চোখ ওঠা(Opthalmia), চোখে আঞ্জনি, চোখে ফুস্কুড়ি, চোখ থেকে জল পড়া এর হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করব আজকের পোষ্ট এ।
চোখে আঘাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ আর্টিমিশিয়া ভলগ। এমনকি চোখে আঘাত লাগা থেকে যদি কারো চোখ ওঠা বা আঞ্জনি রোগ দেখা দেয় তাহলেও এই ঔষধটি খুব সুন্দর কাজ করে। তবে যতক্ষণ চোখে আঘাতের দাগ স্পষ্ট থাকবে বা আঘাতের যন্ত্রণা বর্তমান থাকবে ততক্ষণ আর্টিমিশিয়া ঔষধটি প্রয়োগ না করে আর্নিকার বিষয়ে বিবেচনা করতে হবে। অনেক সময় চোখে আঘাত লেগে রক্ত জমে যায়। সে ক্ষেত্রে লিডামকেও বিবেচনায় রাখতে হবে। চোখে আঘাতের কারনে অপটিক নার্ভের কোন ক্ষতি হয়েছে এমন সন্দেহ হলে হাইপেরিকাম ঔষধটির প্রয়োজন হবে।

চোখে আঞ্জনি ও ফুস্কুড়ি এর হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা
চোখে আঞ্জনি ও ফুস্কুড়ির হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাঃ
চোখের পাতায় ফুসকুড়ি, আঞ্জনি, চক্ষু তারকায় প্রদাহ, চোখের পাতা ফোলা, চোখের ভেতর লাল হওয়া, চোখ দিয়ে জল পড়া, আলোকাতঙ্ক, চোখে চুলকানি ইত্যাদি লক্ষণগুলি ইউফ্রেসিয়া ঔষধের লক্ষণকে নির্দেশ করে। ইউফ্রেসিয়া চক্ষু উঠা রোগের একটি মহৌষধ। চক্ষু ওঠা রোগের আরেকটি মহৌষধ হল মার্কুরিয়াস সল। চোখের চারপাশে ছোট ছোট ফুস্কুড়ি তে হিপার সালফও খুব সুন্দর কাজ করেন। তবে এদের মধ্যে পার্থক্য হলঃ
১) ইউফ্রেসিয়ার চক্ষু স্রাব ঘন ও গাড়ো।
২) মার্ক সলের স্রাব পাতলা। ঠান্ডায় রোগ যন্ত্রণা উপশম হয়।
৩) হিপার সালফার এ চোখে ঠান্ডা জল অসহ্য।
এই ক্ষেত্রে রাসটক্সও বিবেচনা করা যেতে পারে। তবে রাসটক্স সাধারণত ডান চক্ষুতে অধিক ক্রিয়া করে এবং এর সকল রোগ লক্ষণ উত্তাপে উপশম এটি বিবেচনায় রাখতে হবে। চোখে অতিরিক্ত জ্বালাপোড়া থাকলে এবং যদি তা গরমে উপশম হয় তবে আর্সেনিকের কথা মনে রাখতে হবে। চোখের যে কোন রোগের সঙ্গে চোখ দিয়ে যদি প্রচুর পরিমাণে জল পড়তে থাকে তবে এলিয়াম সিপার কথা ভাবতে হবে। চোখে জ্বালা, ফোলা এবং অস্বস্তির সঙ্গে চোখ দিয়ে জল পড়ার সাথে সাথে এলিয়াম সিপা ঔষধে নাক দিয়েও পাতলা স্রাব নির্গত হয় এবং অনবরত হাঁচি থাকে।
এছাড়াও চোখের আঞ্জনের ওপর গুরুত্বপূর্ণ কিছু হোমিওপ্যাথিক ঔষধ হলো স্ট্যাফিসেগ্রিয়া, পালসেটিলা, কোনিয়াম, থুজা, সাইলিসিয়া, সালফার ইত্যাদি। লক্ষণ বিবেচনা পূর্বক এদের থেকে ঔষধ বাছাই করে প্রয়োগ করতে পারলে অতি দ্রুত চোখের এসকল সমস্যা ভালো হয়।
রাত্রে ঘুমালে চোখে পিঁচুটি জমে চোখ জুড়ে যায়। চোখে কোন ক্ষত থেকে এইরকম হলে সেক্ষেত্রে কেলি বাইক্রমে উপকার হবে। কেলি বাই ক্রমে অনেক সময় চোখের ক্ষতের সাথে কান থেকেও দুর্গন্ধ পুঁজ নির্গত হয়ে থাকে। স্রাব লম্বা আঠার ও সুতার মত এবং চটচটে প্রকৃতির। পিঁচুটিতে চোখ জুড়ে গেলে সেক্ষেত্রে ক্যালকেরিয়া সালফও উপকারী। ক্যালকেরিয়া সালফে পূঁজের পরিমাণ অধিক থাকে কিন্তু যন্ত্রণা কম থাকে। এ ক্ষেত্রে সাইলিসিয়ার কথাও বিবেচনায় রাখতে হবে। চোখের নালি ঘায়ে সাইলিসিয়া এবং ফ্লুওরিক এসিড খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি ঔষধ। আমি নিজে আমার চিকিৎসা জীবনে বেশ কয়েকটি চক্ষুতে নালি ঘা এর উপর এই ঔষধ প্রয়োগে আরোগ্য করতে পেরেছি।
ইউফ্রেসিয়া মাদার টিংচার ব্যবহারের নিয়মঃ
শক্তিকৃত হোমিওপ্যাথিক ঔষধ প্রয়োগের সাথে সাথে ইউফ্রেসিয়া মাদার টিংচারকে ব্যবহারের উপযোগী করে প্রস্তুত করে ড্রপ আকারে চোখে ব্যবহার করলে খুব দ্রুত চোখের রোগ ভালো হয়। এক্ষেত্রে ৩০ মিলি পরিশ্রুত জলের সঙ্গে ১০ ফোটা মাদার টিংচারের মিশ্রণ ঘটিয়ে ড্রপ আকারে ঔষধ প্রয়োগ করা যায়। সচেতন থাকতে হবে এক্ষেত্রে পরিশ্রুত জলের তুলনায় ঔষধের মাত্রা বেশি হলে চোখে জ্বালাপোড়া করতে পারে।
ডাঃ দীপংকর মন্ডল
রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথ
১৭.০৮.২০২৫