হার্ট ব্লক এবং হার্ট এটাক রুখে দিন-ডা. বিমল ছাজেড়। পর্ব-৩

0
218

আমার কথাঃ হার্ট অ্যাটাক এবং হার্ট ব্লক রুখে দেওয়ার ব্যাপারে জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করা এবং তাদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন “সাওল হার্ট প্রোগ্রাম” এর প্রতিষ্ঠাতা চিকিৎসক জনাব ডাঃ বিমল ছাজেড়। ওনার কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও লেকচার আছে ইউটিউবে। জনসাধারণের মাঝে এই বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ইউটিউব থেকে হার্টের ব্লকেজ এবং হার্ট অ্যাটাকের ওপর উনার একটি ভিডিও রেকর্ড এর ভাষ্যকে লিখিত আকারে হুবহু এখানে পোস্ট করেছি।

ভিডিওটিতে দেওয়া উনার বক্তব্য কে আমি ৩ টি পার্ট করে ধারাবাহিক ভাবে এই ব্লগে প্রকাশ করব। ধারাবাহিক এই পর্বগুলো পাঠ করার জন্য সকলের প্রতি আমন্ত্রণ রইল। হার্ট এটাক এবং
ভিডিওটিতে দেওয়া উনার বক্তব্য কে আমি ৩ টি পার্ট করে ধারাবাহিক ভাবে এই ব্লগে প্রকাশ করব। ধারাবাহিক এই পর্বগুলো পাঠ করার জন্য সকলের প্রতি আমন্ত্রণ রইল। হার্ট এটাক এবং হার্টের ব্লকেজ কে রুখে দিয়ে আমারা সকলেই যেন বিজয়ী হতে পারি এই লক্ষ্যে আমাদের যাত্রা হোক।

হোমিওপ্যাথি বই বাংলা pdf ছবি
হোমিওপ্যাথি বই বাংলা pdf ছবি

এই লেখাটি থেকে যে সকল বিষয়ে জানা যাবে সংক্ষেপে সেই বিষয়বস্তু গুলো হলঃ
হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ, হার্ট অ্যাটাক, হার্ট অ্যাটাক এর লক্ষণ, হার্ট অ্যাটাক কেন হয়, হার্ট ব্লক হওয়ার লক্ষণ, হার্ট ব্লক দূর করার উপায়, হার্ট ব্লক থেকে বাঁচার উপায়, হার্ট ব্লক রোগীর খাবার, অপারেশন ছাড়া হার্ট ব্লক দূর করার উপায় ইত্যাদ সহ আরো অনেক বিষয়।

পূর্বের অংশঃ হার্ট অ্যাটাক এবং হার্ট ব্লক রুখে দিন-ডা. বিমল ছাজেড়। পর্ব-২

এরপর থেকেঃ
এরপর আর তিনটা আছে যেগুলো হার্টের ব্লকেজটাকে বানাতে রুখে দেয়। 
এই তিনটার কি নাম? 
১) Exercise (এর এর মধ্যে সব থেকে ভালো এক্সারসাইজ হলো Walking বা হাটা) 

২) ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার- এক্সারসাইজ করবে করতে হবে আর তার সাথে ফাইবার খেতে হবে।

ফাইবার যদি খাবেন তাহলে হার্টের অসুখ হবে না।

ফাইবার মানে কি?

এটা কোথায় পাওয়া যায়?

ফাইবার পাওয়া যায় ফলে আর সব্জিতে।

৩) অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট-আর তার সঙ্গে হলো একটি এন্টিঅক্সিডেন্ট বাড়াতে হবে আপনাকে। 
 
এন্টিঅক্সিডেন্ট মানে কি? 
তিনটে জিনিস থাকে ভিটামিন এ, আর ভিটামিন সি, আর ভিটামিন ই। এই তিনটে ভিটামিন যদি আপনি বেশি করে খাবেন তাহলে ব্লকেজ হবে না। 
 
তাহলে মনে রাখবেন, আমাদের এক্সারসাইজ এ আমি চাই ৩৫ মিনিট সবাই হাটুক। আর যদি ৩৫ মিনিট হার্টের পেশেন্টরা প্রতিদিন হাটে, কিছুটা ইয়োগা করে, তার সাথে বেশি করে ফল আর সবজি খায় তাহলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও পাবে। ফাইবারও পাবে। 
 

তাহলে হার্টের অসুখটাকে আমরা রুখতে পারবো।

আর তার সঙ্গে যদি ব্লাড সাপ্লাই এ পুরোটাই বন্ধ করে দিন কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড তাহলে আমাদের সাপ্লাই পুরো বন্ধ বাইরে থেকে। এখন ব্লকেজ আর বাড়বে না। বডির যত কোলেস্টেরল, ফ্যাটের দরকার সেটা ভেতর থেকে টানবে। আর তাহলে ব্লকেজটা ধীরে ধীরে কম হবে। আর কম হাওয়াকে আমরা বলি রিভার্স।

কার্ডিওলজিস্টরা এই ব্যাপারগুলো রোগীকে বোঝায় না। 
তারা কি চায় হার্টের পেসেন্ট থেকে? 
তারা চায় দুইটা জিনিস।
১) বাইপাস সার্জারি 
২) এনজিওপ্লাস্টি(যেটিকে বলা হয় রিং পরানো)। 
 
একটা পা বাঁ হাত থেকে টিউব/শিরা কেটে এখানে বসিয়ে দেয় অপারেশন করে। তার মানে এখন ব্লাড নতুন রাস্তা দিয়ে যাবে। এটি খুব জটিল অপারেশন। কতক মারা যায়। কতক কমপ্লিকেশন এ চলে যায়। আর সবথেকে খারাপ কি জানেন তো, এই অপারেশনের পরে যে নতুন টিউবটা লাগানো হলো এই টিউবটা আর ৪০ বছর যাবে না। এটি খুব কম সময়েই বন্ধ হয়ে যায়। এক বছর থেকে ১০ বছর যায়। এভারেজ পাঁচ বছরের মধ্যে এই টিউবটা আবার ব্লক করে ফেলে। 
 

এখন আপনি আরেকটা অপারেশন করান।

এই ব্লকেজটার মধ্যে ওরা এনজিওপ্লাস্টির সময় একটা তার ঢোকান। এখানে একটা বেলুন রাখা থাকে। এই বেলুনের ভেতর জল ঢুকিয়ে দিলে কি হবে? ব্লকেজটা এখান থেকে বেরিয়ে বাইরের সাইডে চলে যাবে। এখন বেলুনটা থেকে জলটা বের করে তারটা বের করে নিল। আর এটা হল বেলুনিং। এই বেলুনটা বের করে নিলে ব্লকেজটা ফেরত আসবে। তখন ওনারা কি করেন? এই ব্লকেজের ভেতরে একটা রিং বসিয়ে দেন। একটা স্প্রিং এর রিং। ডট পেনের উপরে ভেতরে যেমন রিং থাকে। এটা এখানে সেট করে দেওয়া হয়। প্রবলেমটা আরো একটা বড়, যে রিংটা বসানো হলো, রিং এর ভেতরে আবার ব্লকেজ শুরু হয়ে যায়। যদি আপনি কোলেস্টেরল কন্ট্রোল না করেন, ছয় মাস এক বছরের মধ্যে আবার রিংটা বন্ধ হয়ে যাবে।

এনারা প্রতিবার রিংগুলোকে বদলে দেন ভিন্ন নামে। প্রথমে যা অর্ডিনারি স্টেইন পরে তা মেডিকেটেড স্টেইন। এরপর তা……. ইত্যাদি। এটাও ফেল করবে।

তারমানে আসল ব্লকেজ প্রসেসিং টাকে যদি আপনি না রোখেন তাহলে ব্লকেজ তো বাড়তেই থাকবে। একদিন হার্ট অ্যাটাক হবেই। (অনেকে ১০/১২ বারও রিং বদলায়)

সবচেয়ে খারাপ কি জানেন তো, বাইপাস বা এনজিওপ্লাস্টির পরেও উনারা বোঝান না যে কি করে ব্লকেজ টাকে রোখা যেতে পারে। আমার মনে হয় যদি লাইফস্টাইলই বদলাতে হয়, যদি খাবারই বদলাতে হয়, যদি এক্সারসাইজ করতেই হয়, তাহলে এই রিং পরানোর আগেই করা উচিত।

যারা ছোট ছোট ব্লকেজ নিয়ে আসে তাদের লাইফস্টাইল চেঞ্জ করতে হবে। ও ঔষধ খেতে হবে। আর যারা উপরের দিকে সিরিয়াস ব্লকেজ নিয়ে আসে, মারা যাওয়ার চান্স আছে, তারা আরো দুটো ট্রিটমেন্ট করতে পারে। 
১) ন্যাচারাল বাইপাস(ECG Treatment-নতুন টিউব খুলে নেওয়া যায়) 
২) বায়োকেমিক্যাল এনজিওপ্লাস্ট্রি বা ক্লিনিং ট্রিটমেন্ট– 
 

কিছু ঔষধ এমন দেওয়া হয় যেটা ব্লকেজটাকে কম করে দেয়। এটি ব্লকেজটাকে ৫ % থেকে ১০% উইথড্র করে দেয়।

আর Unfortunately যারা বাইপাস বা এনজিওপ্লাস্টি করে ফেলেছে, তাদেরকে আমরা বলি, এখন আবার শুরু করুন। না হলে আগে গিয়ে হার্ট অ্যাটাক হবে আগে গিয়ে আবার রিং পরাতে হবে। কতবার রিং পরাবেন?

ঔষধঃ ঔষধ দিয়ে আমরা হার্টের পেসেন্টকে আরাম করিয়ে দিতে পারি। নাইট্রেট ঔষধ দিলে টিউবটা চওড়া হয়ে যায়। এক্ষেত্রে ব্লকের তো সেইম থাকলো! ব্লাড যাওয়ার রাস্তাটা ডাবল হয়ে গেল। এই ঔষধ জিভের তলায় স্প্রে করা হয়। এটা প্রতিদিন খেতে থাকলে পেশেন্টের কষ্ট হবে না।

তাহলে ঔষধ, বাইপাস আর এনজিওপ্লাস্টি টি এই তিনটে ট্রিটমেন্ট নিয়ে আজকাল মেডিকেল সিস্টেম চলছে। মেইনলি হাসপাতাল চালায় বাইপাস আর এনজিওপ্লাস্টি।

Mino, major এবং massive হার্ট অ্যাটাক কি? 
 
মাইনর হার্ট অ্যাটাকঃ ছোট ব্লকেজ নিচের দিকে। 
 
মেজর হার্ট অ্যাটাকঃ ব্লকেজ টা উপরের দিকে, রিস্ক বেশি। 
 

ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকঃ পেশেন্ট মারা যাবে, হাসপাতালেও পৌঁছবে না।

মাইনরঃ ছোট ব্লকে নিচের দিকে

মেজরঃ উপরের দিকে রিস্ক বেশি

ম্যাসিভঃ পেশেন্ট মারা যাবে হাসপাতালেও পৌঁছাবে না।

হার্ট অ্যাটাক এবং ব্লকেজ এর উপরে এই পর্বে এই লেখাটিই শেষ আর্টিকেল। 
 
আমার মন্তব্যঃ
হার্ট এটাক ও হার্টের ব্লকেজ রুখে দেওয়ার জন্য প্রতিভাবান চিকিৎসক ডা. বিমল ছাজেড় এর এই উদ্যোগ ও কর্ম প্রচেষ্টা সত্যিই মহত্ব ও প্রশংসার দাবিদার। উনার পরামর্শ গুলো আমরা যদি উপলব্ধি করতে পারি এবং যথাসম্ভব মেনে চলতে পারি তবে আমাদের হার্টের এই সকল রোগই হবেনা আশা রাখা যায়।
সকলের সুস্থ্য, সুন্দর ও সুখী জীবন কামনা করছি। 
Previous articleপাতলা পায়খানার রোগীর খাদ্যের পরামর্শ ও ব্যবস্থাপনা
Next articleস্তনে ব্যাথা হলে করণীয়ঃ স্তন প্রদাহের হোমিও চিকিৎসা
Dr. Dipankar Mondal
হোমিওপ্যাথিক নীতি অনুযায়ী রোগীর সামগ্রীক লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা দ্বারাই জটিল, কঠিন ও দুরারোগ্য রোগের চিকিৎসা করা সম্ভব। জীবনযাপনের ভুল অভ্যাস থেকে সৃষ্ট রোগ, সংযম ব্যতীত শুধুমাত্র ঔষধ সেবনের দ্বারা প্রতিরোধ বা আরোগ্যের আশা করা বাতুলতা মাত্র।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here