অস্থিক্ষয় এর ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথি
অস্থিক্ষয় এর ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথি
আমাদের শরীরে ছোট-বড় মিলিয়ে ২০৬ খানা হাড় রয়েছে। এই হাড় গুলো দেখতে সলিড মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এগুলো কিন্তু ফাসাফাসা ধরনের। সাধারণত ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত একজন ব্যক্তির হাড়ের গঠন চলতে থাকে। তারপর থেকে অর্থাৎ ৪০ বছরের বয়সের পর থেকে এই হাড় ক্ষয়ের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পায়।
এক্ষেত্রে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে আমাদের অস্থিক্ষয় কিন্তু সারা জীবন ধরে চলতে থাকে। তবে ৪০ বছর বয়সের পূর্ব পর্যন্ত অস্থির গঠনও সাবলীলভাবে হতে থাকে। ফলে একদিকে ক্ষয় এবং অন্যদিকে গঠনের দরুন একটা ভারসাম্য বজায় থাকে। কিন্তু বয়স ৪০ পার হলে তখন হাড়ের এই গঠন প্রক্রিয়া প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। তখন শুধু হাড়ের ক্ষয়টিই চলতে থাকে এবং ক্রমান্বয়ে তা বৃদ্ধি পেতে থাকে।
হাড়ের ক্ষয় জনিত এই যে অবস্থা এটিকে অস্টিওপোরোসিস বলে। Osteoporosis হলে আক্রান্ত স্থানে বেদনা, জ্বালা ইত্যাদি হয়ে থাকে। অনেক সময় আক্রান্ত স্ফীত হতে পারে। চলাচলে অসুবিধা হয়।
Osteoporosis ছবি |
Osteoporosis এর হোমিও চিকিৎসাঃ
সাধারণত হাড়ের ক্ষয় সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয় না বা ক্ষতস্থান সম্পূর্ণরূপে পূর্বাবস্থায় ফেরত আনা যায় না। তবুও ধাতুগত লক্ষণ সাদৃশ্যে হোমিও ঔষধ ব্যবহার দ্বারা অনেক ক্ষেত্রে এই রোগের অনেকাংশে আরোগ্য জনক চিকিৎসা করা সম্ভব। এবং food supplement দ্বারা ক্যালসিয়ামের যোগান নিশ্চিত করা গেলে হাড়ের ক্ষয় বৃদ্ধি পেতে পারে না।
ASAF, MERC, NIT-AC, LYC, SIL, Mez, Ars, Calc, Con, Fl-ac, Ph-ac, Guai, Hep, Phos, Puls, Sep, Staph, Sulph, Ther.
(ইংরেজিতে বড় হাতের অক্ষরে লাল কালিতে লেখা ঔষধগুলো গুলো কেন্ট রেপার্টরীতে first grade medicine. এবং নীল কালিতে লেখা বাকি ঔষধগুলো second grade medicine. এখানে 3rd grade medicine গুলোর উল্লেখ করা হলনা।)
হাড়ের ক্ষয় রোগটি সিফিলিটিক মায়াজম থেকে হয়ে থাকে। তাই এক্ষেত্রে লক্ষণ সাদৃশ্যে antisyphilitic চিকিৎসা করতে হবে। আর food supplement হিসেবে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার রোগীকে খেতে দিতে হবে। ক্যালসিয়াম একটি mineral বা খনিজ উপাদান যেটি আমাদের শরীরের হাড় ও দাঁতের ক্ষয় রোধ করে ও শক্ত করে।
উপরিউল্লিখিত খাবার থেকে আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম পেতে পারি। তবে একটা বিষয় এখানে লক্ষণীয় যে প্রাপ্ত এই ক্যালসিয়াম অন্ত্রে শোষিত হওয়ার জন্য ভিটামিন-ডি এর প্রয়োজন হয়। ভিটামিন-ডি শরীরে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস শোষণ ও সংরক্ষণে সাহায্য করে।
সতর্কতাঃ আমাদের শরীরে প্রয়োজনের তুলনায় অধিক ক্যালসিয়াম গ্রহণ করলে তা কিডনিসহ পিত্তথলি বা মূত্রথলিতে পাথর আকার জমতে পারে বা অনেক ক্ষেত্রে তা পাথর তৈরি করে থাকে। এটি শরীরে আয়রন ও জিংক এর সংশ্লেষে বাধা তৈরি করে কিছুটা। ক্যালসিয়াম বড়ি প্রয়োজনের তুলনায় অধিক বা মাত্রাতিরিক্ত খেলে গ্যাস্ট্রিক ও কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। তাই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত নিজে নিজে কখনোই ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট কিনে খাওয়া যাবেনা। বেশ কিছু ঔষধ বিশেষত গ্যাস্ট্রিক বা এসিডিটি কমানোর ঔষধ অন্ত্রে ক্যালসিয়ামের শোষণ কমিয়ে দেয়। এছাড়াও আরও যে সকল খাবার অন্ত্রে ক্যালসিয়ামের শোষণে বাধা দেয় তাহলে উচ্চমাত্রার চর্বিজাতীয় খাবার ও পানীয়, অক্সালিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার, কার্বনেট যুক্ত পানীয়, পালং শাক ইত্যাদি।
আর অন্ত্রে ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে যে সকল উপাদান তা হল ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি, এবং ভিটামিন-ডি।
ভিটামিন-এ এর প্রাণিজ উৎস হল মাছের যকৃৎ, চর্বিযুক্ত মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদি।
ভিটামিন-সি এর উৎসঃ ভিটামিন-সি তে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ও কাটাছেঁড়া, ঘা, ক্ষত ইত্যাদি আরোগ্য করতে সাহায্য করে। এজন্য শল্যচিকিৎসা বা সার্জারির পরে ভিটামিন-সি খেলে রোগী তাড়াতাড়ি আরোগ্য হয়।
ভিটামিন-ডি এর উৎসঃ সূর্যালোক, ডিমের কুসুম, মাশরুম, নোনা জলের মাছ ইত্যাদি।
একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের ভিটামিন-সি এর প্রয়োজন দৈনিক ৯০ মিলিগ্রাম এবং নারীর প্রয়োজন প্র ৭৫ মিলিগ্রাম। লেবু, কমলা, পেঁপে, পেয়ারা, আনারস, জাম ও আমলকিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আছে। এছাড়া সবুজ পাতা যুক্ত সকল প্রকার সব্জি ও শাঁকে ভিটামিন-সি পাওয়া যায়।
আইটিচহেলথ এর নীতিমালা মেনে তবেই মন্তব্য করার অনুরোধ রইল। প্রত্যেকটি মন্তব্য প্রকাশের পূর্বে যাচাই করা হয়।
comment url