডের মুভমেন্টঃ পুশ আপ শুরু করার সময় আমাদের কাঁধের অবস্থান সম্পূর্ণ শক্ত এবং স্ট্রেইট হতে হবে। অর্থাৎ শরীর উঠা নামার সাথে সাথে কাঁধের অবস্থানটা নড়বড়ে হবে না। শরীরকে নিচে নামানোর সময় কাঁধের অবস্থান যেমন শক্ত থাকবে ঠিক ফিরে আসার পরেও একই রকম শক্ত থাকবে।
আমাদের শরীরের অনেকগুলো মাসেল একসঙ্গে কাজ করায় পুশ আপ এই এক্সারসাইজটি খুবই কার্যকরী এবং উপকারী একটি ব্যায়াম আমাদের শরীরের জন্য। তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে অধিক সংখ্যায় পুশ আপ করলেই যে সেটি খুব কার্যকরী হবে তা নয়। বরং পুশ আপ এর গুণমান এর দিকে নজর রাখতে হবে। কোয়ান্টিটি থেকে কোয়ালিটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সংখ্যায় অধিক পুশ আপ না করে বরং অল্পসংখ্যক হলেও যেন শরীরের অবস্থান, শ্বাস-প্রশ্বাস এসব সঠিক থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
শরীর চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখার প্রচেষ্টা সফল হয়েছে বলে আনন্দিত হলাম। এক্সারসাইজ শুরুর সময় দুই গ্লাস পানি পান করেছিলাম এবং এক্সারসাইজ শেষ করে দুই গ্লাস পানি পান করলাম। এক্সারসাইজ শেষে শরীর ঘেমে গিয়েছিল এবং ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। কিছুটা সময় শবাশন এ বিশ্রাম নিয়েছিলাম। আগামী দিন আবার এইভাবে এক্সারসাইজ শুরু করার আশা রেখে আজকের মত প্রাকটিস শেষ করলাম।
৩০ দিন শরীর চর্চা চ্যালেঞ্জ এর ২য় দিনের আপডেট আজকে এ পর্যন্তই। সবার জন্য শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা রইলো। আগামী দিন আবার কথা হবে।
ডা. দীপংকর মন্ডল।
রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথ।
৩১.০৩.২০২৫