সিমেন এনালাইসিস রিপোর্ট কিভাবে পড়তে হয়?

0
9

প্রাথমিক আলোচনাঃ এই প্রবন্ধে আমরা সিমেন এনালাইসিস রিপোর্ট কি? সিমেন এনালাইসিস নরমাল রিপোর্ট, সিমেন টেস্ট কেন করা হয়? ইত্যাদি বিষয়ের উপর বিস্তারিত আলোচনা করতে যাচ্ছি।

সিমেন্ট এনালাইসিস রিপোর্ট বা বীর্য বিশ্লেষণ হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্যাথলজিক্যাল টেস্ট যা পুরুষের প্রজনন স্বাস্থ্যের উর্বরতা মূল্যায়ন করতে ব্যবহৃত হয়। টেস্টটি পুরুষের বীর্যের নমুনায় উপস্থিত শুক্রাণুর গুণমান এবং পরিমাণ সম্পর্কে ধারণা দেয়।

সিমেন এনালাইসিস কি?

সিমেন এনালাইসিস বা বীর্য পরীক্ষা হলো একটি প্যাথলজিক্যাল টেস্ট যার দ্বারা পুরুষের বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা Sperm count( গতিশীলতা), Sperm motility(গতিশীলতা), Morphology(রুপবিদ্যা), Sperm Volume (আয়তন) ইত্যাদি বিষয়ের বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন করা হয়। এই পরীক্ষাটি পুরুষ প্রজনন স্বাস্থ্যের উর্বরতার স্তর এবং সম্ভাব্য সমস্যাগুলি নির্ণয় করতে সাহায্য করে। এবং গর্ভধারণের অসুবিধার সম্মুখীন দম্পতিদের জন্য উপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করে।

সিমেন টেস্ট কেন করা হয়?

পুরুষের প্রজনন স্বাস্থ্য এবং উর্বরতা মূল্যায়ন করার জন্য বীর্য বিশ্লেষণ পরীক্ষা করা দরকার হয়। পরীক্ষাটির দ্বারা বীর্যের গুণমান মূল্যায়নের মাধ্যমে প্রকৃত সমস্যা চিহ্নিত করতে পারা যায় বলে তা উপযুক্ত চিকিৎসা এবং জীবন আচরণের পরিবর্তনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে। পরীক্ষাটি বীর্যে অবস্থিত শুক্রানু এর বিস্তৃত বিশ্লেষণ করে পুরুষের প্রজনন স্বাস্থ্যের ব্যাপারে মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে।

সিমেন এনালাইসিস রিপোর্ট
সিমেন এনালাইসিস রিপোর্ট

সিমেন এনালাইসিস নরমাল রিপোর্টঃ

একটি সিমেন এনালাইসিস রিপোর্ট এর নরমাল প্যারামিটারস গুলো যে রেফারেন্স রেঞ্জের মধ্যে থাকবে তা হল নিম্ন নিয়ে আলোচনা করা হলো।

Sperm count: প্রতি মিলিমিটার বীর্যে 1.5 থেকে 200 মিলিয়ন শুক্রানু (16 million to 200 million sperm per Milliliter) থাকলে সেটিকে স্বাভাবিক হিসেবে ধরা হয়। বীর্যে শুক্রানুর সংখ্যা স্বাভাবিক সীমার নিচে থাকলে (প্রতি মিলিমিটার বীর্যে 1.5 মিলিয়ন শুক্রানুর কম) তাকে Oligospermia বলে। অলিগোস্পার্মিয়া পুরুষ বা বন্ধ্যাত্বের একটি সাধারন কারণ। এটি হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, টেস্টিকুলার সমস্যা, জেনেটিক কারণ, বা জীবনাচরণের ত্রুটি সমূহ যেমন ধূমপান, অত্যাধিক অ্যালকোহল সেবন কিছু ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি এই সকল পরিস্থিতি থেকে তৈরি হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় ইনফেকশন থেকেও অলিগোস্পার্মিয়া হতে পারে।

রোগের অন্তর্নিহিত কারণের উপর দৃষ্টি রেখে, জীবন আচরণের পরিবর্তনের সাথে সাথে রোগ লক্ষণ অনুযায়ী অলিগোস্পার্মিয়া রোগটি চিকিৎসা করতে হবে। রোগ খুব জটিল হলে বিভিন্ন প্রজনন কৌশল(IVF, artificial insemination, surrogacy and fertility medications) ব্যবহারের চেষ্টা করতে হবে। এই বিষয়ে একজন স্বাস্থ্য সেবা পেশাদার বা একজন ফার্টিলিটি স্পেশালিস্ট এর পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

শুক্রানুতে বীর্যের সম্পূর্ণ অনুপস্থিতিকে এজোস্পার্মিয়া(Azoospermia) বলে। এই সকল ক্ষেত্রে সাধারণত সুযোগ থাকলে আইভিএফ(IVF) এর মত রিপ্রোডাকটিভ টেকনিক ব্যবহার করা যেতে পারে। সিমেন এনালাইসিস রিপোর্ট দেখে আমরা তা জানতে পারি।

Sperm motility: এটি দ্বারা চলমান শুক্রাণুর একটি সরলরেখা বরাবর নড়াচড়া বা সাঁতার কাটার সক্ষমতা কে বোঝায়। এটি পুরুষের প্রজনন স্বাস্থ্যের উর্বরতার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ফ্যক্টর। কারণ একটি আদর্শ গতিশীল শুক্রানুর ডিম্বানুর কাছে পৌঁছানো এবং ডিম্বানুকে নিষিক্ত করার একটা ভালো সুযোগ রয়েছে। শুক্রানুর গতিশীলতা হ্রাস পুরুষ বন্ধ্যাত্বের অন্যতম কারণ। Sperm motility এর হার ন্যূনতম 40% হতে হবে। এর কম হলে তা পুরুষ প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

Sperm morphology: স্পার্ম মারফোলজি বলতে শুক্রাণু কোষের আকার এবং আকৃতিকে বোঝায়। পুরুষের প্রজনন স্বাস্থ্যের উর্বরতা মূল্যায়নের জন্য এটির বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্পার্ম মারফোলজিতে শুক্রানুর অঙ্গবিন্যাস যেমন মাথা, লেজ, মধ্যভাগ ইত্যাদি পরীক্ষা করা হয়। আদর্শ আকার ও আকৃতির শুক্রাণু দ্বারা ডিম্বানু নিষিক্ত হওয়ার ক্ষমতা অধিক হয়। পুরুষ প্রজনন স্বাস্থ্যের সুস্থতার জন্য কমপক্ষে 4% শুক্রাণু স্বাভাবিক আকৃতি ও গঠন যুক্ত হতে হবে।

Semen volume: পুরুষের সেক্সচুয়াল ইজাকুলেশন থেকে নির্গত মোট তরলের পরিমাণ হল সিমেন ভলিউম। এই সিমেনের ভেতর Sperm, prostatic fluid Seminal vesicle fluid, fluid from Bulbourethral glands ইত্যাদি থাকে।  এটির স্বাভাবিক পরিমাণ হলো ১.৫ থেকে ৫ মিলিমিটার।

সিমেন-এনালাইসিস-WHO-ক্রাইটেরিয়া-২০২১
সিমেন-এনালাইসিস-WHO-ক্রাইটেরিয়া-২০২১

Viscosity: বীর্যের ঘনত্বের একটা সামঞ্জস্য থাকা উচিত। অতিরিক্ত ঘন বা আঁঠালো বীর্য প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। আবার অতিরিক্ত তরল বীর্য অতিরিক্ত তরল হলে সেটিও প্রজনন স্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

সতর্কতাঃ এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে রেফারেন্স রেঞ্জ এর মান বিভিন্ন পরীক্ষাগারে হিসাবে সামান্য কমবেশি হতে পারে। সিমেন এনালাইসিস নরমাল রিপোর্ট নির্দেশ করে যে শুক্রাণুর পরিমিতি গুলি আদর্শ স্তরে আছে।

এখন আমরা সিমেন এনালাইসিস বিষয়ক আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর সম্বন্ধে জানব।

প্রশ্ন ১) সিমেন ইনফেকশন কি? হোমিওপ্যাথিতে সিমেন ইনফেকশন চিকিৎসা কিভাবে করতে হবে?

উত্তরঃ সিমের ইনফেকশন Sperm culture নামেও পরিচিত। বীর্যে কোন ইনফেকশন আছে কিনা এটা জানার জন্য টেস্টটি করা হয়। বীর্যে কোন সংক্রমণ থাকলে যেমন sexually transmitted infections(STIs), Urinary tract infections (UTIs), Epididymis ইত্যাদি থাকলে তা প্রজনন অঙ্গ কে প্রভাবিত করতে পারে।সিমেন ইনফেকশন এর বিষয়ে উদ্বেগ থাকলে অবশ্যই একজন স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারের সাথে পরামর্শ করা আবশ্যক। এই ধরনের ইনফেকশন প্রতিরোধ ও চিকিৎসার জন্য যথাসম্ভব অন্তর্নিহিত কারণ সনাক্ত করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী যথাসম্ভব যথাযথ চিকিৎসা করতে হবে।

প্রশ্নঃ ২) বাচ্চা হওয়ার জন্য কতটুকু বীর্য লাগে?

উত্তরঃ গর্ভধারণের জন্য প্রয়োজনীয় বীর্যের কোন নির্দিষ্ট পরিমাণ নেই। এমনকি অল্প পরিমাণ বীর্যেও লক্ষ লক্ষ শুক্রাণু থাকে। এবং একটি ডিম্বাণু নিষিক্ত করার জন্য শুধুমাত্র একটি শুক্রাণুর প্রয়োজন হয়। শুক্রানুর পরিমাণ, গুণমান, গতিশীলতা অর্থাৎ শুক্রাণুর সামগ্রিক স্বাস্থ্যই এ ক্ষেত্রে বিবেচ্য।

প্রশ্ন ৩) একজন পুরুষের স্বাভাবিক বীর্যের পরিমাণ কত? 

উত্তরঃ একটি একক বীর্যপাতের স্বাভাবিক পরিসীমা সাধারণত 1.5 থেকে 5 মিলি লিটারের মধ্যে হয়। সিমেন এনালাইসিস করার সময় Sperm count হিসেবে এটির উল্লেখ থাকে। প্রতি মিলিমিটার বীর্যে লক্ষ লক্ষ পরিমাণ শুক্রাণু থাকতে পারে।

প্রশ্ন ৪) বীর্য বা সিমেন বৃদ্ধির উপায় কি? 

উত্তরঃ একজন পুরুষের সিমেন বৃদ্ধির উপায় টি  বহুমুখী বিষয় এবং লাইফস্টাইল এর সাথে যুক্ত। বীর্য বৃদ্ধির জন্য কিছু সাধারণ পরামর্শ হলো 

১) পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।
২) জিঙ্ক, ফোলেট এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাদ্য প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হওয়ায় এ সকল খাবার খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৩) নিয়মিত শরীরচর্চা করলে তা প্রজনন স্বাস্থ্য সহ একজন সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
৪) দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ প্রজনন স্বাস্থ্য কে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। তাই মানসিক চাপ এড়িয়ে চলুন।

প্রশ্ন ৫)  সিমেন এনালাইসিস খরচ কত? 

উত্তরঃ এটি বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে তাদের খরচের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন দাম নিয়ে থাকে। তবে সাধারণত সিমেন টেস্টের জন্য বাংলাদেশের ভেতর ৮০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে করা যাবে।

প্রশ্ন ৬) সিমেন এনালাইসিস কোথা থেকে করাব?

উত্তরঃ অবশ্যই আপনাকে একটি ভালো মানের ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে সিমেন এনালাইসিস রিপোর্ট টি করাতে হবে। কেননা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যদি ভালো মানের মাইক্রোস্কোপিক সুবিধা না থাকে তাহলে সামান্য ভুলের কারণে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। তাই সর্বোচ্চ সচেতন থাকতে হবে।

আরো পড়ুনঃ ধুমপান ছাড়ার উপায়ঃ সর্বোচ্চ ৩ সপ্তাহে ধুমপান ছাড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here