স্তনে ব্যাথা হলে করণীয়ঃ স্তন প্রদাহের হোমিও চিকিৎসা

0
315

স্ত্রী লোকের স্তনে ব্যাথা হলে করণীয় বিষয় সম্বন্ধে জানার সঙ্গে সঙ্গে আজকের আলোচনাতে আরও আমরা জানবো স্তন প্রদাহ কি? স্তনে প্রদাহ হওয়ার কারণ কি? স্তন প্রদাহের লক্ষণ? স্তন প্রদাহের জটিলতা? স্তন প্রদাহ প্রতিরোধের উপায়? স্তন প্রদাহের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা? ইত্যাদি বিষয়ে। এই সকল বিষয়গুলো সম্বন্ধে পূর্ব ধারনা থাকলে আমরা বিপর্যয়ের সময় সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সক্ষম হব।

স্তনে ব্যাথা হলে করণীয় বিষয় গুলো সম্বন্ধে আলোচনার শুরুতেই চলুন জেনে নেই স্তন প্রদাহ কি সেই ব্যাপারে।

স্তন প্রদাহ কি? 

স্তন প্রদাহ বা স্তনে ব্যথা (Breast pain) বা Mastalgia যেকোনো বয়সী নারীদের মধ্যে প্রকাশ পেতে পারে। বাংলায় এই রোগটিকে পূর্বে ‘ঠুনকো’ নামেও ডাকা হতো। রোগটিতে সাধারণত একটি স্তনে বা দুটি স্তনে একই সাথে হতে পারে। প্রচন্ড ব্যথা থাকতে পারে স্তনে। অনেকে এই স্থান প্রদাহ রোগটিকে স্তনের টিউমার বা স্তন ক্যান্সার এই জাতীয় রোগ ভেবে ধরে নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে থাকেন। কিন্তু স্তনে ব্যথা বা স্তন প্রদাহ এটি নিজে স্বয়ং একটি রোগ। অর্থাৎ স্তন টিউমার বা ক্যান্সারের সহযোগী কোন রোগ এটি নয়। স্তন টিউমার এর ক্ষেত্রে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোন ব্যাথা থাকে না।

স্থানে ব্যথা হওয়ার কারণ কি? 

মেয়েদের স্তন ব্যথা করার কারণ গুলো সম্বন্ধে আমি গুছিয়ে এখানে উল্লেখ করছি। সাধারণত দেখা যায় চারটি প্রধান কারণে স্তনে ব্যথা হয়ে থাকে। 

১) সাইকিলিক্যাল ম্যাস্টালজিয়া(Cyclical)-মাসিকের আগে স্তনে ব্যথা করে থাকে অনেক মেয়েদের। অর্থাৎ এই সকল ব্যথা মাসিক চক্রের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে সমন্বয় থাকে। সাধারণত দেখা যায় মাসিক শুরুর ৫-৭ দিন আগে থেকে অনেক স্ত্রী লোকের স্তনে ব্যথা আরম্ভ হয় এবং এই ব্যাথা ক্রমাগত চলতে চলতে মাসিক শেষের পরেও ৪-৫ দিন পর্যন্ত থাকে। এসব ক্ষেত্রে প্রয়োজনে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। তবে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় এই ধরনের স্তন প্রদাহ Self-limiting pain এর ন্যায় কোন চিকিৎসা বা প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ ব্যতিরেকেই নিজে থেকে আরোগ্য হয়ে যায়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে ৬০ শতাংশ নারী এই সাইকিলিক্যাল ম্যাস্টালজিয়া রোগটিতে ভুগে থাকেন।

২) নন সাইকিলিক্যাল ম্যাস্টালজিয়া(Non Cyclical)– এসব ক্ষেত্রে স্তনের ব্যথা একটি স্তন অথবা উভয় স্তনেই হতে দেখা যায়। কখনো বা স্তনের কোন একটি নির্দিষ্ট অংশে এরূপ ব্যথা হতে পারে। কখনো বা এই ব্যথাটি থাকে না, আবার মাঝে মাঝে ব্যথাটি ফেরত আসে। এই সকল ক্ষেত্রে প্রধান যে কারণটির কথা উল্লেখ করা যায় সেটি হল fibrosistic disease of breast. অনেক সময় স্তনে সিস্ট থাকতে দেখা যায় এবং সেখান থেকেই ব্যথাটার সূচনা হয়। কখনো বা স্তনের বিভিন্ন অংশে পানি জমেও এই প্রকার স্তন প্রদাহ হতে পারে। ব্রেস্টে ইনফেকশন থেকে প্রদাহ হতে পারে। কখনো আঘাত লেগে থাকলে সেটি থেকেও স্তনে প্রদাহ হতে পারে।

হোমিওপ্যাথি বই বাংলা pdf ছবি
হোমিওপ্যাথি বই বাংলা pdf ছবি

যদি দেখা যায় স্তনের এই প্রধাহের সাথে পিরিয়ডের কোন সম্পর্ক নেই সেক্ষেত্রে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী বিভিন্ন প্যাথলজিক্যাল টেস্ট দ্বারা রোগের মূল কারণ জেনে তারপর চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।

৩) প্রেগন্যান্সি রিলেটেড(Pregnancy related)-প্রেগনেন্সির প্রথম দিকে ব্রস্টে পেইন হওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। কেননা এটি একটি স্বাভাবিক ব্যাপার এবং অনেকের ক্ষেত্রেই এটি দেখা যায়। এসব ক্ষেত্রে চিকিৎসা নেওয়ার কোন প্রয়োজন হবে না। সময়ের সাথে সাথে এটি এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে। 

৪) ব্রেস্ট ফিডিং রিলেটেড(Breastfeeding related)– যে সকল মায়েরা তাদের বাচ্চাদের দুধ পান করাচ্ছেন তাদের অনেক সময় স্তন প্রদাহ হতে দেখা যায়। এর কারণ হলো যদি কোন সময়ে বাচ্চা দুধ কম পান করে এবং স্তনে অনেক বেশি দুধ জমে থাকে সেই সময় স্তনে ব্যথা হয় যাকে Breast engorgement বলে। স্তনে জমে থাকা এক্সট্রা দুধ Discard করা না হলে স্তনে ব্যথা হলে সেটি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই। বরং অতিরিক্ত দুধ টি বের করে ফেলতে হবে বিকল্প পদ্ধতিতে। তাহলেই এই সমস্যার সমাধান হবে। অনেক সময় ব্রেস্টে দুধ জমে Breast abscess বা স্তনে ফোড়া হতে পারে। এমনকি কোন প্রকার ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া ঘটিত সংক্রমণ(Infection) থেকেও দুধে ব্যাথা হতে পারে। 

৫) এক্সট্রা ম্যামারি ব্রেস্ট পেইন(Extramammary breast pain)– স্তনের এই সকল রোগ ব্যতীত যদি অন্য কোন কারণে স্তনে ব্যথা হয়ে থাকে তাকে Extramammary breast pain বলে। হার্টের সমস্যা, লাংস ইনফেকশন, এসিডিটি, বোনস ডিজিজ ইত্যাদি ইত্যাদি রোগগুলোও কখনো কখনো স্তন ব্যাথার কারণ হয়ে থাকে। এই ব্যাপারে সচেতন ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে এবং অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে।

৬) ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া(Medicinal side effect)– কখনো কখনো ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াবশত স্তনে ব্যথা হয়ে থাকে। অনেক সময় অন্য কোন জটিল রোগের ক্ষেত্রে ঔষধ সেবন করাকালীন স্তন প্রদাহ হতে পারে। এই বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।

মেয়েদের স্তন ব্যথা করার কারণ হিসেবে উপরের কারণ গুলোকে যথার্থভাবে পর্যালোচনা করতে হবে। এবং পরিস্থিতির গুরুত্ব উপলব্ধি করে যথার্থ ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

মনে রাখতে হবে স্তনে ব্যথা হলেই খুব ভয় পাওয়া যাবে না। অনেকে স্তন ব্যথার সাথে স্তন টিউমার এবং স্তন ক্যান্সারের মিল খুজে থাকেন এবং মানসিকভাবে ভীত হয়ে পড়েন। কিন্তু এই বিষয়ে একটি কথা স্মরণ রাখতে হবে সাধারণত স্তন টিউমার বা স্তন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে ব্যথা খুব বিরল। অর্থাৎ সচরাচর স্তন টিউমার এবং স্তন ক্যান্সারে ব্যথা থাকে না। বিশেষ ক্ষেত্রে অথবা ক্যান্সারের একটি পর্যায়ে গিয়ে তখন স্তনে ব্যথা অনুভব হতে পারে। সচরাচর স্তনে যে ব্যথা দেখা যায় এটি নিয়ে ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই। সঠিক চিকিৎসা হলে এটি সম্পূর্ণভাবে আরোগ্য হয়ে যায়।

স্তন প্রদাহের জটিলতাঃ

যদিও কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্তন প্রদাহের সমস্যাটি খুব বড় ধরনের কোন ক্ষতি ডেকে আনে না তবুও অনেক ক্ষেত্রে তা গুরুতর রোগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে। তবে বিশেষ কিছু ক্ষেত্র ছাড়া সাধারণত স্তন প্রদাহ যে রোগটি তা খুব গুরুতর কোন ক্ষতির কারণ হয় না রোগীর জন্য।

তবে যদি স্তনে ফোড়া থেকে স্তনের প্রদাহ হয়ে থাকে অথবা স্তনের কোন নালীর ক্ষত থেকে বা যে কোন প্রকারের ইনফেকশন থেকে স্তনে প্রদাহ হয়ে থাকে তবে গুরুতর সংক্রমণ যেন রক্তে ছড়িয়ে পড়তে না তাই সেই ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যথাসময়ে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এবং স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাদ্য নিয়মিত গ্রহণ করলে সুস্থতা লাভ করা যায়। স্তন প্রদাহের মূল কারণের উপরেই বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে সচেতন ভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

স্তনে ব্যাথা হলে করণীয়ঃ

এতক্ষণ আমরা আলোচনা করলাম যে ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতি থেকে স্তন প্রদাহ বা স্তনে ব্যথা রোগটি হতে পারে। পরিস্থিতি বিবেচনায় রোগটি আরোগ্যের ক্ষেত্রে সচেতন ও বুদ্ধিদীপ্ত ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। স্তনে ব্যাথা হলে করণীয় সম্বন্ধে এখন আলোচনা করছি।

স্তনে ব্যাথা হলে অনেকেই এই ব্যাপারে যথেষ্ট জানাশোনা না থাকার কারণে প্রথমেই অত্যন্ত ঘাবড়ে যান। অথচ একটু সচেতনতা অবলম্বন করলেই এক্ষেত্রে ঘাবড়ানোর আর কোন কারণ থাকে না। 

প্রথমত খেয়াল করে দেখবেন এই ব্যথাটি মাসিক ঋতুস্রাবের সাথে সম্পর্কিত কিনা। যদি মাসিক ঋতুর সাহেবের সাথে এই বিষয়টি সম্পর্কিত থাকে তবে অপেক্ষা করুন এই রোগটি ভালো হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ না করলেও চলবে। তবে প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করলেও সেটি ভালো।

আর যদি দেখা যায় স্তনের এই প্রদাহ মাসিক ঋতুস্রাবের সাথে সম্পর্কিত নয়। এবং যদি স্থানের বিশেষ কোনো স্থানে এই ব্যথাটা অনুভূত হয়, স্তনের কোথাও লাম্প বা চাকার অস্তিত্ব অনুভব করা যায়, তবে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। এছাড়াও স্তনের বোটা থেকে যদি কোন প্রকার রস বের হয়, স্থানের গোটায় কোনরকম পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়, স্থানের কোন অংশের চামড়ার রঙের পরিবর্তন দেখা গেলে, বগলে ফোলা ভাব থাকলে এবং স্তনের এই ব্যথাটি ক্রমাগত তীব্র হতে থাকলে অবশ্যই অতি দ্রুত একজন চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করবেন।

তবে যে কোন রোগীর ক্ষেত্রেই স্তনে ব্যাথা হলে করণীয় খুব সাধারণ যে ব্যবস্থা সকলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্যো তা হলোঃ

১) সাপোর্টিভ ব্রাঃ ভুল অন্তর্বাস পরিধানের কারণে অনেক সময় স্তনে ব্যথা হতে পারে। অথবা স্তন ব্যাথার রোগী যদি সঠিক অন্তর্বাস পরিধান না করেন সেক্ষেত্রে স্তনের ব্যথা আরো বাড়তে পারে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় নাড়াচাড়া বা চলাফেরায় এই ইসলামের ব্যথা বেড়ে যায়। তাই ফিটিং ব্রা পরিধান করতে হবে যেন স্তনে খুব বেশি নাড়াচাড়া না লাগে। 

২) ঠান্ডা অথবা গরমের উত্তাপ প্রয়োগঃ যে কোন প্রকার প্রদাহের ক্ষেত্রেই দেখা যায় কারো কারো রোগটি ঠান্ডায় উপশম হয় আবার কারো কারো রক্তে গরমে উপাসম হয়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে কোন প্রদাহ উত্তাপে উপশম হয়ে থাকে। তাই স্তনে ব্যাথা হলে করণীয় হল পরিস্থিতি বিবেচনায় হালকা ঠান্ডা বা গরম সেঁক দিয়ে দেখা যে তাতে ব্যাথার উপশম হয় কিনা? যদি তাতে আরাম পাওয়া যায় তবে গরম সেঁক মাঝে মাঝে দিলে সেক্ষেত্রে স্তনের ব্যথা কম হবে। কারো কারো ক্ষেত্রে আইসপ্যাক কাজ করতে পারে ভালো। সেই সকল ক্ষেত্রে তারা আইস কমপ্রেস করতে পারেন।

৩) স্তনে ম্যাসাজঃ ব্যথাযুক্ত স্তনে হালকা মালিশ বা মেসেজ করলে অনেক ক্ষেত্রে বেদনার উপশম হতে পারে। যদি মালিশে বেদনার উপশম হয় তবেই হালকা করে মালিশ করা যাবে। অন্যথায় মালিশ করার প্রয়োজন হবে না।

৪) স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনঃ স্তনে ব্যাথা হলে করণীয় বিষয়ের তালিকায় স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করা অন্যতম। সুষম আহার, নিয়মিত শরীরচর্চা এবং পরিমিত ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন।

৫) চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণঃ একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনে ঔষধ সেবন করুন।

স্তনে ব্যাথা হলে করণীয় বিষয়ের এই তালিকাটি সচেতন ভাবে বিবেচনা করার চেষ্টা করুন। তবে অহেতুক ভীত হবেন না।

স্তন টিউমারের লক্ষণঃ

কখনো কখনো স্তনে টিউমার হয়ে থাকে। এই টিউমার বিনাইন এবং ম্যালিগন্যান্ট এই দুই প্রকারের হয়ে থাকে। বিনাইন জাতীয় টিউমারে সাধারণত কোন ভয় থাকে না। তবে এটি নিশ্চিত হওয়ার জন্য চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে প্যাথলজিক্যাল টেস্টের প্রয়োজন হতে পারে। 

স্তনে টিউমার থাকলে হাতের তিন আঙ্গুল দিয়ে আস্তে করে ওই স্থানে চাপ দিয়ে হাতটি ঘুরিয়ে একটু নাড়াচাড়া করলেই সেটি অনুভব হবে। এছাড়াও যে স্থানে টিউমার হয়েছে সেই স্থানে ফোলা ভাব থাকতে পারে। স্তন টিউমারে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোন ব্যাথা থাকে না। তবে কখনো যদি ব্যথার অস্তিত্ব অনুভব হয় অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

স্তন ক্যান্সারের লক্ষণঃ

স্থান টিউমার থেকে অনেক সময় স্তনে ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। স্তন টিউমার যদি মিলিগন্যান্ট সেল থাকে সেক্ষেত্রে যে লক্ষণগুলো পাওয়া যাবে-

১) স্তনে চাকা বা পিন্ডের মত কোনো বস্তুর উপস্থিতি।

২) আক্রান্ত স্থানে স্তনের চামড়ার রং এর পরিবর্তন। চামড়া কুঁচকে যাওয়া, লালচে রং ধারণ করা বা অন্য যে কোন অস্বাভাবিকতা ইত্যাদি।

৩) স্তনে ক্যান্সার সেলার আক্রমণ করলে স্থানে সাধারন তো পরিবর্তন দেখা যায়। অনেক সময় স্তনটি বড় হয়। 

৪) স্তনের বোটা থেকে অস্বাভাবিক কোন স্রাব বের হওয়া। এবং এই স্রাবে সাধারণত দুর্গন্ধ থাকে।(গর্ভবতী স্ত্রী লোকদের স্তনের বোটা থেকে অনেক সময় তরল জাতীয় কিছু বের হতে পারে যেটা স্বাভাবিক)

৫) স্তনের বোটা কুঁকড়ে ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়া। স্তনের বোটার রং, স্তনের ভোটার আশেপাশের অঞ্চলের চামড়ার রং পরিবর্তন হতে পারে এবং তাতে ব্যথা এবং চুলকানি থাকতে পারে।

৬) বগলের আশেপাশে ব্যথা এবং ফোলা ভাব।

একটি কথা সবসময় মনে রাখবেন স্থানের ক্যান্সার প্রথম দিকে ধরা পড়লে এর খুব সুন্দর চিকিৎসা আছে এবং রোগটি সহজে আরোগ্য হয়ে যায়। কিন্তু এই স্তন ক্যান্সার রোগটি ধরতে দেরি হয়ে গেলে সেক্ষেত্রে রোগটি জটিল পরিস্থিতি ধারণ করে থাকে এবং আরোগ্যের সম্ভাবনা কমে যায় তখন। তাই অবশ্যই এই ব্যাপারে সর্বোচ্চ সচেতন থাকতে হবে।

প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষাঃ 

স্তন প্রদাহ রোগটি কোন অন্য জটিল রোগের উপসর্গ নয় তো? এই ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রায়ই চিকিৎসকগণ প্যাথলজিক্যাল টেস্ট পরামর্শ করে থাকেন রোগীকে। স্থান প্রদাহ রোগীর ক্ষেত্রে, কোন টিউমার থাকলে, অথবা যে কোন পরিস্থিতিতে ক্যান্সার রোগটি নির্ণয়ের জন্য যে সকল প্যাথলজিক্যাল টেস্ট করার প্রয়োজন হয়ঃ

১) শারীরিক পরীক্ষাঃ স্তন প্রদাহ বা স্তন টিউমার বা এই জাতীয় স্তনের যেকোন সমস্যার ক্ষেত্রে চিকিৎসক ক্লিনিক্যালি অবজারভেশন করে দেখেন। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে চিকিৎসক নিজে সরাসরি পরীক্ষা করে থাকেন।

২) চিকিৎসার ইতিহাসঃ রোগ এবং চিকিৎসার ইতিহাস বিষয়ে চিকিৎসক রোগীকে প্রশ্ন করে থাকেন। রোগটি কখন কিভাবে শুরু হল? কি চিকিৎসা পূর্বে করা হয়েছে? কি কি ঔষধ এখন পর্যন্ত সেবন করা হয়েছে? এই জাতীয় নানাবিধ তথ্য রোগীর থেকে জানতে চাওয়া হয়।

৩) আল্ট্রাসনোগ্রামঃ ইউএসজি করে স্তনের অভ্যন্তরের ছবি এনালাইসিস করা হয়। কোন টিউমার, ফোড়া, বা যে কোন প্রকারের অস্বাভাবিকতা থাকলে তা USG রিপোর্টে ধরা পড়ে।

৪) বায়োপসি টেস্টঃ প্রয়োজনে FNAC(Fine needle aspiration cytology) টেস্ট করে দেখা হয় কোন ম্যালিগন্যান্ট সেল এর অস্তিত্ব আছে কিনা।

মূলত এই সকল টেস্টগুলো একেক জন রোগীর ক্ষেত্রে একেক রকম পরিস্থিতি বিবেচনায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়ে থাকে।

স্তন প্রদাহ প্রতিরোধের উপায়ঃ

স্তন প্রদাহ রোগটি নারীদের জীবনের যেকোনো পর্যায়েই হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানো মায়েদের ভেতরে এই যন্ত্রণাদায়ক রোগটি দেখা যায়। কিছু সসচেতনতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করার মাধ্যমে নারীরা এই স্তন প্রদাহ রোগটিকে প্রতিরোধ করতে পারে।

১) স্তন পরিচ্ছন্ন রাখাঃ সব সময় স্তন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা উচিত। বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর আগে এবং পরে প্রয়োজনে স্তন পরিষ্কার জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। তাতে জীবাণুর সংক্রমণ প্রতিরোধ হবে। এবং বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর সময় সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।

২) স্তনের যত্ন নিনঃ খুব আটসাট ধরনের অন্তর্বাস পরিধান না করে বরং মানানসই ব্রা পরিধান করুন। স্তনের অন্য কোন ধরনের রোগব্যাধি থাকলে তার চিকিৎসা করান ।

৩) সময় নিয়ে দুধ খাওয়ানঃ সময় নিয়ে দুধ খাওয়ালে বাচ্চা স্তনের সবটুকু দুধ খেতে পারবে। তার ফলে স্তনে দুধ জমে থাকার সম্ভাবনা কম হবে। কেননা অনেক সময় দুধ জমে থেকে স্তনে প্রদাহ হয়ে থাকে। যদি দুধ জমে স্থানে ব্যথা হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত দুটি চাপ দিয়ে স্তন থেকে বের করে ফেলুন।

৪) পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিনঃ যে সমস্ত স্ত্রী লোকেরা বাচ্চাদের দুধ পান করিয়া থাকেন তাদের যথার্থ পরিমাণ বিশ্রাম গ্রহণ করা উচিত। এবং সেই সাথে সাথে স্তন প্রদাহ রোগটিকে প্রতিরোধ করতে এবং রোগাবস্থায় স্তনে ব্যাথা হলে করণীয় হল পুষ্টিকর খাবার পরিমিত মাত্রায় গ্রহণ করা। কেননা দুধের মাধ্যমে বাচ্চাকে তার মাকেই খাবার সরবরাহ করতে হয়। তাই এই সময়ে মাকে অবশ্যই শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে হবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা গেলে নানাবিধ রোগ ব্যাধি থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব।

মনে রাখতে হবে স্তন প্রদাহ একটি স্বাভাবিক সমস্যা হলেও কখনো কখনো সেটি গুরুতর রোগের ইঙ্গিত হতে পারে। তাই সচেতনতা এবং সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই। প্রয়োজনে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন।

স্তন প্রদাহের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাঃ

স্তন প্রদাহ রোগটির খুব সুন্দর হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা রয়েছে। তাই স্তনে ব্যাথা হলে করণীয় হল রোগটির যথাযথ কারণ নির্ণয় করে সেই অনুযায়ী, লক্ষণ বিবেচনা পূর্বক শক্তিকৃত হোমিওপ্যাথিক ঔষধ সেবনের মাধ্যমে রোগটি সমূলে আরোগ্য হয়। এক্ষেত্রে কনস্টিটিউশনাল ট্রিটমেন্টই যথার্থ চিকিৎসা হিসেবে বিবেচিত হয়। অর্থাৎ রোগীর ধাতুগত লক্ষণ বিবেচনা করে এবং রোগীর সার্বদৈহিক, মানসিক এবং আঙ্গিক লক্ষণ বিবেচনায় নিয়ে ঔষধ নির্বাচন করতে হবে। 

এর সাথে সাথে স্তন প্রদাহের ওপর বিশেষভাবে কাজ করে এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঔষধের উপরেও আমরা নজর রাখবো। যেমন-

ফাইটোলাক্কা, ব্রাইওনিয়া এল্বা, একটিয়া রেসিমোসা, বেলেডোনা, রাসটক্স, আর্নিকা মন্ট, কোনিয়াম, মার্ক সল, ল্যাক ক্যান, নেট্রাম মিউর, থুজা, সালফার ইত্যাদি।

শেষ কথাঃ স্তনে ব্যাথা হলে করণীয় সকল সচেতনতামূলক পদক্ষেপ সম্বন্ধে জানার পাশাপাশি এই রোগ সম্বন্ধীয় আরো নানাবিধ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়েছে এই প্রবন্ধে। নিজে সচেতন থাকা এবং অন্যকে সচেতন রাখতে এই প্রবন্ধটি নিশ্চয়ই সহায়ক হবে বলে বিশ্বাস রাখি। সকল পরিস্থিতিতেই নিজে সর্বোচ্চ সচেতন থাকুন এবং ঔষধ সেবন করতে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।

সতর্কতাঃ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কখনই নিজে নিজে ঔষধ সেবন করবেন না।

আরো পড়ুনঃ হার্ট ব্লক এবং হার্ট এটাক রুখে দিন-ডা. বিমল ছাজেড়। পর্ব-৩

এই লেখাটি আপনার উপকারে এসেছে কি? আরো নতুন লেখা তৈরির জন্য আর্থিকভাবে অবদান রাখতে পারেন। যেকোন পরিমাণ আর্থিক কন্ট্রিবিউশন  করতে নীচের ডোনেট বাটন ব্যাবহার করুন।

[custom_donation]

Previous articleহার্ট ব্লক এবং হার্ট এটাক রুখে দিন-ডা. বিমল ছাজেড়। পর্ব-৩
Next articleরোগসমূহের বিস্তারিত এবং চিকিৎসা-ব্লগ ইনডেক্স
Dr. Dipankar Mondal
হোমিওপ্যাথিক নীতি অনুযায়ী রোগীর সামগ্রীক লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা দ্বারাই জটিল, কঠিন ও দুরারোগ্য রোগের চিকিৎসা করা সম্ভব। জীবনযাপনের ভুল অভ্যাস থেকে সৃষ্ট রোগ, সংযম ব্যতীত শুধুমাত্র ঔষধ সেবনের দ্বারা প্রতিরোধ বা আরোগ্যের আশা করা বাতুলতা মাত্র।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here