সুখাসনের উপকারিতা নিয়ে আজকের এই পোষ্ট। সংস্কৃত ‘সুখ’ শব্দের অর্থ ‘আরাম’। আর সংস্কৃত তে আসন বলতে বোঝায় ভঙ্গিমা। অর্থাৎ সুখাসন বলতে বোঝায় ‘আরামের ভঙ্গিমা’। এটি যোগব্যায়াম অনুশীলনের প্রথম দিকের একটি আসনের নাম। সুখাসনকে যোগের অনুশীলন বা ধ্যানচর্চার মূল ভিত্তি বলা যেতে পারে। আজকের আলোচনাতে আমরা জানবো সুখাসন কি? সুখাসন অনুশীলনের সঠিক পদ্ধতি, সুখাসন ব্যায়ামের উপকারিতা এবং কিছু সতর্কতা বিষয়ে আলোচনা করব। অবশেষে রয়েছে প্রশ্নোত্তর পর্ব। তাহলে চলুন মূল আলোচনাতে প্রবেশ করা যাক।
সুখাসন হলো এক প্রকার যোগাসন অনুশীলন প্রক্রিয়া যেখানে পা দুটো ক্রস করে মেরুদন্ড সোজা রেখে একটা নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে ধ্যানের ভঙ্গিমায় বসে থাকতে হয়। এটি অনেকটা পদ্মাসন অনুশীলন এর মত। তবে যদি কারো পদ্মাসন করতে অসুবিধা থাকে তারা পদ্মাসন এর বিকল্প হিসেবে সুখাসন এর অভ্যাস করতে পারেন।
প্রস্তুতিঃ প্রথমেই শরীর চর্চা প্র্যাকটিসের জন্য একটি সমতল স্থান নির্বাচন করতে হবে। সেখানে ইয়োগা ম্যাট বিছিয়ে পা দুটি সামনের দিকে সোজা করে রেখে বসতে হবে।
আসনের ধাপঃ আসনটি প্র্যাকটিসের সময় ডান পায়ের গোড়ালি টি বাম পায়ের উরুর নিচে রাখতে হবে এবং সেই সঙ্গে সঙ্গে বাঁ পায়ের গোড়ালিকে ডান পায়ের উরুর নিচে রাখতে হবে। হাঁটুটি মাটির কাছ বরাবর থাকবে। পিঠটি সোজা করে টান টান হয়ে বসতে হবে। দুটি হাতকে হাঁটু বা ঊরুর উপরে রাখতে হবে। এখন চোখ বন্ধ করে করতে হবে এবং নাক দিয়ে স্বাভাবিকভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে হবে।
সময়ঃ
প্রথমদিকে দুই থেকে চার মিনিট প্র্যাকটিস দিয়ে শুরু করা যেতে পারে। পরবর্তীতে ভালোমতো অভ্যাস হয়ে গেলে তখন চাইলে সময় বাড়িয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর্যন্তও করা যেতে পারে।
✅ মানসিক প্রশান্তিঃ এই আসনটি ধ্যান এবং প্রাণায়ামের জন্য খুব কাজে দেয়। শরীর ও মনকে স্থির করে। এটি মানুষের মনের উপর থেকে চাপ কমায়।
✅ মেরুদণ্ড শক্তিশালী করেঃ আসনটিতে যেহেতু পিঠ সোজা রাখার অভ্যাস করতে হয় তাই এটি মেরুদণ্ডকে শক্তিশালী করে।
✅ হিপ ও গোড়ালির নমনীয়তা বাড়ায়ঃ আসনটিকে নিয়মিত প্র্যাকটিস করলে জয়েন্টের জড়তা ও আড়ষ্টতা কমায়।
✅ শ্বাস-প্রশ্বাসের উন্নতিঃ এই আসনটি নিয়মিত অভ্যাসের ফলে আমাদের ফুসফুসের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। আমাদের ফুসফু সুস্থ থাকে ও নানা ধরনের রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্ত থাকে।
✅ সকলের জন্য উপযোগীঃ বাচ্চা থেকে বয়স্ক যেকোনো ব্যক্তির জন্যই এই আসনটি আদর্শ। যে কেউই এই আসনটি প্র্যাকটিস করতে পারে।
কিছু সতর্কতাঃ প্রাকটিসটি করার সময় যদি কখনো হাঁটু বা কোমরে ব্যথা করে তাহলে হাঁটুর নিচে তোয়ালে বা এই জাতীয় নরম কোন কাপড় রেখে বসা যেতে পারে।
প্র্যাকটিস করার সময় পায়ে অস্বস্তির অনুভব হলে বা অসাড় অবশ ভাব লাগলে তখন পা পরিবর্তন করে আসানটি প্র্যাকটিস করতে হবে।
গর্ভবতী স্ত্রীলোকের ক্ষেত্রে যেকোনো প্রকারেরই শরীরচর্চা অনুশীলনের ক্ষেত্রে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
প্রশ্নোত্তর পর্বঃ
হাঁটু ও পা নিতম্বের নিচের দিকে রাখতে হবে। হাটুর নিচে ইয়োগা ব্লক রাখা যেতে পারে এর ফলে হাঁটু মাটির কাছাকাছি চলে আসবে এবং পায়ে ব্যথা লাগবে না।
একদম প্রথম দিকে যারা নতুন প্র্যাকটিস শুরু করেছেন তারা দুই থেকে তিন মিনিট দিয়ে শুরু করতে পারেন। পরবর্তীতে আস্তে আস্তে তা বাড়িয়ে দশ মিনিট, পনের মিনিট বা কুড়ি মিনিট পর্যন্ত করা যেতে পারে।
শেষ কথাঃ সুখাসনকে যোগাসন অনুশীলনের একদম প্রাথমিক পাঠ বলা যেতে পারে। ব্যাকরণ শিখতে গেলে যেমন একদম প্রথমে স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণ শিখতে হয়। তেমনি যোগাসনের অনুশীলন করতে গেলে একদম প্রাথমিক স্তরে যে সকল আসন প্র্যাকটিস করতে হয় তার ভেতরে সবাসন, সুখাসন, বৃক্ষাসন ইত্যাদি অন্যতম। নিয়মিত শরীর চর্চার ফলে আমরা শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা লাভ করতে পারি এবং তার ফলশ্রুতিতে জগৎ এবং মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারি।
আরো পড়ুনঃ ৩০ দিন শরীরচর্চা চ্যালেঞ্জ ৫ম দিনের অভিজ্ঞতা
ডা. দীপংকর মন্ডল।
রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথ।
০৮.০৪.২০২৫