কাঁচা হলুদ ও নিম পাতার উপকারিতা

0
247

প্রাথমিক আলোচনাঃ ভেষজ গুনে পরিপূর্ণ, মানুষের জন্য অসম্ভব উপকারী দুটি ভেষজ নিম পাতা (বৈজ্ঞানিক নাম Azadirachta indica) এবং হলুদ(বৈজ্ঞানিক নাম Curcuma longa)। এই দুটি ভেষজের ঔষধি গুণাবলী মানব শরীর ও মনের উপর আশ্চর্য ক্রিয়া করে থাকে। নিয়ম মাফিক আলাদা আলাদা ভাবে এই দুটি ভেষজ সেবন করলে যে ক্রিয়া পাওয়া যায় এই দুটি ভেষজ একসঙ্গে খেলে তার থেকে অনেক বেশি উপকার পাওয়া সম্ভব। নিম এবং কাঁচা হলুদ একসঙ্গে খাওয়ার কথা আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে উল্লেখ আছে। নিম এবং কাঁচা হলুদ একসঙ্গে খেলে আমাদের পরিপাকতন্ত্র পরিষ্কার হয়ে যায় ফলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। এরকম আরো নানাবিধ উপকার আমরা পেয়ে থাকি নিয়ম মাফিক এই ভেষজ দুটি সেবন করার মাধ্যমে।

আজকের ভিডিওতে আমি মূল্যবান এই ভেষজ দুটির বিষয়ে যথাসম্ভব আদ্যোপান্ত আলোচনা করব। যে সকল বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে আজকের ভিডিওতে তা হল- 

নিম পাতার উপকারিতা, খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে কি হয়, নিম পাতার উপকারিতা এলার্জিতে, নিম পাতার ব্যবহার, চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার, কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতা, কাঁচা হলুদ খেলে কি হয়, নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ মুখে দিলে কি হয়, সকালে খালি পেটে কাঁচা হলুদ খেলে কি উপকার হয়, কাঁচা হলুদ মুখে দেওয়ার নিয়ম, ব্রণ দূর করতে কাঁচা হলুদ, কাঁচা হলুদ কখন খাওয়া উচিত, রোগ প্রতিরোধে হলুদের গুনাগুন ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আজকের ভিডিওতে আলোচনা করা হবে।

এছাড়াও আরো আলোচনা করব নিম পাতার উপকারিতা  ও অপকারিতা এবং কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতা এই বিষয়েও। 

নিয়মের ব্যত্যয়, প্রয়োজনের অতিরিক্ত যে কোন কিছুতেই নেতিবাচক ক্রিয়া থাকে। তাই এই দুটি ভেষজ অতীব উপকারী হলেও এদের অধিক ব্যবহারে আমাদের অবশ্যই সচেতন এবং সতর্ক থাকতে হবে। সেই বিষয়েও আমি আলোচনা করব।

নিম পাতার উপকারিতাঃ

নিম পাতার ব্যবহার, নিম পাতার ভেষজ গুণ এবং উপকারিতা সম্বন্ধে সংক্ষেপে নিম্নে আলোচনা করা হলো। 

নিম পাতা
নিম পাতা

ত্বকের সমস্যাঃ খোশ, পাঁচড়া, চুলকানি, দাদ, একজিমা ইত্যাদি নানা ধরনের স্কিন ইরাপশন সহ নানাবিধ ত্বকের সমস্যার ক্ষেত্রে নিমপাতা সেবন করে আমরা উপকার পেতে পারি। নিম পাতার উপকারিতা এলার্জিতে দারুণভাবে দেখা যায়। তবে চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে অবশ্যই সচেতন থাকতে হয়। কেননা যে কোন প্রকার চর্ম পীড়ায় বাহ্য প্রয়োগ বা চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার স্থূল ভাবে করলে তাতে রোগটি চাপা পড়তে পারে। তাই এটি বাহ্য প্রয়োগ না করে অভ্যন্তরীণভাবে সেবন করা যেতে পারে।

দাঁতের সমস্যা দূর হয়ঃ নিয়মিত নিমের পাতার রস সেবনে শরীরের যেমন অভ্যন্তরীণ নানাবিধ উপকার হয় তেমনি দাঁতকেও অনেক রোগ থেকে মুক্ত করে। নিমের ডাল দিয়ে দাঁত মাজলে দাঁতের মাড়ির অনেক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। দাঁতের স্বাস্থ্য সুন্দর হয়। দাঁতের আয়ু দীর্ঘস্থায়ী হয়।

পরিপাকতন্ত্রের শক্তি বৃদ্ধিঃ পরিপাকতন্ত্রে জমে থাকা বিভিন্ন টক্সিক উপাদান কে ডিটক্সিফাই করে আমাদের পেট পরিষ্কার করে থাকে এই দুটি ভেষজের রস। ফলে আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি হয় এবং গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটির মত সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়। হজম শক্তি বৃদ্ধি হয়। খাবারে রুচি আসে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ নিয়মিত নিমের পাতা সেবনে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। জীবনী শক্তি সুস্থ ও সবল হয়। ফলে আমরা ঘন ঘন রোগাক্রান্ত হইনা। 

রক্ত পরিশোধনঃ খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে আমাদের রক্তের বিষাক্ততা দূরীভূত হয়ে রক্ত পরিশোধিত হয়। ফলে আমাদের শরীরের রক্ত পরিষ্কার হয়ে যায় এবং আমরা অনেক রোগব্যাধির হাত থেকে মুক্তি পাই।

চুলের সমস্যা রোধঃ নিয়মিত নিম পাতার রস সেবনে আমাদের শরীরের কোষ গুলো ডিটক্সিফাই হয়ে শক্তিশালী হয়। মাথার ত্বক এবং চুলের কোষ গুলোও শক্তিশালী হয়। ফলে মাথার ত্বকের যে কোন প্রকার সংক্রমণ বা খুশকির আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। নিমপাতা দিয়ে তৈরি তেল নিয়মিত মাথায় লাগালে চুলের স্বাস্থ্য ভালো হয়। চুল পাকা ও চুল উঠে যাওয়া রোধ হয়।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণঃ নিয়মিত নিমপাতার রস সেবনে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। তবে নিয়মিত নিমপাতার রস সেবনের মাঝে অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে বিরতি রাখতে হবে। প্রয়োজনে এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে।

এছাড়াও আরো নানাবিধ শারীরিক উপকারিতা আমরা খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে পেতে পারি। যেমন-

কৃমি থেকে মুক্তি, রক্তে সুগার নিয়ন্ত্রণ, উকুন ধ্বংস, জন্ডিস, বিভিন্ন ভাইরাসজনিত রোগ, বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ, বিভিন্ন ছত্রাক জনিত রোগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে নিমের পাতার সেবন করে আমরা সুফল পেতে পারি।

নিম পাতার অপকারিতাঃ

 মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে অথবা অনিয়ম ভাবে নিম পাতার রস সেবনে নানাবিধ ক্ষতি হতে পারে। যেমন-

এলার্জিজনিত সমস্যাঃ শরীরে এলার্জির সমস্যা থাকলে এবং নিমপাতা সেবনে যদি কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় তবে সেক্ষেত্রে সাবধানতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।

গর্ভবতী এবং দুগ্ধ দানকারী মহিলাঃ গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে এবং যে সকল স্ত্রী লোকেরা বাচ্চাদের দুধ খাওয়াচ্ছেন সেসব ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিম পাতার রস খাবেন না। এতে কখনো কখনো অনিষ্ট হতে পারে। এমনকি অনিয়ম উপায়ে এই সময়ে নিম পাতার রস সেবনে এবরশন পর্যন্ত হতে পারে।

ঔষধের ক্রিয়া নষ্টঃ ভিন্ন গতি-প্রকৃতির ক্রিয়া যুক্ত কোন অন্য ঔষধ সেবন করার সময় নিম পাতার রস সেবন করলে সেই ঔষধের সঙ্গে এই ভেষজটি যদি সংঘাতময় হয় তবে সেক্ষেত্রে এটিকে ব্যবহার না করাই উচিত। এই সকল ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণে করতে হবে।

এছাড়াও গুরুতর প্রকৃতির লিভার রোগ, কিডনি রোগ,  এজাতীয় গুরুতর কোন রোগ পরিস্থিতিতে চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত নিজের পছন্দ অনুসারে নিম পাতার রস সেবন করবেন না।

কতটা পরিমাণে নিম পাতা খাওয়া উচিত? 

খুব বেশি পরিমাণে নিমপাতা সেবনে এবং কোন বিরতি না দিয়ে একটানা অধিক দিন যাবত নিম পাতার রস সেবনে নানাবিধ শারীরিক অসুস্থ দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত পরিমাণে নিম পাতার রস সেবনে পেটের সমস্যা, স্নায়বিক সমস্যা, এমনকি যৌন শক্তি হ্রাস পর্যন্ত হতে পারে। আবার পরিমাণে একেবারে কম খেলেও সেটি যথাযথ ফল না দিতে পারে। তাই অবশ্যই একটি আদর্শ মাত্রা প্রত্যেকেরই তার নিজের পরিস্থিতি অনুযায়ী নির্ধারণ করা উচিত। এবং এই নিমপাতার রহস্যবাদের মাঝে মাঝে বিরতি দিয়ে সেবন করা উচিত। সাধারন হিসেবে বলা যেতে পারে প্রত্যেকদিন সকালে খালি পেটে চারটি নিমপাতার সমপরিমাণ রস বা নিম পাতা গুড়ো অথবা নিমপাতা থেকে তৈরি বড়ি খাওয়া যেতে পারে।

নিম পাতা খাওয়ার উপায়? 

প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিমপাতা খাওয়ার সর্বোত্তম। কেননা সকালবেলা এই সকল ভেষজের কার্যকারিতা বা গুনগুলি আমাদের শরীরে খুব সুন্দরভাবে শোষিত হয়। 

যে উপায়ে নিম পাতা খাওয়া যেতে পারে তা হল: 

নিম পাতার চাঃ প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পাঁচ ছয়টি নিমপাতা সিদ্ধ করে তা দিয়ে চা তৈরি করে খাওয়া যেতে পারে। 

নিম পাতার গুঁড়োঃ নিম পাতা থেকে তৈরি গুঁড়ো জলের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। অথবা চায়ের মতো করে গরম পানির সঙ্গে গুলিয়ে খাওয়া যেতে পারে।

নিম পাতার বড়িঃ নিম পাতা থেকে তৈরি বড়ি, ঔষধ সেবন করার মত জল দিয়ে গিলে খেতে হবে।

নিম পাতার রসঃ নিমপাতা পিষে সেটি থেকে রস তৈরি করে প্রতিদিন সকালবেলা খালি পেটে সামান্য একটু জলের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।

কাঁচা হলুদের উপকারিতাঃ

এখন আমরা কাঁচা হলুদের উপকারিতার বিষয়ে আলোচনা করব। নিয়মিত খালি পেটে কাঁচা হলুদ খাওয়ার উপকারিতা অসীম। হলুদের ভেতর থাকা ভেষজ গুণের ক্রিয়াতে (অ্যান্টি ইনফ্লামেশন, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিসেপটিক ও কার্কুমিন উপাদান আছে কাঁচা হলুদের ভেতর) আমাদের শরীর নানাভাবে সুস্থ থাকে ও শারীরিক শক্তি লাভ হয়। খালি পেটে কাঁচা হলুদের উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করছি। 

প্রদাহ কমানোঃ কাঁচা হলুদের রসে এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান থাকায় এটি যে কোন ক্ষেত্রে প্রদাহ কমায়। ফলে রিউমেটিজম, আর্থ্রাইটিস, সহ নানাবিধ বাতরোগে আক্রান্ত রোগীদের শারীরিক প্রদাহ কমাতে কাঁচা হলুদের রস অত্যান্ত উপকারী।

কাঁচা হলুদ
কাঁচা হলুদ

হার্টের রোগের ঝুঁকি কমায়ঃ হৃদরোগের ক্ষেত্রে নানাবিধ উপকার করে থাকে কাঁচা হলুদের রস। এটি আমাদের হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে এবং হৃদপিন্ডের নানাবিধ রোগ প্রতিরোধ এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়াও এটি আমাদের রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলকে কমিয়ে দেয়।

ক্যান্সার প্রতিরোধঃ কাঁচা হলুদের রসে এন্টি ক্যান্সার গুণাবলী রয়েছে। ফলে এটি ক্যান্সারের প্রতিরোধ এবং বিভিন্ন প্রকার ক্যান্সারের ক্ষেত্রে ক্যান্সারের কোষের বৃদ্ধি কমাতে সাহায্য করে।

মস্তিষ্কের সুস্বাস্থ্য রক্ষাঃ কাঁচা হলুদের রস আমাদের মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য কে ভালো রাখে। আমাদের স্মৃতিশক্তি বাড়ায় হলুদের রস। এছাড়াও আলঝেইমার রোগ থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারে এটি।

হজম শক্তির বৃদ্ধিঃ কাঁচা হলুদের রস আমাদের ডাইজেস্টিভ সিস্টেমের স্বাস্থ্যকে উন্নত করে। এটি এসিডিটি, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে রক্ষা করতে পারে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বৃদ্ধিঃ কাঁচা হলুদের রসে শরীরের সুস্থতার পাশাপাশি জীবনী শক্তির অভূতপূর্ব উন্নতি হয়। জীবনের শক্তির বিরুদ্ধ শক্তির সাথে রোগ প্রতিরোধের শক্তি বেড়ে যায়। ফলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক অংশে বৃদ্ধি পায়।

ব্রণ দূর করতে কাঁচা হলুদঃ হলুদের ভেতর এন্টি ব্যাকটেরিয়াল গুন এবং কার্কিউমিন রয়েছে। এই অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল গুণটি ব্রনের সংক্রমণ কে প্রতিরোধ করে। ব্রণের ক্ষেত্রে যে লালচে ভাব দেখা যায় এবং ব্রণ টি ফুলে বড় হয়ে ওঠা এটিকে প্রতিরোধ করে থাকে কারকিউমিন। এটি ত্বকের ক্ষতকে দ্রুত সারিয়ে দেয় এবং অনেক ক্ষেত্রে ব্রণের দাগ তুলতে সাহায্য করে। তবে ব্রণের সমস্যা খুব বেশি মারাত্মক হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

এছাড়াও কাঁচা হলুদের রসের ক্রিয়া দ্বারা মেয়েদের মাসিকের গন্ডগোল বিষয়ক নানা অসুবিধা হজমের সমস্যা, মাথা ব্যথার সমস্যা, রক্তে সুগারের মাত্রা কম করা ইত্যাদি ক্ষেত্রেও সাহায্য পাওয়া যায়। কাঁচা হলুদের রস সেবনে যকৃতের ক্রিয়া বৃদ্ধি পায় এবং লিভারের নানাবিধ রোগ কে প্রতিরোধ করে যেমন লিভার বড় হয়ে যাওয়া, হেপাটাইটিস, লিভার সিরোসিস এবং গলব্লাডারের রোগ ইত্যাদি।

কাঁচা হলুদের অপকারিতাঃ

কাঁচা হলুদ খেলে কি হয় তা তো আমরা এতক্ষন জানলাম। আসুন এখন জেনে নেই অপরিমিতভাবে ও মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে কাঁচা হলুদের রস সেবনের ক্ষতিকর দিক গুলো কি কি?

কাঁচা হলুদের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা ঠিক নিম পাতার রস খাওয়ার মতই। এলার্জি জনিত সমস্যা গর্ভবতী মহিলা এবং যে সকল মায়েরা সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এই সকল ক্ষেত্রে কাঁচা হলুদের রস সেবনে অবশ্যই সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। প্রয়োজনে

 একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

কাঁচা হলুদ কখন খাওয়া উচিতঃ

সাধারণত সকালবেলায় খালি পেটে কাঁচা হলুদ খেলে সব থেকে অধিক উপকার পাওয়া যায়। সকাল বেলায় আমাদের পাকস্থলী খালি থাকে এবং এই সময় হলুদের কার্যকরী ভেষজ উপাদান গুলো সহজেই শোষণ করে নিতে পারে আমাদের পাকস্থলী।

কতটা পরিমাণে কাঁচা হলুদ খাওয়া উচিত? 

সাধারণত সকালবেলায় খালি পেটে এক টুকরো কাঁচা হলুদ খেলেই যথেষ্ট। অথবা এক চিমটি পরিমাণ কাঁচা হলুদের গুড়া কিছুটা দুধের সঙ্গে মিশিয়ে বা সুবিধা মত অন্য যেকোন ভাবে খাওয়া যেতে পারে। কাঁচা হলুদের রস সামান্য একটু জলের সঙ্গে মিশিয়ে গুলে খেয়ে নেওয়া যেতে পারে।

নিম ও কাঁচা হলুদের বড়ি একসঙ্গে সেবনে উপরে উল্লেখিত সকল স্বাস্থ্যগত সুবিধাই পাওয়া যায়। উপরন্তু এই দুটি ভেষজ এক সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ার ফলে এই স্বাস্থ্য সুবিধাগুলো আমরা অনেক বেশি পরিমাণে পেতে পারি। কেননা এই দুটি ভেষজের একত্রে মিশ্রণ একটি পজিটিভ আবহের তৈরি করে তখন এদের শক্তি আরো বহু গুণে বেড়ে যায়। কেননা এই দুটি ভেষজের মধ্যে সম্পর্ক খুব ভালো এবং অনুপুরক সম্বন্ধে আবদ্ধ এরা। এই দুটি ভেষজ একত্রে মিশিয়ে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে নিয়মিত খেলে অসীম উপকার পাওয়া যেতে পারে আয়ুর্বেদ বলছে। তাই প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিম এবং হলুদের বড়ি গুলি আকারে জলের সাথে অনেকে গিলে খেয়ে থাকেন। অনেক ইয়োগা সেন্টারে দিনের শুরুটা হয় এই নিম-হলুদের বড়ি সেবন করে।

নিম পাতা ও কাঁচা হলুদের রস খাওয়ার বিষয় এখন আমরা বহুল জিজ্ঞাসিত কিছু প্রশ্নের উত্তর সম্বন্ধে জানবো। 

প্রশ্ন ১) নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ মুখে দিলে কি হয়?

নিমপাতা এবং কাঁচা হলুদের রস উভয়ই উপকারী গুণ সমৃদ্ধ ভেষজ। এটি পরিমিত মাত্রায় মুখে লাগালে মুখের ব্রণ, মুখের দাগ, চুলকানি জাতীয় সমস্যার ক্ষেত্রে উপশম্য পাওয়া যেতে পারে। তবে অবশ্যই ভেতর থেকে রোগ আরোগ্য না হলে সেক্ষেত্রে রোগটি পুরোপুরি আরোগ্য নাও হতে পারে। তাই এই সকল ক্ষেত্রে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। রোগীর যে কোনো রোগ লক্ষণে অভ্যন্তরীণ চিকিৎসার উপর জোর দিতে হবে।

প্রশ্ন ২) কাঁচা হলুদ মুখে দেওয়ার নিয়ম কি?

কাঁচা হলুদ মুখে লাগানোর জন্য বেশ কিছু পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে যেমন-

ফেস প্যাকঃ দুধ, দই, মধু ইত্যাদি উপাদানের সঙ্গে কাঁচা হলুদ মিশিয়ে ফেস প্যাক তৈরি করে মুখে লাগানো যেতে পারে।

স্ক্রাবঃ ওটমিল, চালের গুড়া, ময়দা এই সকল এর সাথে কাঁচা হলুদ মিশিয়ে স্ক্রাব করে মুখে লাগানো যেতে পারে।

মাস্কঃ বেসন বা মুলতানি মাটির সঙ্গে কাঁচা হলুদ মিশিয়ে কাঁচা হলুদের মাস্ক তৈরি করে মুখে লাগানো যেতে পারে।

শেষ কথাঃ এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আমরা নিম এবং হলুদের নানাবিধ উপকারী ভেষজ গুনাগুনের বিষয়ে আলোচনা করেছি। তবে একটি বিষয়ে সর্বদা সচেতন থাকতে হবে যে এই দুটি ভেষজ প্রকৃতি থেকে সংগৃহীত বা প্রাকৃতিক হলেও নিয়মিত ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই অভিজ্ঞ কোন চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। এবং গর্ভবতী, স্তন দুগ্ধ সেবন করান এমন নারী, শিশু এবং জটিল রোগগ্রস্ত কোন ব্যক্তিকে নিম এবং হলুদের মিশ্রণ সেবন করানোর ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের নির্দেশনা মেনে চলবেন।

আরো পড়ুনঃ প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার চিকিৎসা পদ্ধতি

এই লেখাটি আপনার উপকারে এসেছে কি? আরো নতুন লেখা তৈরির জন্য আর্থিকভাবে অবদান রাখতে পারেন। যেকোন পরিমাণ আর্থিক কন্ট্রিবিউশন  করতে নীচের ডোনেট বাটন ব্যাবহার করুন।

[custom_donation]

Previous articleবাংলাদেশের সকল হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের তালিকা
Next articleআয়ুর্বেদিক চিকিৎসার মূলতত্ত্ব
Dr. Dipankar Mondal
হোমিওপ্যাথিক নীতি অনুযায়ী রোগীর সামগ্রীক লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা দ্বারাই জটিল, কঠিন ও দুরারোগ্য রোগের চিকিৎসা করা সম্ভব। জীবনযাপনের ভুল অভ্যাস থেকে সৃষ্ট রোগ, সংযম ব্যতীত শুধুমাত্র ঔষধ সেবনের দ্বারা প্রতিরোধ বা আরোগ্যের আশা করা বাতুলতা মাত্র।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here